মাওবাদী নেই। তবে তাদের নামে হাতে লেখা পোস্টার সাঁটিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে এমনটাই বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসনকে সতর্ক থাকার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
বুধবার প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে মমতা ঝাড়গ্রাম গিয়েছেন। সেখানে তিনি পুলিশকর্তাদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘কোনও থানা থেকে কি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, সন্ধ্যা ৬টার পরে বাইরে বেরোবেন না? পুলিশ থেকে কি এটা প্রচার করা হয়েছে, না কি এটা গুজব?’’ পুলিশ এবং প্রশাসনের কর্তারা একযোগে জানিয়ে দেন, এমন কিছু বলা হয়নি। এর পর মমতা বলেন, ‘‘তার মানে এটা খুব গোপনে কেউ গুজব ছড়িয়েছে, মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করার জন্য। মাথায় রাখবেন, কেউ আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। নেটমাধ্যমেও নজর রাখবেন। কারণ নেটমাধ্যমে যেমন ভাল লোক আছেন, তেমন অনেকে প্ররোচনাও দেয়। কেউ দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টাও করে। আবার মাওবাদীদের নাম করে মিথ্যা কথাও বলে যে, ‘মাওবাদী আসছে, মাওবাদী আসছে।’ কেউ নিজে একটা হাতে পোস্টার লিখল। অনেকে আবার সেই পোস্টারের ছবি তুলে বিক্রি করল। আর এ দিকে লোকের মধ্যে আতঙ্ক রটিয়ে দিল।’’ এর পর জঙ্গলমহলে মাওবাদীদের সংগঠন সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এটা কিন্তু কোনও ব্যাপার নেই। আমি চারদিকে খবর নিয়ে দেখেছি। যে বা যারা এর মধ্যে আছে, এটা তদন্ত করে খতিয়ে দেখা হবে।’’
সম্প্রতি জঙ্গলমহলের একাধিক জায়গায় মাওবাদীদের নাম করে পোস্টার সাঁটানোর ঘটনা ঘটেছে। ওই কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত মোট আট জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকে এই সংক্রান্ত আলোচনার সময় তা জানিয়ে দেন ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার অরিজিৎ সিন্হা। সদ্যই ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পেয়েছেন অরিজিৎ।
বুধবারের বৈঠকে পুলিশ এবং প্রশাসনকে সতর্কবার্তাও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বেলপাহাড়ির আইসি বিশ্বজিৎ বিশ্বাসকে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘আপনার সীমানায় কী সমস্যা আছে? সিআরপিএফ ক্যাম্প আছে?’’ বিশ্বজিৎ জানিয়ে দেন, তাঁর এলাকায় মোট সাতটি শিবির রয়েছে বিভিন্ন বাহিনীর। এর পর মমতা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘সেখানে বাইরে থেকে কাউকে ঢুকতে দেখছেন?’’ বিশ্বজিৎ উত্তর দেন, ‘‘ওখানে পাঁচটি রাস্তার মাধ্যমে ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। নাকাতল্লাশিও চলছে। পাশাপাশি, সিসি ক্যামেরাও বসানো হয়েছে। সিআরপিএফও নাইট অ্যামবুশ এবং এরিয়া ডমিনেশনও জারি রেখেছে। পাশাপাশি, এলাকার লোকজনের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখি আমরা।’’
এর পর পুলিশকে আদিবাসী জনজাতির মহিলাদের নিয়ে ‘উইনার্স টিম’ তৈরি করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে রাজ্যের সীমানার নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে কথা বলার নির্দেশ দেন। বুধবার আত্মসমর্পণকারী এক মাওবাদী এবং মাওবাদী হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত চার জনকে স্পেশাল হোমগার্ডে চাকরি নিয়োগপত্রও তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।