মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা ভোটের আগে গত বছর এসেছিলেন। জেতার পরে এ বারও বিশ্ব আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঝাড়গ্রামে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ওই অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিষেবা প্রদান-সহ একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিল্যান্যাস করতে পারেন তিনি।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রয়াত হয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁকে দেখতে তাঁর পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পর সেখান থেকে সড়ক পথে বিকেলে ঝাড়গ্রামে পৌঁছন তিনি। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, শুক্রবার দুপুর ১২টা নাগাদ ঝাড়গ্রাম শহরের ঘোড়াঘরা স্টেডিয়ামে বিশ্ব আদিবাসী দিবসের অনুষ্ঠান রয়েছে। সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে প্রায় ২৫০ কোটি টাকার ১৫৮টি প্রকল্পে শিল্যান্যাস ও ২৯৩টি প্রকল্পের উদ্বোধন করা হতে পারে। প্রকল্পগুলির মধ্যে জেলার নয়াগ্রাম, গোপীবল্লভপুর-১, ঝাড়গ্রাম ও সাঁকরাইল ব্লকের জল প্রকল্প রয়েছে। এ ছাড়াও অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে পাট্টা, লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা প্রদান করা হতে পারে। প্রায় সাড়ে ৫১ কোটি টাকা খরচ করে ঝাড়গ্রামে জেলাশাসকের নতুন দফতর তৈরি করেছে পূর্ত দফতর। অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে সেটিও উদ্বোধন করা হতে পারে।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন জনজাতি সংগঠনের প্রতিনিধিদের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। গত বছর বিশ্ব আদিবাসী দিবসের আগের দিন ঝাড়গ্রামে বিভিন্ন জনজাতি ও কুড়মি সামাজিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে পৃথক ভাবে বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বারও তেমনটা হতে পারে কি না, সে দিকে নজর রয়েছে।
লোকসভা ভোটের আগে কুড়মিদের নিয়ে রাজ্যের তরফে সমীক্ষার আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূলের ইস্তাহারেও কুড়মিদের জাতিসত্তার দাবি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে পদক্ষেপের আশ্বাস দেওয়া হয়। তবে লোকসভা ভোটে আদিবাসী কুড়মি সমাজ ও সাবেক নেগাচারীরা ঝাড়গ্রাম আসনে পৃথক প্রার্থী দিলেও দু’জনেরই জামানত জব্দ হয়। ফলে, ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আগে কুড়মিদের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী কী অবস্থান নেন, সে দিকে নজর রয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলের।
বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম শহরে মুখ্যমন্ত্রী প্রবেশ করার পর তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন মুন্ডা জনজাতির নেতৃত্ব। মুন্ডাদের জন্য একটি বোর্ড গঠনের প্রস্তাব দেওয়া তাঁদের পক্ষ থেকে। সংগঠনের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের দাবি মর্যাদা দিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। ভারত মুন্ডা সমাজের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সাধারণ সম্পাদক নবীনচন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘আদিবাসীদের জন্য উন্নয়নমূলক যে সব বোর্ড রয়েছে, তাতে বঞ্চিত মুন্ডা সম্প্রদায়। লোকসভা নির্বাচনের আগে যে বোর্ডগুলি গঠিত হয়েছে, তার জন্য অর্থও বরাদ্দ হয়েছে। গঠন করা হয়েছে উন্নয়ন পর্ষদ। আদিবাসী সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর পর মুন্ডারা সংখ্যাগরিষ্ঠতার নিরিখে দ্বিতীয়। বহু দিন ধরে জেলাশাসকের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। তার সুরাহা এখনও হয়নি। যে কারণে মুন্ডা জনজাতির মধ্যে ক্ষোভ, হতাশা রয়েছে। এই জনজাতি ভাষা, সংস্কৃতি সব দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন। দেখবেন বলেছেন। আশ্বাস পেয়ে আমরা অনেকটাই খুশি। আমরা সেই অপেক্ষায় রয়েছি, যে হেতু উনি কথা দিয়েছেন যে, করে দেবেন।’’
এ বার বিজেপির হাত থেকে ঝাড়গ্রাম লোকসভা ‘পুনরুদ্ধার’ করেছে তৃণমূল। তার পর এই প্রথম ঝাড়গ্রাম সফরে এসেছেন মমতা। সেখানে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। বিধায়ক তথা দলের জেলা সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘দিদি আজ ঝাড়গ্রাম শহরে এসে পৌঁছনোয় আমরা বেশ আনন্দিত। উনি আমাকে ডেকে বলেছেন, ভাল ভাবে সংগঠনের কাজ করতে হবে সকলকে সঙ্গে নিয়ে। নয়াগ্রামের উজ্জ্বল দত্তকে সঙ্গে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’’ উজ্জ্বল প্রাক্তন ব্লক সভাপতি ছিলেন। প্রাক্তন বিধায়ক চূড়ামনি মাহাতো বলেন, ‘‘দিদি আমাকে ডেকে আমার শরীর সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছেন। দলের কাজ ভাল ভাবে করার নির্দেশ দিয়েছেন।’’ ঝাড়গ্রামে আসার পথে খড়্গপুরের চৌরঙ্গিতে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নেতৃত্বের সঙ্গেও দেখা করেছেন মমতা। কথা বলেছেন তাঁদের সঙ্গেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy