—প্রতীকী চিত্র।
তিন বছর আগে রাজ্যে কুড়মালি মাধ্যম সরকারি স্কুল চালুর ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। কিন্তু এখনও সেই স্কুল চালু হয়নি। পশ্চিমবঙ্গ কুড়মি উন্নয়ন ও সংস্কৃতিক পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, লিপির গেরোয় কুড়মালি মাধ্যম স্কুল চালু করা যাচ্ছে না। কুড়মালি ভাষার সরকারি স্বীকৃত নিজস্ব লিপি নেই। কুড়মি উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক পর্ষদে ১২ জন লিপি তৈরি করে জমা দিয়েছেন। কোন লিপিটি বেছে নেওয়া হবে এখনও সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি।
দীর্ঘদিন ধরে জনজাতি তালিকাভুক্তির দাবি করে চলেছেন কুড়মিরা। ২০২১ সালের ৯ অগস্ট ঝাড়গ্রামে বিশ্ব আদিবাসী দিবস উদ্যাপনের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে কুড়মালি মাধ্যম স্কুল চালু করা হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন। তবে সেই স্কুলে কোন লিপিতে পঠনপাঠন হবে, তা স্পষ্ট নয়। কুড়মালি ভাষার উৎস নিয়ে সওয়াল করে গবেষক ও বিদ্বজ্জনদের একাংশ বলছেন, আবেগ থেকে চটজলদি সিদ্ধান্ত না নিয়ে কুড়মালির নিজস্ব লিপি কোনটি হবে তা কর্মশালার ভিত্তিতে সরকারি ভাবে স্থির করা হোক। তাঁদের মতে, ভাষার নিজস্ব লিপি খুবই জরুরি। আর স্কুল চালুর আগে সরকারি স্তরে তার সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার।
৬টি রাজ্যে ছড়িয়ে থাকা প্রায় দু’কোটি মানুষ কুড়মালি ভাষায় কথা বলেন। জাতীয়স্তরে এই ভাষার স্বীকৃতি মেলেনি। তবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কুড়মালিকে দ্বিতীয় ভাষার মর্যাদা দিয়েছে। নিজস্ব লিপি না থাকায় মূলত বাংলা, ওড়িয়া ও দেবনাগরী হরফে কুড়মালি লেখা হয়। এই ভাষার উৎপত্তি নিয়ে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন এটি বাংলার অপভ্রংশ, কারও মতে ওড়িয়ার অপভ্রংশ। ঝাড়গ্রামের ভূমিপুত্র মালদহের গৌড় কলেজের বাংলার অধ্যাপক ক্ষিতীশ মাহাতোর দাবি, চতুর্দশ শতকে বড়ু চণ্ডীদাসের ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’-এ কুড়মালি শব্দ এবং ধ্বনিতত্ত্ব ও রূপতত্ত্বের লক্ষণ স্পষ্ট ভাবে রয়েছে। কুড়মালি লোকসাহিত্য ও ঝুমুর গানের ধারাটিও যথেষ্ট সমৃদ্ধ। ক্ষিতীশ বলছেন, ‘‘স্কুল চালুর আগে লিপি নির্ধারণ করা প্রয়োজন। কুড়মালি উচ্চারণ বাংলা লিপিতে প্রকাশে অনেক সমস্যা থাকে। সরকারি উদ্যোগে কর্মশালা করে বিদ্বজ্জনদের মত নিয়ে কোনও একটি লিপি বেছে নিতে হবে।’’
কুড়মালি চিসই লিপির স্রষ্টা জয়ন্ত মাহাতোর দাবি, কুড়মালি প্রাক-বৈদিক দ্রাবিড়-গোষ্ঠীর ভাষা। সংস্কৃত বা তার কোনও উপভাষা থেকে কুড়মালির উৎপত্তি হয়নি। তবে জয়ন্তও বলছেন, ‘‘নিজস্ব লিপি ছাড়া কুড়মালিতে পাঠদান সম্ভব নয়।’’ জয়ন্তর তৈরি কুড়মালি চিসই লিপিটি ‘আইএসও’-এর (ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন) কোড নম্বর পেয়েছে। ওই লিপিতে বেসরকারিস্তরে কুড়মালিতে পঠনপাঠন হয়। সাহিত্যসৃষ্টিও হয়েছে। জঙ্গলমহল স্বরাজ মোর্চার কেন্দ্রীয় সভাপতি অশোক মাহাতোর কথায়, ‘‘সরকারের সদিচ্ছা থাকলে লিপির জটিলতা কাটিয়ে কুড়মালি মাধ্যম স্কুল চালু করা হোক। মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’’ কুড়মি উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান রথীন্দ্রনাথ মাহাতো বলছেন, ‘‘পর্ষদের কাছে ১২ ধরনের লিপি জমা পড়েছে। সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রী নেবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy