জখম নেপাল মুর্মু। মেদিনীপুর মেডিক্যালে। নিজস্ব চিত্র
প্রকাশ্য রাস্তায় এক যুবককে ভোজালির কোপ মেরে খুনের চেষ্টা হল। তৃণমূলের দাবি, জখম যুবক তাদের দলের সক্রিয় কর্মী। ঘটনার পিছনে রয়েছে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। বিজেপির দাবি, ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকেই এই ঘটনা। একই দাবি কোতোয়ালি থানারও। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে মেদিনীপুর শহরের গোলকুয়াচকের কাছে। ঘটনাস্থলের কিছু দূরেই থানা। রাতের শহরের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্নও তুলে দিয়েছে এই ঘটনা।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় জড়িত একজনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। মূল অভিযুক্ত-সহ আরও দু’জনের খোঁজ চলছে। মূল অভিযুক্তের নাম অপু পাঁচালি। তৃণমূলের দাবি, অপু বিজেপির কর্মী। বিজেপি অবশ্য তা মানেনি। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনায় অপুদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৭ (খুনের চেষ্টা) ও ৩২৬ (মারাত্মকভাবে আঘাত করা) নম্বর ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘তদন্তে সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে পুরনো শত্রুতা থেকেই এই ঘটনা।’’ ঘটনায় তো শহরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে? জেলা পুলিশের ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘পুলিশি নজরদারি থাকেই। তা আরও বাড়ানো হচ্ছে।’’ স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, আইসি যে আবাসনে থাকেন, ঘটনাস্থল তার খুব কাছেই। তা-ও জখম যুবক কিছুক্ষণ রাস্তায় পড়েছিলেন। পরে পুলিশ আসে।
পুলিশ সূত্রে খবর, জখম যুবকের নাম নেপাল মুর্মু। বাড়ি মেদিনীপুর সদর ব্লকের কোলসাণ্ডায়। ভোজালির কোপ লেগেছে নেপালের পিঠের নীচের দিকে। তাঁর কথায়, ‘‘অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছি।’’ কে কোপাল? হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে জখম যুবকের নালিশ, ‘‘অপুই কুপিয়েছে।’’ কেন? নেপালের জবাব, ‘‘ও আমার শত্রু। আমাকে মারতে চেয়েছিল।’’ তৃণমূলের স্থানীয় ব্লক সভাপতি মুকুল সামন্ত বলেন, ‘‘নেপাল আমাদের দলের সক্রিয় কর্মী। ও তখন গোলকুয়াচকের কাছে ছিল। ওখানেই বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ওকে কুপিয়েছে।’’ এখনও মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার না- হওয়ায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল। বিজেপির স্থানীয় মণ্ডল সভাপতি অনিমেষ রায় বলেন, ‘‘আমাদের দলের কেউ ওই ঘটনায় জড়িত নয়। আমি যতটুকু জেনেছি, ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্কও নেই।’’ তিনি জুড়ছেন, ‘‘অবশ্য এই ঘটনায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকতে পারে!’’
পুলিশ সূত্রে খবর, রাতে এক সময়ে হাসপাতালের ওয়ার্ড থেকে ‘নিখোঁজ’ হয়ে গিয়েছিলেন নেপাল। বিষয়টি কোতোয়ালি থানার আইসি পার্থসারথি পালকে জানিয়েছিলেন হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা এএসআই তাপস মাঝি। ঘুম ছোটে পুলিশের! পরে অবশ্য হাসপাতাল চত্বর থেকেই তাঁকে পাওয়া যায়। তাপস মানছেন, ‘‘কিছুক্ষণ নেপালের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।’’ পুলিশের কাছে জখম যুবকের দাবি, তিনি শৌচাগারে গিয়েছিলেন!
শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সরব হয়েছে বিজেপি। বিজেপির জেলা সহ- সভাপতি অরূপ দাস বলেন, ‘‘কোতোয়ালি থানার নিষ্ক্রিয়তায় মেদিনীপুরে দুষ্কৃতীদের দাপট বেড়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার রাতের ঘটনা দেখিয়ে দিল, ইতিউতি উর্দিধারীরা পথে থাকলেও দুষ্কৃতীরা ভয় পাচ্ছে না।’’ অরূপ জুড়ছেন, ‘‘রাতের শহরের নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশকে যে আরও ভাবতে হবে, এই ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।’’ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে বচসা থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। দু’পক্ষের মধ্যে টাকাপয়সা নিয়ে বিবাদ থাকতে পারে।’’ এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি দুষ্কৃতীদের ব্যবহৃত ভোজালি। পুলিশ মনে করছে, মূল অভিযুক্তের কাছে ওই ভোজালি থেকে থাকতে পারে। মূল অভিযুক্তের খোঁজে বুধবার মেদিনীপুর সদর ব্লকের একাধিক এলাকায় হানা দিয়েছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy