সিপিএমের প্রার্থীকে নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া পুলিশের। দাসপুর বিডিওর সামনে। —নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের অস্বস্তি কাটালেন মাধবী বিশ্বাস। মঙ্গলবার নিজের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিলেন ঝাড়গ্রাম জেলা পরিষদের বিদায়ী সভাধিপতি। এবার তিনি দলের টিকিট পাননি। দাসপুরে আবার দেখা গেল, মনোনয়ন প্রত্যাহারে আসা মহিলা সিপিএম প্রার্থীকে টানাহ্যাঁচড়া করছে পুলিশ।
ঝাড়গ্রাম ১৯টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের হয়ে লড়তে চেয়ে মনোনয়ন জমা পড়েছিল ৩১টি। শেষ পর্যন্ত দু’জন বাদে বাকি সব গোঁজ প্রার্থীই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। রয়ে গিয়েছেন বিদায়ী কর্মাধ্যক্ষ মামনি মুর্মু ও সুজলা তরাই। মঙ্গলবার দুপুরে মাধবী বলেন, ‘‘প্রার্থী তালিকা ঘোষণা না হওয়ায় মনোনয়ন জমা দিয়েছিলাম। যখন জানতে পারলাম দল প্রার্থী ঠিক করে নিয়েছে তখন মনোনয়ন প্রত্যাহার করলাম। কেউ দলের ঊর্ব্ধে নয়।’’ জেলা পরিষদের বিদায়ী কর্মাধ্যক্ষ তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুপ্রিয়া মাহাতো, ঝাড়গ্রাম ব্লকের সাপধরা অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি দীননাথ সিং, চুবকা পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান উদয়শঙ্কর সেনও মনোনয়ন প্রত্যাহার তোলেন।
তৃণমূলের এসটি এসসি সেলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি অর্জুন হাঁসদাকে নিয়ে টানাপড়েন চলে। দলের টিকিট পাচ্ছে না জানতে পেরে শেষ পর্যন্ত তিনিও মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘মান অভিমানে দলের অনেকেই মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। তবে উন্নয়নকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁদের অধিকাংশই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। দল তাঁদের অন্য জায়গায় কাজে লাগাবে।’’ সেই সঙ্গে তাঁর বার্তা, ‘‘জেলা পরিষদে যে দু’জন মনোনয়ন তুললেন না, তাঁদের জন্য দলের দরজা ও জানালা সব বন্ধ।’’
মঙ্গলবার দুপুরে উত্তেজনা তৈরি হয় দাসপুর ১ বিডিও চত্বরে। ওই ব্লকের নাড়াজোল গ্রাম পঞ্চায়েতের বুড়ুলি বুথের সিপিএম প্রার্থী সুষমা সাউ এদিন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বিডিওতে এসেছিলেন। সিপিএমের কর্মী-সমর্থকরা অভিযোগ করেন, তাঁকে জোর করে আনা হয়েছে। সুষমাকে সরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টাও করা হয়। পুলিশ গেলে শুরু হয় বচসা। শেষ পর্যন্ত ওই প্রার্থী সময়ের অভাবে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে পারেননি। সমাজ মাধ্যমে ছড়িয়ে যাওয়া একটি ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, তাঁকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন সিপিএম কর্মীরা। পুলিশ বাধা দিচ্ছে। মহিলা পুলিশ নেই। ওই মহিলার সম্মানহানির মতো পরিস্থিতি হয়। পুলিশের এই অতি সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সিপিএম। দাসপুরে পথ অবরোধও করে তারা। সন্ধ্যায় দাসপুর থানায় আসেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খড়্গপুর) রানা মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘দাসপুরের ওই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির আসনে ব্লক তৃণমূল সভাপতি দিলীপ মাজির বিরুদ্ধে মনোনয়ন জমা দেওয়া মহিলা নেত্রী কাকলি চক্রবর্তীও এদিন মনোনয়ন তুলেছেন। তৃণমূল সূত্রে খবর, সোমবার রাতে ঘাটাল মহকুমার বিভিন্ন পঞ্চায়েত স্তরের নেতাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়। চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের ৬টি পঞ্চায়েতের মধ্যে মাংরুল, জাড়া, মণিককুণ্ডু, লক্ষ্মীপুর, চন্দ্রকোনা-২ ব্লকে ভগবন্তপুর-২, কুঁয়াপুর, বসনছড়া, বান্দিপুর ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের গোঁজ ছিল বেশি। এদিন বেশিরভাগ আসন থেকেই সেই গোঁজ প্রার্থীরা মনোনয়ন তুলেছেন। মাংরুল ও ভগবন্তপুর-২ পঞ্চায়েতে অবশ্য তৃণমূলের কিছু গোঁজ রয়ে গিয়েছে।
এদিন গড়বেতা ২ (গোয়ালতোড়) ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির দুই আসনে তৃণমূল নেতা প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ও প্রশান্ত মাল মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। ওই দুই আসনে তৃণমূলের টিকিট পাচ্ছেন দীনবন্ধু দে ও অজয় মাহাতো। গড়বেতা ১ ব্লকের বড়মুড়া অঞ্চলে সমিতির একটি আসনে বিজেপির হয়ে পরিমল পাল ও সোমনাথ আঢ্য মনোনয়ন দেন। সোমনাথ এদিন মনোনয়ন তুলে নেন। ওই ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে বিজেপির ৭ জন মনোনয়ন তোলেন। জেলা বিজেপির সহ সভাপতি শঙ্করকুমার গুছাইতের অভিযোগ, "তৃণমূল ও পুলিশের চাপে ৭ জন মনোনয়ন তুলেছেন।" জানা গিয়েছে, মেদিনীপুর সদরে ৫৪টি, কেশপুরে একশোটির বেশি ও শালবনিতেও কয়েকটি মনোনয়ন প্রত্যাহার হয়েছে। সোমবারই পশ্চিম মেদিনীপুরে সবমিলিয়ে ২৬৮টি মনোনয়ন প্রত্যাহার হয়েছিল বলে কমিশন সূত্রে খবর। মেদিনীপুর সদরে যে ৫৪টি মনোনয়ন প্রত্যাহার হয়েছে, তারমধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩৯টি, পঞ্চায়েত সমিতির ১৫টি। ওই ৫৪টির মধ্যে বিজেপিরই ১৯টি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy