Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Junglekanya Bridge

বছর পার, আঁধারে ডুবে ‘জঙ্গলকন্যা’

২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুবর্ণরেখা নদীর উপর দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ‘জঙ্গলকন্যা’ সেতুর উদ্বোধন করেন।

অন্ধকারে ঢাকা নয়াগ্রামের জঙ্গলকন্যা সেতু।

অন্ধকারে ঢাকা নয়াগ্রামের জঙ্গলকন্যা সেতু। নিজস্ব চিত্রl

রঞ্জন পাল
নয়াগ্রাম শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২৪ ০৯:০৯
Share: Save:

বিদ্যুতের বকেয়া বিল ৩ লক্ষ ২২ হাজার ৪৬ টাকা। তা কে মেটাবে? পঞ্চায়েত নাকি ব্লক প্রশাসন! এ নিয়ে টানাপড়েনের মাঝেই আঁধারে ডুবেছে মুখ্যমন্ত্রীর সাধের ‘জঙ্গলকন্যা’ সেতু।

ঝাড়গ্রাম জেলার নয়াগ্রামে সুবর্ণরেখার উপরে এই সেতু গত এক বছর ধরে সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকারচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। সেতুর উপর কোনও আলো জ্বলে না। ওই সেতুর বিদ্যুতের বিল রয়েছে নয়াগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের নামে। তবে পঞ্চায়েতের দাবি, বিপুল এই অঙ্ক মেটানো তাদের পক্ষে
সম্ভব নয়।

এত দিন ব্লক প্রশাসন বিল মেটালেও এখন তারা হাত তুলে দিয়েছে। বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার দাবি, বিল বকেয়া থাকলেও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি। তাহলে সেতুতে আঁধার কেন? সূত্রের খবর, সেতুর বিদ্যুতের খুঁটিতে কিছু ত্রুটি (লাইন শর্ট) রয়েছে। তা মেরামত না করলে যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই নিরাপত্তার স্বার্থেই বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে।

২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সুবর্ণরেখা নদীর উপর দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ‘জঙ্গলকন্যা’ সেতুর উদ্বোধন করেন। জঙ্গলমহলে উন্নয়নের অন্যতম নজির হিসেবে এই সেতুকে তুলে ধরে তৃণমূল সরকার। সেতুর এক দিকে ঝাড়গ্রামের নয়াগ্রাম, অন্য দিকে পশ্চিম মেদিনীপুরের ভসরাঘাট। সেতুর উপরে সব মিলিয়ে ৮০টি বাতিস্তম্ভ রয়েছে। কিন্তু গত এক বছর ধরে সেগুলি জ্বলে না। অন্ধকারে সমস্যায় পড়েন মানুষজন। এই সেতু দিয়ে বালি বোঝাই লরি চলাচল করে। ভসরাঘাটের দিকে অনেক সময় লরি বালির জল ঝরাতে দাঁড়িয়ে থাকে। তাতে সমস্যা বাড়ে।

জানা গিয়েছে, ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে এ বছর জুন মাস পর্যন্ত সেতুর আলোর বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। তার পরিমাণ ৩ লক্ষ ২২ হাজার ৪৬ টাকা। যাঁর নামে বিল, সেই নয়াগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান জ্যোৎস্না পাত্র দত্তের দাবি, ‘‘আমি বিষয়টি জানি না।’’ তবে পঞ্চায়েতের এগজিকিউটিভ অ্যাসিন্ট্যান্ট সঞ্জয় বিদ বলেন, ‘‘প্রধানের নামে বিল আসে। তবে আমরা সেই বিল ব্লকে পাঠিয়ে দিই। এত টাকা তো গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়।’’

এত দিন ব্লক থেকেই টাকা মেটানো হত। তবে নয়াগ্রামের বিডিও সুদীপ্ত রায় বলছেন, ‘‘নয়াগ্রাম পঞ্চায়েতের নামে বিল এলে টাকা তাদেরই দেওয়ার কথা।’’ নয়াগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির এক প্রাক্তন সভাপতি অবশ্য জানাচ্ছেন, আগে ওই বিল পঞ্চায়েত সমিতির নিজস্ব তহবিল থেকে দেওয়া হত। তাহলে এখন কেন দেওয়া হবে না? নয়াগ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির বর্তমান সভাপতি রূপা বেরার দাবি, ‘‘বিদ্যুতের বিলের ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। বিডিও সাহেব হয়তো জানেন। তবে সেতুর আলোগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।’’

জঙ্গলকন্যা সেতুর বিদ্যুৎ সংযোগের দায়িত্বে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কেশিয়াড়ি কাস্টমার কেয়ার সেন্টার। আর সেতুর আলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে ব্লক প্রশাসন। বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার ঝাড়গ্রামের রিজিওনাল ম্যানেজার মলয় শিকদার বলেন, ‘‘সেতু নয়াগ্রামের দিকে পড়লেও বিদ্যুতের দায়িত্বে থাকা কেশিয়াড়ি কাস্টমার কেয়ার সেন্টার বেলদা ডিভিশন ও মেদিনীপুর রিজিওনের মধ্যে পড়ছে।’’ বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার মেদিনীপুরের রিজিওনাল ম্যানেজার তন্ময় মহাপাত্রের দাবি, ‘‘বিল বকেয়া থাকলেও মিটার পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ ঠিকই রয়েছে। কিন্তু তারপরে কোনও সমস্যা রয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণে ত্রুটির জন্যই সেতু অন্ধকারাচ্ছন্ন
হয়ে রয়েছে।’’

ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক মণিচাঁদ পানির কটাক্ষ, ‘‘এই সেতুর নামে উন্নয়ন প্রচার চলে। এটাই হচ্ছে কাটমানির উন্নয়ন।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা নয়াগ্রামের বিধায়ক দুলাল মুর্মুর আশ্বাস, ‘‘প্রশাসনিক ভাবে আলোচনা করে সমস্যা মেটানো হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

midnapore nayagram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy