বিমল মুর্মু। নিজস্ব চিত্র।
বাঁকুড়ার সারেঙ্গায় বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন এক যুবক। আটদিন পরে তাঁর মাটি চাপা বস্তা বন্দি দেহ উদ্ধার হয় লালগড়ের বেনাচাপড়ার জঙ্গলে। তদন্তে পুলিশের দাবি, ত্রিকোণ সম্পর্কের জেরে খুন হয়েছেন সারেঙ্গা থানার শাঁকারিয়া গ্রামের বিমল মুর্মু (২৬)। খুন ও প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে বিমলের প্রেমিকা দুলালি মান্ডি, তাঁর স্বামী সাগেন মান্ডি-সহ পাঁচ জন। বাকি তিন জন সাগেনের বন্ধু। জেলা পুলিশ সুপার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে ওই যুবককে খুন করা হয়। পাঁচ অভিযুক্তই ধরা পড়েছে।’’
৫ মে বেনাচাপড়ার জঙ্গল এলাকায় বৃষ্টিতে মাটি ধুয়ে গিয়ে মাটিতে পোঁতা বস্তাবন্দি একটি মৃতদেহের হাত ও পা দেখা যায়। দেহ উদ্ধার করে লালগড় থানার পুলিশ। স্থানীয় সূত্রে পুলিশ খবর পায়, লাগোয়া সারেঙ্গার এক যুবক গত ২৭ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ। বিমলের দাদা নির্মল মুর্মু পোশাক দেখে দেহটি ভাইয়ের বলে শনাক্ত করেন। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারী কিছু দিয়ে নাগাড়ে আঘাতের ফলে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের কারণে বিমলের মৃত্যু হয়েছিল। মৃতের দাদা অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। বিমলের বন্ধু-বান্ধবদের জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, লালগড়ের রামগড় অঞ্চলের গাডরা গ্রামের দুলালি মান্ডি নামে এক বিবাহিতা তরুণীর সঙ্গে বিমলের যোগাযোগ ছিল। প্রায়ই বিমল রামগড়ে যেতেন।
বিমলের মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে পুলিশ জানতে পারে ২৭ এপ্রিল সারাদিন একটি বিশেষ নম্বর থেকে বার বার বিমলের মোবাইলে ফোন এসেছিল। ওই নম্বরটি দুলালির। মোবাইলের টাওয়ার লোকেশনে দেখা যায় রাতে তিনি রামগড়ে ছিলেন। এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েই লালগড় থানার আইসি অরিন্দম ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে পুলিশ দফায় দফায় দুলালি ও তাঁর স্বামী সাগেনকে জেরা শুরু করে। জেরায় ভেঙে পড়ে মান্ডি-দম্পতি বিমলকে খুনের কথা কবুল করে। ঘটনায় সাগেনের আরও তিন বন্ধু জড়িত বলেও জানা যায়। গত শনিবার, ৮ মে সাগেন ও দুলালিকে গ্রেফতার করা হয়। ৯ মে ধরা পড়ে সাগেনের দুই বন্ধু সুরেন মান্ডি ও সিংরাই মান্ডি। ঝাড়গ্রাম আদালত তদন্তের স্বার্থে সকলকে ৮ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয়। খুনে জড়িত সাগেনের আরেক বন্ধু মার্শাল সরেনও মঙ্গলবার ভোরে পুলিশের জালে ধরা পড়ে। এ দিন আদালত মার্শালকেও ৬ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে।
ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জেনেছে, গত বছর লকডাউনের আগে পর্যন্ত সাগেন রাজ্যের বাইরে ঠিকাদার সংস্থার অধীনে শ্রমিকের কাজ করত। স্বামীর অনুপস্থিতিতে এক বান্ধবীর মাধ্যমে বিমলের সঙ্গে দুলালির আলাপ হয়। ক্রমে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে দুলালি। গত বছর লকডাউনে গ্রামের বাড়িতে সাগেন ফেরার পর সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয়। পুলিশের দাবি, জেরায় সাগেন স্বীকার করেছে, গত ২৭ এপ্রিল রাতে স্ত্রীকে দিয়ে ফোন করিয়ে বিমলকে ডেকে পাঠায় সে। তিন বন্ধুর সাহায্যে বিমলকে পিটিয়ে খুন করে দেহটি বস্তাবন্দি করে বেনাচাপড়ার জঙ্গলে মাটিতে পুঁতে দিয়ে আসে তারা।
পরিবার সূত্রের খবর, ২৭ এপ্রিল শাঁকারিয়া গ্রামে একটি বিয়ে বাড়িতে ছিলেন বিমল। দুলালির ফোন পেয়ে দুই বন্ধুর বাইকে রামগড়ে গিয়েছিলেন তিনি। বিমলকে নামিয়ে অপেক্ষা করছিলেন তাঁর দুই বন্ধু। রাত দেড়টা নাগাদ ফোনে বিমল জানিয়েছিলেন, অপেক্ষা করার দরকার নেই। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের কাছ থেকে খুনে ব্যবহৃত লাঠি, মাটি খোঁড়ার কোদাল, বিমলের মোবাইল উদ্ধার হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy