খেজুরির বোগা জেটিঘাট। উঠেছে সেতুর দাবি। নিজস্ব চিত্র
১১৬ বি জাতীয় সড়ক ছেড়ে ঝাঁ চকচকে পিচের রাস্তা ধরে যতদূর চোখ যায়, দু’পাশ জুড়ে ধূ ধূ মাঠ। কয়েক কিলোমিটার পেরোনোর পরে পৌঁছলাম কামারদা। সেখানে একটা চায়ের দোকানে বসেছিলেন স্থানীয় যুবক শম্ভু মালিক। মোবাইলে একটি খবরের চ্যানেলে দেখছিলেন প্রথম দফার ভোটে রাজ্যে অশান্তির ছবি। আচমকা অপরিচিত লোক দেখে মোবাইল বন্ধ করে দিলেন।
কেন এমন করলেন ওই যুবক বুঝলাম কিছুক্ষণ পরে, আলাপচারিতা গাঢ় হতে। যুবকের কথায়, ‘‘নেতারা (শাসক দল) জানলে কী অবস্থা হবে জানেন! বাড়ির লোকেরা এই ভেবে আমায় আড্ডাও দিতে নিষেধ করেছে।’’ চায়ের দোকান থেকে বেরিয়ে কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলায় জানা গেল এলাকা এখনও অনেক রাস্তা পিচ ও কংক্রিটের। বিদ্যুতের আলো এসেছে। সাবমার্সিবল পাম্প বসেছে। অতীতে এসব কিছুই ছিল না।
স্থানীয় মানুষের দাবি, এলাকায় কিছু উন্নয়ন হলেও, পরিস্থিতি খুব একটা বদলায়নি। এবার কি তা হলে ‘বদলের’ সুযোগ কাজে লাগাবেন! প্রশ্ন শুনেই কলাগেছিয়া গ্রামের এক প্রবীণের গলা থেকে ভেসে এল হতাশা, ‘‘ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে তো! সিপিএমের সময় যেতে হয়নি কখনও। গত কয়েক বছরেও বুথে যেতে হয়নি। এ বার পাব তো!’’ এক সময়ের ‘লেনিন নগরী’ এখন ঘাসফুলে ছেয়ে গিয়েছে। দেওয়াল দখল থেকে পতাকা- ব্যানার টাঙানো সবেতেই ভোটের প্রচারে কয়েকশো যোজন এগিয়ে শাসক দল।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তবে টিকাশি, পূর্ব চড়া, পূর্ব তল্লার একাধিক জায়গায় বিজেপির পতাকা এবং দেওয়াল লিখন কদাচিৎ চোখে পড়ল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বারাতলার একাধিক বাসিন্দার কথায়, ‘‘এখানে ভোটের আগে কোনও ইস্যুই টেকে না। মানুষের বাক স্বাধীনতা, আর ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার লড়াই চল্লিশ বছর ধরে চলছে।’’
খেজুরি-১ ব্লকের ৬টি এবং খেজুরি-২ ব্লকের ৫টি ও ভগবানপুর-২ ব্লকের দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে খেজুরি বিধানসভা। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের সবটাই শাসক দলের দখলে থাকলেও, বিজেপির বাড় বাড়ন্ত নিয়ে কিছুটা চাপে রয়েছে তারা। প্রসঙ্গত, গত ২০১৪ সালে ৩৬ হাজার ভোটের ‘লিড’ পেয়েছিলেন সাংসদ তথা এবারের তৃণমূল প্রার্থী শিশির অধিকারী। পরে,২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থী রঞ্জিত মন্ডল ৪৪ হাজার ভোটের লিড পেয়ে বিধায়ক হন। পঞ্চায়েত ভোটে সব স্তরে জয় পেয়েছিল শাসক। কিন্তু, এক সময় যারা তৃণমূলে নেতৃত্ব দিতেন, এমনকী জন প্রতিনিধি ছিলেন এখন তাঁরাই গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছেন। খেজুরি-১ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ ছিলেন বিশ্বজিৎ প্রামাণিক, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ছিলেন কৃষ্ণপ্রসাদ জানা, দু’জনেই এখন বিজেপির সংগঠক। এমনকী, দক্ষিণ খেজুরিতে যাকে সবচেয়ে বেশি ভরসা করত শাসক দল, সেই ইন্দ্রজিৎ জানাও তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি শিবিপরে। দলীয় প্রার্থীর প্রচারে তাঁকে বেরোতেও দেখা যাচ্ছে। এরকমই আরও একজন শুভ্রাংশু মণ্ডল। যিনি পঞ্চায়েত ভোটে নির্দল হিসেবে বারাতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর মালদা বুথে বেগ দিয়েছিলেন তৃণমূলের প্রার্থীকে। শাসক দলের এই চার ‘রথী’র উপর ভরসা করে এবার খেজুরি থেকে লিড পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছে গেরুয়া শিবির। খেজুরি বিধানসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা দিলীপ মাইতি বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে। এখন তারা সন্ত্রাস থেকে মুক্তি পেতে চাইছে। তাই এবার বড় মার্জিনে খেজুরিতে জয় পাব আমরাই।’’
অঙ্কটা যে উন্নয়ন দিয়ে মেলানো সম্ভব নয়, তা মেনে নিয়েছেন এক সময় তৃণমূলে থাকা বিজেপি নেতা কৃষ্ণপ্রসাদ জানা। তাঁর দাবি, বিজেপির অত শক্তি নেই যে খেজুরিতে লড়াই করবে। তবে, সাধারণ মানুষ যদি স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারেন, তাহলে মিরাক্কেল হয়ে যাবে। যদিও, এলাকার বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডল বিজেপির দাবিকে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘পাড়া মিটিংয়ে বুঝে গিয়েছি। সারা বছর যে ভাবে মানুষের সঙ্গে থাকি, তাতে লোকসভায় আরও মার্জিন বাড়বে।’’
শাসক আর বিরোধীরা যাই দাবি করুক না কেন, সরাসরি রাজনীতিতে জড়াতে রাজি নয় সাধারণ ভোটাররা। তাঁদের দাবি, রসুলপুর নদীর উপরে একটি সেতু হোক। যাতে কাঁথির সঙ্গে যোগাযোগ আরও সহজ হয়। প্রতিদিনই কাজের তাগিদে নদী পেরিয়ে কাঁথিতে যেতে হয় অনন্ত বেরাকে। তাঁর কথায়, ‘‘এখানে সেতুটা খুব জরুরি বুঝলেন। তাই যেই-ই আসুক, সেতুটা যেত তাড়াতাড়ি হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy