প্রধানের দায়িত্ব ফিরে পেলেন মামনি খিলাড়ি। কেন্দডাংরি গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয়ে। —নিজস্ব চিত্র।
জাতিগত শংসাপত্র বাতিল হওয়ায় জামবনি ব্লকের কেন্দডাংরি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পদ থেকে অপসারিত হন মামনি খিলাড়ি। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে শুক্রবার ফের প্রধান পদ ফিরে পেলেন তিনি। মামনির শংসাপত্র বাতিলের প্রশাসনিক নির্দেশটি খারিজ করে দিয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণ, শংসাপত্র বাতিল করার ক্ষেত্রে যে আইনগত পদ্ধতি রয়েছে, সেটা যথাযথ ভাবে মানা হয়নি। শংসাপত্র সম্পর্কে নতুন করে তথ্য ও সাক্ষ্যের ভিত্তিতে শুনানি করে মহকুমাশাসক ও জেলাশাসককে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে আদালত।
কেন্দডাংরি গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন দশটি। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে ছ’টিতে তৃণমূল ও চারটিতে কুড়মি জোটের নির্দল প্রার্থীরা জয়ী হন। তৃণমূলের ছয় প্রার্থীর অন্যতম মামনি জোকা গ্রাম সংসদের মহিলা সাধারণ আসন আসনে জিতেছিলেন। প্রধান পদটি তফসিলি (এসসি) জাতির প্রার্থীর জন্য সংরক্ষিত ছিল। প্রধান নির্বাচনের দিন তৃণমূল নেতৃত্ব শর্মা নায়েকের নাম প্রস্তাব করেন। অন্যদিকে, কুড়মি জোটের নির্দল প্রার্থীরা মামনির নাম প্রধান পদে প্রস্তাব করেন। কারণ, সাধারণ মহিলা আসন থেকে জিতলেও মামনির তফসিলি জাতিগত শংসাপত্র ছিল। উপস্থিত সদস্যদের ভোটাভুটিতে প্রধান পদপ্রার্থী শর্মা ও মামনি সমান (৫-৫) সংখ্যক ভোট পান। লটারিতে প্রধান হন মামনি। উপপ্রধান হন তৃণমূলের পানমণি টুডু। মামনি কুড়মি জোটের প্রধান হওয়ার পরই তাঁর জাতিগত শংসাপত্রটি ভুয়ো বলে মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়।
মামনির বাপের বাড়ির পদবি ‘বাগাল’। জামবনির তৎকালীন বিডিও তদন্ত করে জানান, মামনি আদপে বাগাল সম্প্রদায়ের। তিনি ‘মাহার’ দাবি করে জাতিগত শংসাপত্র নিয়েছিলেন। মামনিকে শো-কজ করে শুনানিতে ডাকেন মহকুমাশাসক। সেই শো-কজের বিরুদ্ধে মামনি কলকাতা হাই কোর্টে আবেদন করেন। হাই কোর্ট তাঁকে শুনানিতে হাজির হতে বলে। ২৯ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করেন মহকুমাশাসক। শুনানি সন্তোষজনক না হওয়ায় ৩০ অক্টোবর মামনির জাতিগত শংসাপত্র বাতিল করে দেন তৎকালীন মহকুমাশাসক বাবুলাল মাহাতো। এরপর প্রধানপদ থেকে কেন তাঁকে বরখাস্ত করা হবে না জানতে চেয়ে, মামনিকে ৮ নভেম্বর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন নতুন মহকুমাশাসক শুভ্রজিৎ গুপ্ত। মামনিকে শুনানির জন্য ডাকেন মহকুমাশাসক। ইতিমধ্যে কলকাতা হাই কোর্ট জানিয়ে দেয়, জাতিগত শংসাপত্রের বিষয়ে সরকারি ব্যাখ্যা (এ বিষয়ে পূর্বতন মহকুমাশাসক গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ‘মাহার’ সম্প্রদায় হিসেবে যাঁরা জাতিগত শংসাপত্র পেয়েছেন তাঁরা প্রকৃত তফসিলি জাতিভুক্ত কি না তা এক চিঠিতে অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের কাছে অনুসন্ধান সাপেক্ষে জানতে চেয়েছিলেন) না পাওয়া পর্যন্ত মামনিকে প্রধান পদ থেকে অপসারণ করা যাবে না। প্রশাসনিকস্তরে সিআরআই-কে (কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট) দিয়ে অনুসন্ধান করানো হয়। সিআরআই রিপোর্টে জানায়, জেলার বিভিন্ন ব্লকে যে পরিবারগুলি মাহার বলে নিজেদের দাবি করছেন তাঁরা আদপে মাহার নয়। ওই পরিবারগুলি জাতিগত শংসাপত্র (এসসি) পাওয়ার যোগ্য নন।
সিআরআই সমীক্ষা রিপোর্টের পর মামনিকে প্রধান পদ থেকে অপসারণের পদক্ষেপ শুরু হয়। মামনি ফের মহকুমাশাসককে জানান, জেলাশাসকের কাছে তাঁর জাতিগত শংসাপত্র সংক্রান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জির বিষয়টির এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। তবে জেলাশাসকও শুনানি করে মহকুমাশাসকের সিদ্ধান্তকে বহাল রাখেন। ১৮ জানুয়ারি মামনিকে ফের শুনানিতে ডাকেন মহকুমাশাসক। মামনি শুনানিতে না এসে চিঠি দিয়ে জানান, মাহার সংক্রান্ত যে সরকারি চিঠির ভিত্তিতে শুনানি ডাকা হয়েছে, সেই চিঠির প্রতিলিপি তাঁকে দেওয়া হয়নি। মহকুমাশাসক মামনিকে প্রধান পদ থেকে অপসারণ করে ১৯ জানুয়ারি নির্দেশপত্রে লেখেন, সুনির্দিষ্টভাবে মামনিকে মাহার সংক্রান্ত সিআরআই রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকারি চিঠি দেওয়ার কথা আদালতের নির্দেশে নেই। তবে মামনি তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদন করতে পারতেন। সেটা করেননি। তাই তাঁর আবেদন মঞ্জুর সম্ভব নয়। ২২ জানুয়ারি মামনিকে প্রধান পদ থেকে অপসারণ করে উপপ্রধান পানমণি কে ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে ফের কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন মামনি। শুক্রবার প্রধানের দায়িত্বে পুনর্বহাল হওয়ার পর মামনি বলছেন, ‘‘আদালতের নির্দেশে প্রধান পদের দায়িত্ব ফিরে পেয়েছি।’’ জামবনির বিডিও দেবব্রত জানা বলছেন, ‘‘উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রধান পদে পুনর্বহাল হয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy