কোলাঘাটের বাজারে খোকা ইলিশ।
রূপনারায়ণের ইলিশের স্বাদ খাদ্য রসিকদের কাছে জনপ্রিয়। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে বর্ষাকালে রূপনারায়ণে সেভাবে দেখা মিলছে না এই রুপোলি শস্যের। তাই বর্ষায় ইলিশের জোগান বজায় রাখতে ছোট ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সরকার। অথচ নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে কোলাঘাট এলাকায় রূপনারায়ণে ছোট ফাঁসের জালে সম্প্রতি দেদার ধরা হচ্ছে ছোট ইলিশ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, দিন ১৫ ধরে কোলাঘাট এলাকায় রূপনারায়ণে মৎস্যজীবীদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর ইলিশ। কোলাঘাট বাজারেও গড়ে ৩০ থেকে ৪০ কিলোগ্রাম করে ইলিশ মাছ আসছে। মাছগুলি মেরেকেটে ৪০০ গ্রাম ওজনের। কোনও কোনওটি ৭০০-৮০০ গ্রামের। কম ওজনের ওই ইলিশগুলি কোলাঘাটের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৭০০ টাকা কিলোগ্রাম দরে। একটু বড় আকৃতির মাছগুলি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকা কিলো দরে।
মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, তাঁদের একাংশ ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহার করে রূপনারায়ণে ওই ইলিশ ধরছেন। ছোট ফাঁসের জাল হওয়ায় খোকা ইলিশ ধরা পড়ছে। কোলাঘাটের বাসিন্দা দেবদুলাল মান্না বলেন, ‘‘কয়েকদিন হল কোলাঘাট বাজারে প্রচুর ছোট আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় মৎস্যজীবীরাই সেগুলি ধরছেন। এখন এত ছোট ইলিশ ধরা হলে বর্ষায় বড় ইলিশ আদৌ পাওয়া যাবে কি না সন্দেহের।’’
মৎস্য পুরাণ
নিষেধাজ্ঞা: ৯০ মিলিমিটারের কম ফাঁসযুক্ত জাল ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। ৯ ইঞ্চি বা ২৩ সেন্টিমিটার আকৃতির ইলিশ বিক্রি ও কেনা দু'টিই অপরাধ
বাস্তব চিত্র: প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ কিলোগ্রাম ইলিশ ধরা পড়ছে কোলাঘাটে
• ছোট ইলিশ গড়ে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে
প্রশাসনিক পদক্ষেপ: ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহার বন্ধে প্রচার চালানো হবে
• আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা
বর্ষায় ইলিশ পাওয়া যায়, এটা স্বাভিক। কিন্তু এই শীতে রূপনারায়ণে ইলিশ আসছে কীভাবে?
কোলাঘাট ব্লকের মৎস্য দফতরের আধিকারিক তুহিনশুভ্র শতপথি বলেন, ‘‘ইলিশের প্রিয় খাবার হল রটিফার নামে এক ধরনের জু-প্ল্যাঙ্কটন, যা রূপনারায়ণে প্রচুর রয়েছে। বর্ষায় প্রজনন শেষ করে বড় ইলিশগুলি ঝাঁক নিয়ে সমুদ্রে ফিরে যাওয়ার কথা। কিন্তু রটিফারের লোভে বর্ষায় ডিম থেকে বার হওয়া ছোট্ট ইলিশের একটা অংশ রয়ে যায় নদীতেই। সেগুলি এখন ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনের হয়েছে। তা মৎস্যজীবীদের জালে ধরা পড়ছে।’’
এর আরও একটি কারণ জানিয়েছেন মৎস্য অধিকর্তা। তিনি বলেন, ‘‘মূলত প্রজননের সময় ইলিশের ঝাঁক সমুদ্রের নোনা জল ছেড়ে নদীতে উঠে আসে। ইলিশের প্রথম প্রজননটি হয় সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে। কিন্তু জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চ পর্যন্ত ইলিশের আরেকটি প্রজনন হয়। এই সময়ও সমুদ্র ছেড়ে ইলিশের ঝাঁক নদীতে আসে। তবে তা বর্ষার মত বেশি সংখ্যায় নয়। আর জলবায়ুর পরিবর্তনে ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও এখন প্রজননে সক্ষম।’’
খোকা ইলিশগুলির তেমন ভাল স্বাদ নয় বলেও জানাচ্ছেন মৎস্যপ্রেমীরা। এ ব্যাপারে তুহিন বলেন, ‘‘বর্ষায় সমুদ্রের ঢেউ ভাঙতে ভাঙতে ইলিশের ঝাঁক নদীতে আসে। ঢেউ ভেঙে আসার সময় পরিশ্রমের দরুণ ইলিশের শরীরের মায়াটম পেশি থেকে এক ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড নিঃসৃত হয়। তার ফলে মাছের স্বাদ ভাল হয়। এখন যেহেতু মাছগুলি নদীতেই রয়েছে, তাই বর্ষার মোত স্বাদ হয় না।’’
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ অভিযোগ করেছেন, প্রকাশ্যে ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে মাছ ধরা হলেও, তা বন্ধ করতে কোনও প্রশাসনিক নজরদারি নেই। এ বিষয়ে তুহিনের বক্তব্য, ‘‘ছোট ফাঁসের জাল ব্যবহারের ব্যাপারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এ নিয়ে আমরা প্রচার চালিয়েছি। কিন্তু এখন যে অভিযোগ উঠছে, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে আমরা কোলাঘাট এলাকায় ফের প্রচার চালাব। তারপরও কেউ আইন ভাঙলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy