Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

রোগ সারাতে মেঝেয় ঠাঁই!

এ দিকে হাসপাতাল সুপার সব্যসাচী চক্রবর্তীর ঘরের দরজা বন্ধ। দরজার সামনেই মেঝেতে বেড বানিয়ে চিকিৎসা চলছে ৭২ বছরের অশোক দাসের।

ভূমি-শয়ান: কাঁথি মহকুমা হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র

ভূমি-শয়ান: কাঁথি মহকুমা হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র

শান্তনু বেরা
কাঁথি শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ০০:২৬
Share: Save:

১৮ বছর বয়সী যুবক রামকৃষ্ণ সাউ থ্যালাসেমিয়া রোগী। সে কারণে নির্দিষ্ট সময়ে রক্ত নেওয়াটা জরুরি। এগরা মহকুমায় ব্লাড ব্যাঙ্ক না থাকায় শনিবার কাঁথি মহকুমা হাসাপাতালে আসেন পটাশপুর থানার ললাটের এই যুবক। অথচ বেড নেই। অগত্যা হাসপাতালের বারান্দার মাটিতে শুয়েই রক্ত নিতে হচ্ছে রামকৃষ্ণকে। তাঁর বাবা নিতাই সাউ বলেন, “এটা জেনারেল ওয়ার্ড। বারান্দা দিয়ে সকলে যাতায়াত করছে। কিন্তু ধুলোবালি বা দূষণের কথা ভাবলে এখন চলবে না। ছেলের রক্ত নেওয়াটা জরুরি।”

রবিবার সকাল ১১টা নাগাদ কাঁথি মহকুমা হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেল, বহু রোগীরই মেঝেতে শুইয়ে চিকিৎসা চলছে। রবিবার সকালে প্রেশার ও সুগার বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয় উত্তর দারুয়ার বাসিন্দা ৭৫ বছরের ভগবান মাইতিকে। বাথরুমে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার পর ছেলে শিবশঙ্কর মাইতি তাঁকে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। চিকিৎসক জানান, অক্সিজেন ও সেলাইন দেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু হাসপাতালে শয্যা সঙ্কট। ফলে জরুরি বিভাগের সামনের বারান্দায় রেখেই চিকিৎসা চলছে ভগবানবাবুর।

এ দিকে হাসপাতাল সুপার সব্যসাচী চক্রবর্তীর ঘরের দরজা বন্ধ। দরজার সামনেই মেঝেতে বেড বানিয়ে চিকিৎসা চলছে ৭২ বছরের অশোক দাসের। চিকিৎসক জানান, শ্বাসকষ্টের জন্যে তাঁর অক্সিজেন প্রয়োজন। অশোকবাবুর পাশেই চিকিৎসা চলছে সুগারের রোগী গৌরহরি জানা, জ্বরের রোগী শেখ জয়নালউদ্দিনের। মেল ওয়ার্ডের পাশের বারান্দায় শুয়ে চিকিৎসা চলছে শ্যামসুন্দর দোলাই, বুদ্ধদেব নাটুয়ার। তবে প্রসূতি বিভাগের মেঝেতে সবচেয়ে বেশি রোগী রয়েছেন। এমনকী, রবিবার ভর্তি হওয়া আগমনী মান্নাকে অস্ত্রোপচারের আগে শুইয়ে রাখা হয় মেঝেতে।

কিন্তু কেন এমন অব্যবস্থা? সব্যসাচীবাবু বলেন, “হাসপাতালে ২০০টি বেড রয়েছে। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে রয়েছে ৬টি বেড। কিন্তু রবিবার দুপুরে মোট রোগীর সংখ্যা ছিল ২৭০। ফলে বেড না পেয়ে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা হচ্ছে ৬৪ জনের।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীর কথায়, “রবিবার হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কম। কোনও কোনও দিন সংখ্যাটা ৩০০ পর্যন্ত চলে যায়।” সুপারের দাবি, কাঁথি মহকুমা হাসপাতাল থেকে অকারণে কোনও রোগীকে রেফার করা হয় না। রাজ্যের মহকুমা হাসাপাতালগুলিতে যেখানে গড়ে রেফার হয় ১২ শতাংশ, এই হাসপাতালের সেখানে গড়ে রেফার হয় ১০ শতাংশ।

কাঁথি মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির এগজিকিউটিভ চেয়ারম্যান তথা কাঁথির মহকুমাশাসক শুভময় ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের এত ঘর নেই। তাই হাসপাতালের নতুন বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে। ‘পেডিয়্যাট্রিক ও মাদার কেয়ার হাব’ হবে সেখানে। প্রসূতি বিভাগ এবং ফিমেল ওয়ার্ড সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে হাসপাতালটি খানিকটা ফাঁকা হবে। তখন জেনারেল ও মেল ওয়ার্ড বাড়ানো হতে পারে।”

এ ছাড়াও হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০০ করার জন্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান শুভময়বাবু। তাঁর আশা, প্রকল্প সম্পূর্ণ হলে সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Hospital Bed Problem Contai S.D.Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy