পুত্রহারা: আদালত চত্বরে রকির মা সত্যভামা আগরওয়াল। শুক্রবার তমলুকে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস
ঝাড়গ্রামের তরুণ ব্যবসায়ী সৌরভ আগরওয়াল ওরফে রকি অপহরণ ও খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত চারজনের মধ্যে অশোক শর্মা, তাঁর ভাইপো সুমিত শর্মা ও অশোকের পরিচারক তোতন রানাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল পূর্ব মেদিনীপুর দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত। আর অশোকের আত্মীয় দীনেশ শর্মার সাতবছর কারাবাসের নির্দেশ হয়েছে। শুক্রবার পূর্ব মেদিনীপুরের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক লোকেশকুমার পাঠক এই সাজা শুনিয়েছেন।
অশোক, সুমিত ও তোতনকে ভারতীয় দণ্ডবিধির অপহরণ, খুন, প্রমাণ লোপাট ও ষড়যন্ত্রের ধারায় এবং দীনেশকে প্রমাণ লোপাট ও অস্ত্র আইনে গত বুধবার দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। এ দিন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। মামলার বিশেষ সরকারি আইনজীবী সৌমেনকুমার দত্ত জানান, খুনের দায়ে অশোক, সুমিত ও তোতনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণের দায়ে যাবজ্জীবন-সহ আরও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং প্রমাণ লোপাটের দায়ে সাত বছর কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। দীনেশ শর্মাকে প্রমাণ লোপাটের দায়ে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও অস্ত্র আইনে তিনবছরের কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জরিমানার অর্থ অনাদায়ে প্রত্যেককে অতিরিক্ত ছ’মাস করে কারাবাসের নির্দেশ হয়েছে। সরকারি আইনজীবী বলেন, ‘‘অশোক শর্মার নেতৃত্বে দোষীরা ৩ কোটি টাকার জন্য রকিকে অপহরণ করে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। এই রায়ে রকির পরিবার ন্যায্য বিচার পেলেন।’’ অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী শঙ্কর কারক অবশ্য বলেন, ‘‘দীনেশের ইতিমধ্যে সাতবছর সংশোধনাগারে থাকা হয়ে গিয়েছে। ফলে তিনি মুক্তি পেয়ে যাবেন। বাকি তিনজনের যাবজ্জীবনের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ-আদালতে আবেদন করব।’’
এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ আদালতে আসেন রকির বাবা পবন আগরওয়াল, মা সত্যভামা ও বড় জেঠু রাধেশ্যাম, কাকা প্রদীপ, কাকিমা সঙ্গীতা-সহ পরিজনেরা। সাজা শুনতে তাঁরা আদালত ভবনের ছ’তলায় এজলাসে অপেক্ষা করছিলেন। দুপুর ১টা নাগাদ অশোক-সহ চারজনকে বিচারকের এজলাসে আনা হয়। চার জনই আগাগোড়া নির্বিকার ছিল। সাজা ঘোষণার পরে বিচারক অশোকদের কাছে জানতে চান তারা কিছু বলতে চায় কিনা। কেউই কিছু বলেনি। তবে ফেরার পথে আদালত চত্বরে অশোক সাংবাদিকদের উদ্দেশে হাত নেড়ে কিছু বলতে গিয়েছিল। তবে কর্তব্যরত পুলিশ তাকে সরিয়ে নিয়ে যায়।
পবনের ছেলে সৌরভ আগরওয়াল ওরফে রকি ছিলেন নির্মাণ সরঞ্জামের ব্যবসায়ী। পবন সম্পন্ন ব্যবসায়ী। তাই রকিকে অপহরণ করে মুক্তিপণ বাবদ ৩ কোটি টাকা দাবি করে অশোক। পবন ঘুণাক্ষরেও টের পাননি যে অশোকই অপহরণকারীদের মূল পান্ডা। রকির অপরণের পরে অশোক নিয়মিত পবনের বাড়িতে গিয়ে খোঁজও নিত, চা খেয়ে আসত। তবে পুলিশ অশোকের ফোনে আড়ি পেতে বুঝে যায়, সে-ই অপহরণকারী। অপহৃত রকিও অশোককে চিনে ফেলেছিলেন। পুলিশের দাবি, সেই কারণেই রকিকে বাঁচিয়ে রাখার ঝুঁকি নেয়নি অশোক ও তার শাগরেদরা। তবে পবনের থেকে টাকা নেওয়ার আগেই তারা পুলিশের জালে ধরা পড়ে যায়।
পবন বলেন, ‘‘ওরা আট বছর ধরে আমাকে খুব হয়রান করেছে। আমিও হাল ছাড়িনি। ছেলের খুনিরা আজ সাজা পেয়েছে। আদালতের কাছে কৃতজ্ঞ। আর ঝাড়গ্রাম শহরের মানুষ যে ভাবে রকির জন্য আমাদের সাহায্য করেছেন, তার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’’ সত্যভামা জুড়ছেন, ‘‘আমরা খুশি। তবে ফাঁসি হলে আরও ভাল হত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy