জয়ের পরে শ্রীনুর স্ত্রী পূজা নায়ডু।
রেলশহরের ভোটে মাফিয়াদের আধিপত্যের ধারা অব্যাহত। সদ্য সমাপ্ত পুর-নির্বাচনেও দু’জন নির্বাচিত হয়েছেন, যাঁদের সঙ্গে রেল মাফিয়াদের যোগসূত্র স্পষ্ট। এক জন বিজেপি-র টিকিটে জয়ী পূজা নায়ডু, যিনি বর্তমানে জেলবন্দি শ্রীনু নায়ডুর স্ত্রী। অন্যজন অঞ্জনা সাকরে। তৃণমূলের টিকিটে জয়ী এই মহিলা কাউন্সিলর আবার একদা খড়্গপুরের ত্রাস বাসব রামবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। অঞ্জনার সমর্থনে এ বার প্রচারও করেছিলেন রামবাবু। খড়্গপুর পুরসভায় মাফিয়াদের দাপট বহুদিনের। যদিও আগে মাফিয়ারা সরাসরি নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত হত না। তারা থাকত পিছনে। সামনের সারিতে থাকতেন রাজনৈতিক নেতারাই। সময় মতো রাজনীতির কারবারীরা তাদের ব্যবহার করত। এ বার চিত্রটা পাল্টেছে। মাফিয়াদের ঘনিষ্ঠরাই সরাসরি ভোট ময়দানে নেমে পড়েছেন। জেলার রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, পুলিশি হয়রানি থেকে বাঁচতেই রাজনৈতিক আশ্রয় খুঁজছে মাফিয়ারা।
কী করবেন মাফিয়া-ঘনিষ্ঠ এই সব কাউন্সিলররা? শ্রীনুর স্ত্রী পূজার দাবি, “উন্নয়ন করব। নিকাশি নালা নেই। চারদিকে আবর্জনা। সব সাফসুতরো করব।” কিন্তু খড়্গপুরকে সাফসুতরো করতে হলে আগে মাফিয়া-রাজে দাঁড়ি টানা প্রয়োজন? সে ব্যপারে কিছু পরিকল্পনা রয়েছে কি? যাঁর স্বামীর নামে ছিনতাই, মারামারি, গুলি চালানোর একাধিক অভিযোগ, বোমাবাজির ঘটনায় যে এখন জেলবন্দি, সেই শ্রীনুর স্ত্রী পূজার এ বার জবাব, “যা মানুষের ক্ষতি করবে এমন কোনও খারাপ কাজ আমি সমর্থন করব না।” একই সঙ্গে পূজার দাবি, “রাজনীতির ব্যাপারে আমার সঙ্গে স্বামীর কোনও যোগ নেই। যেটুকু যোগ তা হল সাংসারিক ব্যাপারে!” শ্রীনুর এক খাস সাগরেদেরও দাবি, “আমাদের পথ আলাদা, ভাবির (পূজাদেবী) পথ আলাদা। উনি এলাকার উন্নয়ন করবেন। আমরা আমাদের কাজ করব।”
বাসব রামবাবুও যে একই কারনে পুরসভায় অঞ্জনা সাকরেকে নিজের প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তৃণমূল নেতৃত্ব সরাসরি রামবাবুর তৃণমূল যোগকে অস্বীকার করলেও রামবাবু সাফ জানিয়েছেন, তিনি তৃণমূল প্রার্থীকে প্রতিনিধি করে পুরসভায় পাঠিয়েছেন। পুরবোর্ড গঠন হলেই ওয়ার্ড জুড়ে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চালাতে চান। কী সেই কর্মযজ্ঞ? আবার কী নতুন করে রেলের স্ক্র্যাপ থেকে পুরোদমে গুন্ডা ট্যাক্স (জিটি) নেওয়া, যার কিছুটার দখলদারি নিয়েছিল শ্রীনু। ফের কী রেলের ঠিকাদারিতে একচেটিয়া দখলদারি? রেলের আবাসন দখল করে ভাড়া দিয়ে টাকা তোলা? ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জিটি নেওয়া? তৃণমূল নেতা গৌতম চৌবেকে খুন করে যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত হওয়ার পর শর্তাধীন জামিনে মুক্তি পাওয়া রামবাবু অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “আমার নামে খামোকা অনেকে বদনাম করছে। আমি শুধু ওয়ার্ডের উন্নয়ন নিয়েই ভাবছি।”
রামবাবু ঘনিষ্ঠ অঞ্জনা সাকরে।
এক সময় দুই মাফিয়া শ্রীনু ও রামবাবুর ঘনিষ্টতা থাকলেও তা বেশি দিন টেকেনি। জিটি-র রফা নিয়ে ফের বিবাদ শুরু হয়। এক সময় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গেও ঘনিষ্টতা ছিল শ্রীনুর। কিন্তু জিটি-তে অতিরিক্ত ভাগ বসানোর জন্য শ্রীনু বেঁকে বসে। সম্পর্কে ইতি পড়ে। এমনকি নিজের স্ত্রীকে বিজেপি প্রার্থীও করে। বদলা নিতে তৃণমূলও পুলিশের সাহায্যে ভোটের আগেই জেলে পুরে দেয় শ্রীনুকে। যদিও বর্তমানে ফের তৃণমূল নেতারা ত্রিশঙ্কু পুরবোর্ডকে নিজেদের দখলে আনতে জেলে পর্যন্ত শ্রীনুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছেন। পুরনো রাগ ঝেড়ে ফেলে শ্রীনুকে ফের তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলাতে অনুরোধ করছেন। অন্যদিকে রামবাবু আগে থেকেই তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে প্রচার করে তাঁকে জিতিয়ে এনে এগিয়ে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কী হবে? তা নিয়ে সারা খড়্গপুর জুড়ে এখন নানা প্রশ্ন। ফের কী তাহলে রামবাবু-শ্রীনু-তৃণমূল এক হয়ে যাবে। মাফিয়ারাজের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে খড়্গপুর শহরে। নাকি শ্রীনু এই দাবি মানবে না। একাধিপত্য কায়েম করতে রামবাবু ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধং দেহি মনোভাব নিয়েই এগিয়ে চলবে। সময়ই অবশ্য এর উত্তর দিতে পারবে।
—নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy