জল দাঁড়িয়েছে খড়্গপুর স্টেশন চত্বরে। নিজস্ব চিত্র
নিকাশি বেহাল। টানা বৃষ্টিতে তাই ভাসল মেদিনীপুর-খড়্গপুর দুই শহরই।
শুক্রবার রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। শনিবার দিনভর বৃষ্টি চলে। টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে মেদিনীপুর শহরের নীচু এলাকাগুলো। পালবাড়ি, ধর্মার মতো নীচু এলাকায় হাঁটু জল ঠেলে যাতায়াত করতে হয়েছে স্থানীয়দের। সমস্যা মানছেন পালবাড়ি এলাকার কাউন্সিলর সৌমেন খান। সৌমেনবাবু বলেন, “পালবাড়ি নীচু এলাকা। তাই বৃষ্টি হতেই এখানে জল জমে গিয়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছি। নতুন করে ভারী বৃষ্টি না-হলে দ্রুত জল নেমে যাবে।’’
বৃষ্টিতে শহরের বেহাল নিকাশি বেআব্রু হয়ে গিয়েছে। অনেক এলাকায় নিকাশি নালার মুখ অবরুদ্ধ। জল উপচে বিভিন্ন রাস্তা জল থইথই হয়েছে। এ দিন বল্লভপুর, জুগনুতলা, শরৎপল্লি, কুইকোটা, হবিবপুর, মানিকপুর প্রভৃতি এলাকায় অলিগলিতে জল দাঁড়িয়ে যায়। দুর্ভোগে পড়েন পথচলতি মানুষজন। স্থানীয়দের বক্তব্য, মজে যাওয়ার ফলেই নালাগুলো আর আর আগের মতো জল টানতে পারে না। এই সময়ের মধ্যে নিকাশির হাল ফেরানো হলে এই সমস্যা হত না। মেদিনীপুরের উপপুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাসের অবশ্য বক্তব্য, “টানা বৃষ্টি হয়েছে। তাই শহরের কোথাও কোথাও হয়তো জল জমে গিয়েছিল। তবে পরে জল নেমে যায়। শহরে বড় সমস্যা হয়নি।’’
মহাতাবপুর, রাঙামাটির মতো এলাকাতেও জল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। জমা জল নামতে সময়ও লাগে। রাঙামাটির বাসিন্দা উৎপল দাসের কথায়, “সকালের দিকে জল ঠেলেই যাতায়াত করতে হয়েছে। নিকাশি নালাগুলোর মুখ বুজে গিয়েছে। তাই অনেকক্ষণ জল দাঁড়িয়ে ছিল।’’ কয়েকটি বাড়িতেও জল ঢুকে যায়। কেন নীচু এলাকাগুলোয় নিকাশি নালার মুখগুলো পরিস্কার করা হচ্ছে না? উপপুরপ্রধানের সাফাই, “আগের থেকে শহরের এলাকা বেড়েছে। নতুন বসতি গড়ে উঠেছে। কিছু এলাকায় নিকাশি নিয়ে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। সব দিক খতিয়ে দেখে সমস্যার সমাধানে নিশ্চয়ই পথ খোঁজা হবে।’’
পুরসভার হাতে টাকা নেই। আমরুট প্রকল্পে ২৩৬ কোটি টাকা দাবি করেও না পাওয়ায় গড়া যাচ্ছে না নিকাশির মাস্টার প্ল্যান। আর তার জেরে ডুবলে খড়্গপুর শহরও। শনিবার সকাল থেকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে জল দাঁড়ায়। খড়্গপুর স্টেশনের বোগদা চত্বর ও সাবওয়েও ডুবে যায়।
ফুটব্রিজ, লিফট, এস্কালেটর ব্যবহার করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন রেলযাত্রীরা। বেনাপুরের বাসিন্দা রেলযাত্রী স্কুল শিক্ষক জ্যোতিন্দ্রনাথ দাস বলেন, “সকালে স্কুল যাব বলে ট্রেন ধরতে এসে সাবওয়ে ব্যবহার করতে পারিনি। ফুটব্রিজের দিকেও জল। রেলের তো কোনও হেলদোল দেখলাম না।” অবশ্য এ দিন বেলা বাড়তে বৃষ্টির মাত্রা কমে যাওয়ায় জল নেমে যায়। রেলের পক্ষ থেকেও সাবওয়ের জল বের করার ব্যবস্থা হলে স্বাভাবিক হয় পরিস্থিতি।
এ দিন খড়্গপুরের ১, ২, ৩, ৪, ৬, ১২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৮, ৩১, ৩৩, ৩৪, নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জল-যন্ত্রণা সইতে হয়েছে। অবস্থা সব থেকে খারাপ ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কৌশল্যা এলাকায়। কৌশল্যা মোড়, হোমিওপ্যাথি কলেজের গলি, বাড়বেটিয়া এলাকায় ছিল হাঁটুজল। অনেকের বাড়িতেও ঢুকে গিয়েছে নালার জল। হোমিওপ্যাথি কলেজের গলির বাসিন্দা প্রধান শিক্ষক মদনকুমার নাগ বলেন, “পুরসভা নিকাশির হাল ফেরায়নি। ফলে বর্ষা এলেই দুর্ভোগে পড়তে হয়।”
এ দিন জলে ডুবেছিল ইন্দার আনন্দনগর, সারদাপল্লি, পাঁচবেড়িয়া, সাঁজোয়াল, ভবানীপুর মাঠপাড়া, শ্রীকৃষ্ণপুরের মতো বহু নিচু এলাকায়। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে পুরভবনের আশপাশেও জল দাঁড়িয়েছিল। স্থানীয় কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, “জল জমেছে ঠিক। কিন্তু বৃষ্টি বেশি হলে তো কিছু করারও নেই।” খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারেরও যুক্তি, “প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে লড়াই করতে পারব না। আর আমরা রেলের জলে ভাসছি।” পুরসভার সাফাইকর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে বলেও জানান পুরপ্রধান।
টানা বৃষ্টিতে গোবিন্দপুর, মহেশপুর, বাগরুই, ঢোবাগেড়ার মতো কেশপুরের বিভিন্ন গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। কেশপুর পঞ্চায়েত অফিসের একতলাও জলের তলায়। জলের মধ্যেই দিনভর কাজ করেছেন পঞ্চায়েত অফিসের কর্মীরা। জলমগ্ন কেশপুর বাজার। বৃষ্টিতে মাটির বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডুবেছে চাষজমি। পাঁচখুরির চাতালে জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে।
এখনও ত্রাণ শিবির খোলা হয়নি। তবে নদী সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বর্ষায় কংসাবতী টইটুম্বুর। কেশপুরের এনায়েতপুর-সহ বিভিন্ন এলাকার নদীবাঁধ দুর্বল। এনায়েতপুরের গুণধর বাস্কের কথায়, “ভীষণ ভয়ে আছি। একবার বাঁধ ভাঙলে ঘরদোর-গবাদি পশু ভেসে যাবে।” কেশপুরের বিডিও সৌরভ মজুমদার জানান, বিভিন্ন পঞ্চায়েতে ত্রিপল পাঠানো হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির হিসেব কষা চলছে। বিডিও বলেন, ‘‘বাঁধের দিকে নজর রাখা হয়েছে। এখনই উদ্বেগের কিছু নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy