Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

প্রেমের কাঁটায় ঝরল পদ্ম

দলের প্রার্থী নিয়ে গোড়া থেকেই গেরুয়া-শিবিরে অসন্তোষ ছিল। দিলীপরা প্রেমচন্দকে প্রার্থী হিসেবে চেয়েছিলেন। সঙ্ঘ- ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত দলের একটা অংশ পছন্দ করেনি প্রেমচন্দকে।

হতাশ বিজেপি প্রার্থী। নিজস্ব চিত্র

হতাশ বিজেপি প্রার্থী। নিজস্ব চিত্র

বরুণ দে
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৯ ০৪:৪৮
Share: Save:

গত লোকসভা ভোটে খড়্গপুরে বিজেপির ভোটপ্রাপ্তি ছিল ৫৭ শতাংশ। ছ’মাসের মাথায় তা নেমে গেল ৩৪ শতাংশে।

উপ-নির্বাচনে তৃণমূলের কাছে বড়সড় ধাক্কা খেল গেরুয়া-শিবির। খড়্গপুর বিজেপির ‘গড়’ হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। গত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের জ্ঞানসিংহ সোহন পালকে ৬ হাজার ভোটে হারিয়েছিলেন বিজেপির দিলীপ ঘোষের। পরে মেদিনীপুর লোকসভায় জিতেছেন দিলীপ। তিনি বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করায় এই উপ-নির্বাচন। এ বার হারলেন প্রেমচন্দ ঝা।

তবে কি দলের প্রার্থী বাছাই গলদ ছিল? বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ব্যাখ্যা, ‘‘আমি খড়্গপুরের বিধায়ক ছিলাম। মানুষ আমাকেই বিধায়ক হিসেবে চেয়েছিলেন। তাই জিতেছিলাম। আমি তো আর উপ-নির্বাচনে দাঁড়াতে পারতাম না।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশের কথায়, ‘‘প্রার্থী তো বিজেপিরই ছিল। মানুষ মোদীজি আর পদ্মফুলের প্রতীক দেখেই বিজেপিকে ভোট দেন।’’ শমিত অবশ্য মানছেন, ‘‘প্রার্থী নিয়ে ভাবার সুযোগ ছিল।’’ সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘তবে প্রার্থীর বিশেষ প্রভাব ভোটে পড়ে বলে মনে হয় না।’’

দলের প্রার্থী নিয়ে গোড়া থেকেই গেরুয়া-শিবিরে অসন্তোষ ছিল। দিলীপরা প্রেমচন্দকে প্রার্থী হিসেবে চেয়েছিলেন। সঙ্ঘ- ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত দলের একটা অংশ পছন্দ করেনি প্রেমচন্দকে। তাই প্রেমচান্দের পাশাপাশি সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ শমিতকে দিয়েও মনোনয়ন করানো হয়েছিল। এক সময়ে সঙ্ঘের মেদিনীপুর জেলা কার্যবাহ ছিলেন শমিত। বিজেপি সূত্রের খবর, দলের প্রার্থীকে যে সকলে পছন্দ করছেন না, প্রচারে খড়্গপুরে এসে তা বুঝতে পেরেছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতার না কি বার্তা ছিল, পাত্র কানা কিংবা খোঁড়া হলেও বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রে কিন্তু সে কথার উল্লেখ করা হয় না। পাত্রের বিয়ের দিনক্ষণই জানানো হয়। দল যাঁকে প্রার্থী করেছে, তাঁর সমর্থনে দলের সকলকেই প্রচারে নামতে হবে। প্রার্থী নির্বাচনে ভুল না হলে কি এই বিপর্যয় হত? সদুত্তর এড়িয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি বলেন, ‘‘খড়্গপুরের ক্ষেত্রে কী ভুল হয়েছে দেখব। কিছু ভুল হয়ে থাকলে সংশোধন করব।’’

বিজেপিকে বিঁধছে শাসক দল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘আমাদের এই জয় ঐতিহাসিক। অহঙ্কারে দিলীপ ঘোষের মাটিতে পা পড়ছিল না। লোকসভায় ৪৫ হাজার ভোটের লিড নিয়েছিল। ভেবেছিল, খড়্গপুরে তৃণমূলকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবে। দেখা যাচ্ছে, ওরাই উড়ে গিয়েছে!’’ কোনওভাবে জয় যাতে হাতছাড়া না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক ছিল তৃণমূল। দলের শিবিরের জায়গাও বদলে ফেলে তারা। গণনার দিনে বিভিন্ন দলই গণনাকেন্দ্রের অদূরে শিবির করে। যেখানে দলীয় কর্মীরা থাকেন। খড়্গপুরে তৃণমূলের শিবির সাধারণত গণনাকেন্দ্রের দক্ষিণ দিকে হয়। বিজেপির শিবির হয় উত্তর দিকে। এ বার না কি কেউ তৃণমূলকে জানিয়েছিল, দক্ষিণ দিকটা ভাল নয়! শিবির অন্য দিকেই করা ভাল! শিবিরের জায়গা বদল কেন? তৃণমূলের এক নেতার মন্তব্য, ‘‘উত্তর দিকটা ভাল। এ দিকে গাছের ছায়া থাকে। তাই এখানে শিবির করা হয়েছে।’’

প্রেমের কাঁটায় ঝরল পদ্ম। গাছের ছায়ার নীচে জ্বলল প্রদীপ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy