—প্রতীকী চিত্র।
একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কাজ করেননি কেউই। সে কথা স্বীকার করছেন দু’জনেই। অথচ ওই প্রকল্পের বকেয়া টাকা প্রাপকদের তালিকায় নাম রয়েছে তৃণমূলের জেলা পরিষদ এক সদস্য এবং তাঁর স্বামীর। নন্দীগ্রামের ওই ঘটনাটি জানাজানি হতেই প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেন বিজেপি নেতৃত্ব।
কেন্দ্রীয় সরকারের বদলে একশো দিনের কাজ প্রকল্পের বকেয়া টাকা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। প্রশাসনিক নির্দেশে ‘জব কার্ড’ হোল্ডারদের তথ্য যাচাই পর্ব মিটেছে। ভেকুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বকেয়া প্রাপকদের ওই তালিকায় রয়েছে নন্দিনী গোল এবং তাঁর স্বামী অরূপ গোলের নাম। নন্দিনী পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের ২৮ নম্বর আসন থেকে তৃণমূলের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন। তাঁর স্বামী এলাকায় গ্রামীণ চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত। দিন কয়েক আগে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বকেয়া প্রাপকদের যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে, তাতে নন্দিনী প্রায় তিন টাকা এবং তার স্বামী সাড়ে তিন হাজার টাকা পাবেন বলে উল্লেখ রয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রামোন্নয়ন দফতরের নিয়ম অনুযায়ী, জব কার্ড রয়েছে এমন যে কোন ব্যক্তি একশো দিনের কাজের প্রকল্পে অংশ নিতে পারবেন। তাঁরা সেই কাজ করার পরে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক হিসাবে মজুরি পাবেন। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, নন্দিনী এবং তাঁর স্বামী অরূপ— দুজনেরই জব কার্ড রয়েছে। তবে তাঁরা কেউই ওই প্রকল্পে কাজ করেননি। আর সে কথা নিজেই মানছেন তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্যা। নন্দিনীর কথায়, ‘‘আমি বা আমার স্বামী দুজনে কেউই কখনও একশো দিনের প্রকল্পে সরাসরি কাজ করিনি।’’
তাহলে কীভাবে বকেয়া প্রাপকদের তালিকায় পরিবারের দু’জনের নাম অন্তর্ভুক্ত হল?
ওই জেলা পরিষদ সদস্যার জবাব, ‘‘বাড়ির কাছে কাণ্ডপসরা এবং গোবিন্দপুর মৌজাতে বছর দুয়েক আগে চারটি বনসৃজন প্রকল্প রূপায়ণ করেছিলেন তৎকালীন তৃণমূল পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ। প্রথমবার চারা গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার ফের লাগানো হয়েছিল। গবাদি পশু তা-ও খেয়ে ফেলে। সে সময় প্রকল্পটা যাতে চালু থাকে এবং দুজনের জব কার্ড যাতে বন্ধ না হয়ে যায়, সে জন্য তৎকালীন উপপ্রধানের কথা মত কিছু চারা গাছ, বাঁশ, জাল এবং সার কিনে দিয়েছিলাম। সেই বাবদ আমি ২,৮০০ টাকা এবং আমার স্বামী সাড়ে তিন হাজার টাকার কাছাকাছি পাওয়ার কথা।’’
কিন্তু প্রকল্পের উপকরণ তো সরকার দেয়। আর জব কার্ডের মেয়াদ না পেরনোর জন্য সামগ্রী কীভাবে কেউ দিতে পারেন? প্রশাসন সূত্রের খবর, যেহেতু ওই দম্পতি বনসৃজন প্রকল্পে উপকরণ সরবরাহ করেছেন বলে জানাচ্ছেন, সে ক্ষেত্রে সরবরাহকারী অথবা ঠিকাদার হিসেবে বকেয়া মেটানো যেতে পারে। কিন্তু তার জন্য সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষকে দরপত্র বা কোটেশন দিতে হয়। এখানে সে সব কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ। যদিও এ ব্যাপারে তৃণমূল পরিচালিত ভেকুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান পবন মাইতির দাবি, ‘‘ওঁরা কীভাবে টাকা পাবেন, তা বলতে পারব না।’’ আর নন্দীগ্রাম-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ বলছেন, ‘‘আগে দেখি প্রাপকদের নামের তালিকায় দলের জেলা পরিষদ সদস্যার নাম রয়েছে কি না! তারপর মন্তব্য করব।’’
বিষয়টি নিয়ে সরব গেরুয়া শিবির। বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পাল বলছেন, ‘‘একশো দিনের কাজের প্রকল্পে ভুরিভুরি দুর্নীতি করেছে শাসকদল। যারা কোনও দিন কাজ করেনি তাঁদের নামে প্রাপকদের তালিকায়। আমরা এ বিষয়ে বিডিওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি।’’ নন্দীগ্রাম-১ এর বিডিও সৌমেন বণিক অবশ্য বলছেন, ‘‘কোন লিখিত অভিযোগ হাতে পাইনি। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy