Advertisement
E-Paper

রাজার দেওয়ানের স্মৃতিসৌধেই অধিষ্ঠাত্রী শ্মশানকালী

পুরাতন ঝাড়গ্রামের তালতলা শ্মশানটি কয়েকশো বছরের পুরনো। এই এলাাতেই রয়েছে মল্লদেব রাজ পরিবারের প্রাসাদ। সেখানে রাজ পরিবারের দান করা জমিতেই গড়ে ওঠে তালতলা শ্মশান।

রাজার দেওয়ান দেবেন্দ্রমোহনের স্মৃতিসৌধের উপর শ্মশানকালীর দোতলা মন্দির।

রাজার দেওয়ান দেবেন্দ্রমোহনের স্মৃতিসৌধের উপর শ্মশানকালীর দোতলা মন্দির। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:৩৮
Share
Save

রাজ-তালুকের শ্মশানে তাঁর অধিষ্ঠান। রাজ এস্টেটের সর্বশেষ দেওয়ানের স্মৃতিসৌধের উপরই তৈরি হয়েছে শ্মশানকালী দেবী ‘রাজরাজেশ্বরী’র মন্দির।

ঝাড়গ্রাম শহরের তালতলা শ্মশানের এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ঝাড়গ্রাম মল্লদেব রাজ এস্টেটের সর্বশেষ দেওয়ান দেবেন্দ্রমোহন ভট্টাচার্যের স্মৃতি। ১৯২৯ সাল থেকে দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত ঝাড়গ্রামের সর্বশেষ রাজা নরসিংহ মল্লদেবের দেওয়ান ছিলেন দেবেন্দ্রমোহন। মেদিনীপুর কলেজের ইতিহাসের প্রাক্তন অধ্যাপক দেবেন্দ্রমোহন ছিলেন সুপণ্ডিত ও জমিদারির কাজে পটু। পঞ্চাশের দশকে তাঁর মৃত্যুর পর রাজ পরিবারের উদ্যোগে তালতলা শ্মশানে শেষকৃত্যস্থলে তাঁর নামাঙ্কিত একটি স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয়। সেই সৌধের উপরই পরে পুরাতন ঝাড়গ্রাম এলাকার বাসিন্দাদের উদ্যোগে তৈরি হয় শ্মশানকালীর মন্দির।

পুরাতন ঝাড়গ্রামের তালতলা শ্মশানটি কয়েকশো বছরের পুরনো। এই এলাাতেই রয়েছে মল্লদেব রাজ পরিবারের প্রাসাদ। সেখানে রাজ পরিবারের দান করা জমিতেই গড়ে ওঠে তালতলা শ্মশান। যদিও জনশ্রুতি, কয়েকশো বছর আগে এলাকাটি ছিল জঙ্গলাকীর্ণ ও উগাল (পরিখা) বেষ্টিত। সেখানে সাধনভজন করতেন তান্ত্রিকরা। তবে তখন কোনও কালীমন্দির ছিল না। প্রায় সাড়ে সাত দশক আগে শ্মশান সংলগ্ন রাস্তার ধারে স্থানীয় যুবকদের উদ্যোগে কালীপুজো শুরু হয়। পরে পুরাতন ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা সন্তোষ দাস-সহ কয়েকজনের উদ্যোগে ওই পুজোটি উঠে আসে দেবেন্দ্রমোহনের স্মৃতিসৌধস্থলে। এক তান্ত্রিক এসে দেবীর মৃন্ময়ী মূর্তি স্থাপন করে নিত্যপুজো শুরু করেন। সেই তান্ত্রিকের বিধান মেনেই স্মৃতিসৌধের উপর মন্দির তৈরি হয়।

সত্তরের দশকের মাঝামাঝি রাজা নরসিংহের নাতি দুর্গেশ মল্লদেবকে সভাপতি করে গঠিত হয় মন্দির কমিটি। বিভিন্ন জ‌নের দানে সেখানেই গড়ে ওঠে দেবীর দোতলা মন্দির। ঝাড়গ্রামের এক অবাঙালি ব্যবসায়ীর দানে কুমোরটুলির এক ভাস্করকে দিয়ে তৈরি করানো হয় কষ্ঠিপাথরের দেবীর বিগ্রহ। দেবেন্দ্রমোহনের স্মৃতি সৌধ মন্দিরের দোতলায় দেবীর অধিষ্ঠান। শ্মশানে অবস্থান করলেও দেবীর এখানে শান্তরূপ। পুরাতন ঝাড়গ্রামের দীপককুমার নামাতা, রাসবিহারী দাসের মত প্রবীণ বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ষাটের দশকের গোড়ায় তাঁরা যখন স্কুল পড়ুয়া, ওই সময় শ্মশান সংলগ্ন রাস্তার ধারে কালীপুজো হত। পরে দেবেন্দ্রমোহনের স্মৃতিসৌধের উপর পুজোটি স্থানান্তরিত হয়। তারপর রাজ পরিবারের অনুমতি নিয়ে সেই সৌধের উপরই স্থানীয়দের দানে মন্দির গড়ে দোতলায় বিগ্রহ রেখে নিত্যপুজো শুরু হয়।

ঝাড়গ্রাম রাজ পরিবারের সদস্য জয়দীপ মল্লদেব বলেন, ‘‘রাজ পরিবারের দান করা জমিতেই শ্মশান রয়েছে। তবে শ্মশানকালী মন্দিরটি স্থানীয়দের সম্মিলিত উদ্যোগে তৈরি হয়।’’ মন্দির কমিটিতে বিভিন্ন সময়ে পদাধিকারী পরিবর্তন হলেও এখন আবার সভাপতি পদে রয়েছে‌ন দুর্গেশ মল্লদেব। সম্পাদক পদে রয়েছেন আশুতোষ দাস। মন্দিরের বর্তমান পূজারী চন্দন আচার্য জানালেন, দক্ষিণা কালীর মন্ত্রেই দেবীর নিত্যপুজো হয়। প্রতি অমাবস্যায় দেবীকে স্নান করিয়ে নতুন বস্ত্র পরিয়ে বিশেষ পুজো হয়। দীপান্বিতা কালীপুজো হয় মহানিশায়। তার আগে দেবীর নবকলেবর হয়। দোতলা মন্দিরটি দেখার জন্য আসেন পর্যটকরাও।

শ্মশানবাসিনী দেবীর মন্দির আর রাজার শেষ দেওয়ানের স্মৃতিসৌধ একাকার হয়ে এখন ইতিহাসের সাক্ষী।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jhargram Kali Puja

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}