পড়ে রয়েছে কাটা গাছের অংশ। —নিজস্ব চিত্র।
বিশাল বিশাল গাছ বাগানে। প্রাচীন গাছগুলো বাদুড়, শামুকখোল-সহ পরিযায়ী পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় ছিল। পৈতৃক সম্পত্তির ভাগ পেয়ে গাছগুলো কেটে ফেলছেন এক শিক্ষক। তাতে নীড়হারা হয়েছে বহু পাখি। ওই শিক্ষকের দাদা জেলার পরিচিত পরিবেশকর্মী। ভাইয়ের এই পরিবেশ ধ্বংসের কাজে তিনি বেদনাহত। পরিবেশকর্মীর বাড়ির এই ঘটনায় বিস্মিত অন্য পরিবেশকর্মীরাও। যদিও শিক্ষক জানাচ্ছেন, মরা গাছগুলোই শুধু কেটে ফেলছেন তিনি। নতুন করে গাছ লাগিয়ে দেবেন।
পটাশপুরের অমরপুর গ্রামের বাসিন্দা রাধানাথ দাস অধিকারী ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। একসময়ে বিধায়কও হয়েছিলেন। তাঁর প্রায় ২০ একর জায়গা জুড়ে পাহাড়ি এলাকার গাছ-সহ আম, জাম, বকুল, অর্জুনের ঘন জঙ্গল। রাধানাথের মতো পরিবেশ ভালবাসেন বড় ছেলে সোমনাথ দাস অধিকারী। মেজো ও ছোট ছেলে চাষবাস, শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। পৈতৃক জমিতে বন্যপ্রাণ রক্ষার কর্মকাণ্ডে সোমনাথ এলাকায় পরিচিত নাম। এগরা মহকুমা ছাড়াও পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে উদ্ধার হওয়া প্রাণী অধিকারী বাড়িতে নিয়ে আসেন লোকজন। আহত প্রাণীদের প্রাথমিক চিকিৎসা করে পারিবারিক জঙ্গলে ছেড়ে দিতেন সোমনাথ। এই বাগানে মেছো বিড়াল, কচ্ছপ, গন্ধগোকুলের নিরাপদ আস্তানা। জঙ্গলের বড় বড় গাছে বহু বাদুড়, শামুকখোল ও টিয়াপাখির আশ্রয়স্থল। আসে পরিযায়ী পাখিরাও। মাস দুয়েক আগে সোমনাথ দাসের পর্যবেক্ষণে উদ্ধার হওয়া কেউটের ৪০টি ডিম ফুটে বাচ্চা হয়েছিল। সাপের বাচ্চাগুলোকে জলাভূমিতে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পৈতৃক সম্পত্তি এই বাগানের বেশকিছুটা রাধানাথের ছোটছেলে শঙ্করের ভাগে পড়েছে। নৈপুর হাইস্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক শঙ্কর বড় গাছ কেটে বিক্রি করছেন। রাতারাতি নীড় হারা হয়েছে কয়েক হাজার পাখি। বিপন্ন হতে বসেছে প্রাকৃতিক পরিবেশে থাকা জীবজন্তু। পরিবেশ সচেতন কর্মীর বাড়িতে শিক্ষকের এই কর্মকাণ্ডে হতবাক জেলার পরিবেশকর্মীরা। যদিও শিক্ষকের দাবি, যে গাছে পাখির বাসা রয়েছে সেই সব গাছ কাটা হচ্ছে না। শিক্ষক শঙ্কর বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন আগাছা জমায় গাছগুলো মরে যাচ্ছে। সেই গাছ কাটা হচ্ছে। যেখানে বড় গাছে পাখি ও বাদুড় রয়েছে সেই গাছ কাটা হচ্ছে না। নতুন করে সেখানে (কাটা গাছের জায়গায়) চারগুণ গাছ লাগানো হবে।’’ এগরা বিট অফিসার জাহাঙ্গির কয়াল বলেন, ‘‘এই ভাবে পাখিদের বাসস্থান বিনষ্ট করে বেআইনি ভাবে গাছ কাটার বিষয়টি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ পটাশপুর-১ জীববৈচিত্র কমিটির সম্পাদক সোমনাথ বলেন, ‘‘বাবার সম্পত্তিতে সাজানো জঙ্গলে গাছে প্রচুর বাদুড়, শামুকখোল থেকে বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর নিরাপদ আশ্রয় ছিল। গাছগুলো কাটা পড়ায় জীববৈচিত্র ধ্বংস হচ্ছে। বুঝিয়েও লাভ হয়নি। পরিবেশ সচেতক হিসেবে এই ঘটনা খুবই বেদনাদায়ক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy