ফাইল চিত্র।
তৃণমূল ছেড়ে তাঁরা বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন মেদিনীপুরের শাহি-মঞ্চে। প্রায় সকলেই শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী বলে পরিচিত ছিলেন। তাঁদের একাংশই এখন ফের তৃণমূলে ফিরতে ইচ্ছুক। পুরনো দলের জেলা নেতৃত্বকে তাঁরা নিজেদের ইচ্ছের কথাও জানিয়েছেন। অপেক্ষা শুধু তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের সম্মতির।
মুকুল রায় বিজেপি ছেড়ে আসার পরে খোদ তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, মুকুল-অনুগামীরাও এ বার ফিরবেন। শুভেন্দু ফেরার কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে তাঁর অনুগামীরা ফের শিবির বদলের তোড়জোড় শুরু করেছেন। তৃণমূলের এক সূত্রের মতে, শীঘ্রই এই সম্মতি মিলতে পারে। পশ্চিম মেদিনীপুরে শুভেন্দু অনুগামী যাঁরা ফিরতে পারেন, সেই তালিকায় প্রথমেই নাম রয়েছে দুলাল মণ্ডল, কাবেরী চট্টোপাধ্যায়দের। দুলাল তৃণমূলের কিষান ও খেতমজুর সংগঠনের জেলা সভাপতি ছিলেন। কাবেরী জেলা পরিষদের উপাধ্যক্ষ। তাঁরা যে তৃণমূলে ফিরতে ইচ্ছুক, সে কথা মানছেন দুলালরাও। দুলাল বলেন, ‘‘আমি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু ওই টুকুই! আর একদিনও বিজেপি করিনি! এখনও মনেপ্রাণে তৃণমূলেই আছি!’’ কাবেরীর আবার বক্তব্য, ‘‘আমি তৃণমূলই তো করি! উত্তরার (গড়বেতার বিধায়ক উত্তরা সিংহ) প্রচারেও গিয়েছিলাম।’’ সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে মুকুল রায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে কাবেরীর। জেলা তৃণমূলের প্রথম সারির প্রায় সব নেতার সঙ্গেই তাঁর কথা হয়েছে। কাবেরী মানছেনও, ‘‘মুকুলদাকে ফোন করেছিলাম। কথা হয়েছে।’’ তিনি জুড়ছেন, ‘‘মেদিনীপুরে গেলে আমি তো জেলা পরিষদেও যাই। দলের সবার সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে।’’
‘দাদা’র অনুগামী বলে পরিচিতদের তৃণমূলে যোগদান-পর্ব কবে শুরু হবে? তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির জবাব, ‘‘কাউকে দলে ফেরাতে গেলে রাজ্য নেতৃত্বের অনুমতি প্রয়োজন। রাজ্য নেতৃত্ব অনুমতি দিলে জেলায় পদক্ষেপ করা হবে।’’ সঙ্গে অজিতের খোঁচা, ‘‘বিজেপির শেষের শুরু হয়ে গিয়েছে!’’ ‘সম্ভাব্য’ দলবদলকে অবশ্য গুরুত্ব দিতে চাইছে না বিজেপি। দলের রাজ্য সম্পাদক তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দু’-একজন দল ছেড়ে যেতে পারেন। তাতে দলের কোনও ক্ষতি হবে না।’’ দলের এক জেলা নেতার কথায়, ‘‘বিজেপিতে যাঁরা দোদুল্যমান, তৃণমূল থেকে এসেছিলেন কিছু পাওয়ার আশায়, তাঁরা যেতে চাইলে স্বচ্ছন্দ্যে চলে যেতে পারেন। কারণ, দলে থেকে অন্তর্ঘাত বরদাস্ত করা হবে না।’’
বিধানসভা ভোটের মাস তিনেক আগে, গত ডিসেম্বরে মেদিনীপুরে জনসভা করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই মঞ্চে বিজেপিতে যোগদান করেছিলেন শুভেন্দু। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন শুভেন্দুর অনুগামী বলে পরিচিত অনেকেও। সেই দলে পশ্চিম মেদিনীপুরের যে সব তৃণমূল নেতা ছিলেন, তাঁদের অন্যতম প্রণব বসু, অমূল্য মাইতি, রমাপ্রসাদ গিরি, তপন দত্ত, দুলাল মণ্ডল, কাবেরী চট্টোপাধ্যায়, আকাশদীপ সিংহ, স্নেহাশিস ভৌমিক প্রমুখ। অমূল্য, রমাপ্রসাদ জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন। তপন জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ, আকাশদীপ গড়বেতা-৩ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিলেন। অন্য দিকে, প্রণব মেদিনীপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান। এঁদের মধ্যে দু’জনের টিকিটও জুটেছিল। সবংয়ে প্রার্থী হয়েছিলেন অমূল্য। নারায়ণগড়ে প্রার্থী হন রমাপ্রসাদ। ‘দলবদলু’ নেতাদের সিংহভাগ কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা পেয়েছিলেন। দুলাল কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নেননি। দুলালের কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা আমি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।’’ শোনা যাচ্ছে, ভোটের ফল বেরোনোর পর আরও এক নেতা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ফিরিয়ে দিয়েছেন। আর এক নেতা ‘ফেরাব- ফেরাব’ করছেন। তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর কথাবার্তা চলছে।
কেউ কেউ অবশ্য এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি। যেমন তপন দত্ত। তপন বলেন, ‘‘উপেক্ষিত হয়েই তৃণমূল ছেড়েছিলাম। অসম্মানিত হয়ে কোথাও থাকতে পারব না। এই মুহূর্তে কিছু ভাবছি না। তৃণমূলের কেউ আমার সঙ্গে যোগাযোগও করেননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy