গুলিতে চোখ নষ্ট হয়ে গিয়েছে দিলীপ সেনের। হাতের অবস্থাও ভাল নয়।
নেতাই-কাণ্ডে মৃতদের পরিবার সরকারি চাকরি পেয়ে গিয়েছেন আগেই। কিন্তু জখম অনেকেরই তেমন কিছু হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছা অনুসারে লালগড়ে তৈরি হয়েছে সরকারি নার্সিং ট্রেনিং কলেজে। সেখানে অন্তত কিছুটা কর্মসংস্থান হবে বলেই আশা করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু তা হয়নি। অথচ অঙ্গ হারিয়ে তাঁরা অনেকেই আজ প্রতিবন্ধী। বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাঁদের চাষবাসের কাজও।
এ বার তাঁরাই বঞ্চনার অভিযোগ তুলে চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে। মঙ্গলবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে নেতাই-কাণ্ডে জখম তাপস মণ্ডল, দিলীপ সেন, তরণী ঘাঁটা, আভারানি মণ্ডলরা লিখেছেন, ‘হার্মাদদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে অঙ্গ হারিয়ে আমরা প্রতিবন্ধী ম, অথচ আমাদের বাদ দিয়ে নেতার বাড়ির লোকজনকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে।’ তাঁদের অভিযোগ, নার্সিং স্কুল ভবনে সাফাই কর্মী হিসাবে নিয়োগ করা হচ্ছে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বনবিহারী রায় সুপারিশ করা বিশেষ কয়েকজনকে। তালিকায় থাকা দশজনের মধ্যে রয়েছেন জনগণের কমিটির সাজাপ্রাপ্ত নেতা ছত্রধর মাহাতোর বড় ছেলে ধৃতিপ্রসাদ মাহাতো। রয়েছেন বনবিহারীবাবুর এক নাতি বাণীব্রত পণ্ডা। বাকিরাও বনবিহারীবাবুর ঘনিষ্ঠ।
একই অবস্থা তাপস মণ্ডলের। তাঁর পা নষ্ট হয়ে গিয়েছে ।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভবনটি তৈরি হওয়ার সময় পূর্ত দফতরের বরাতপ্রাপ্ত এক ঠিকাদারি সংস্থার অধীনে স্থানীয় কয়েকজনকে অস্থায়ীভাবে রাত পাহারার কাজ দেওয়া হয়েছিল। কাজ পেয়েছিলেন নেতাই-কাণ্ডে আহত দিলীপ সেন। ২০১১ সালে গুলি লেগে তাঁর বাঁ চোখটি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। মাসিক চার হাজার টাকার বেতনে বছর খানেক নৈশপ্রহরীর কাজ করছিলেন তিনি। কিন্তু কলেজটি চালু হওয়ার মুখে স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রাক্তন সেনাকর্মীদের নেওয়া হয়েছে। ফলে কাজ হারিয়েছেন দিলীপবাবু।
একই ভাবে ১০জন ঠিকা সাফাই কর্মী নিয়োগের জন্য সম্প্রতি একটি বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। ওই বেসরকারি সংস্থার অধীনে ১ অক্টোবর থেকে কাজ করবেন অস্থায়ী সাফাই কর্মীরা।।
ঝাড়গ্রামের সিএমওএইচ অশ্বিনীকুমার মাঝি অবশ্য বলেন, “স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশে নার্সিং ট্রেনিং কলেজে সাফাইয়ের দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি সংস্থা কাকে নিয়োগ করবে সেটা তাদের ব্যাপার।” দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার সুভাষ দাস স্বজন পোষণের অভিযোগ অস্বীকার বলেন, “এত ছোট বিষয় নিয়ে বনবিহারীবাবু অনুরোধ করতে যাবেন কেন? আমরা স্থানীয় ভাবে দশ জনকে অস্থায়ী সাফাই কর্মী পদে নিয়েছি।” বনবিহারীবাবুও দাবি করেছেন, “আমার নাতি কিংবা ছত্রধরের ছেলের নিয়োগে আমার কোনও হাত নেই। আমি কারও নাম সুপারিশ করিনি।’’
বরং তিনি গোষ্ঠী কোন্দলের পাল্টা অভিযোগ আনছেন। তাঁর দাবি, ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি তন্ময় রায় মিথ্যা অভিযোগ করিয়ে নিচ্ছেন গ্রামবাসীদের নিয়ে। তন্ময় রায়ের বক্তব্য, “এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। নেতাই-কাণ্ডে জখমদের কাজের দাবিতে বহুবার নেতৃত্বকে জানিয়েছি।”
মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠি । — নিজস্ব চিত্র
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি লালগড়ের নেতাই গ্রামে রথীন দণ্ডপাটের বাড়ি থেকে গ্রামবাসীদের লক্ষ করে গুলি চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। ঘটনায় নিহত হন চার মহিলা-সহ ন’জন সাধারণ গ্রামবাসী। জখম হন ২৮ জন। নিহতদের পরিজনরা পাঁচ লক্ষ টাকা করে সরকারি ক্ষতিপূরণ পান। সেই সঙ্গে প্রতি পরিবারের এক বা একাধিক সদস্য চাকরিও পেয়েছেন। আহতরা ৫০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পেলেও কেউই চাকরি পাননি। তাঁদের অভিযোগ, ওই টাকায় সংসার চলে না। অথচ তাঁরা অনেকেই প্রতিবন্ধকতার কারণে আর চাষ করতে পারছেন না। প্রয়োজন উপযুক্ত একটা চাকরির।
রাজ্যে প্রথম বার ক্ষমতায় আসার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লালগড়ে নার্সিং ট্রেনিং কলেজ তৈরির আশ্বাস দেন। পূর্ত দফতর লালগড়ে ছ’তলা বিশাল আবাসিক নার্সিং কলেজ ভবনটি তৈরি হয়ে করে ফেলেছে। ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৫০ আসন বিশিষ্ট আবাসিক এই কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পুজোর পরে ক্লাস শুরু হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy