প্রতীকী ছবি।
তিনি বিচারপ্রার্থী। অথচ সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজিরায় অপারগ। কারণ দীর্ঘদিন ধরে হৃদ ও স্নায়ুরোগে অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী। অথচ ছেলের উপরে অত্যাচারের বিচারে তাঁর সাক্ষ্য জরুরি। অতঃপর, প্রৌঢ়ার সাক্ষ্য গ্রহণে তাঁর বাড়িতেই এলেন বিচারক এবং দুই তরফের আইনজীবীরা। আদালতের বাইরে বিচারপ্রার্থীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হল অভিযুক্ত ও উভয়পক্ষের আইনজীবীদের উপস্থিতিতে।
বৃহস্পতিবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সেকেন্ড কোর্ট) অর্ঘ্য আচার্য তমলুকের খোটিয়ালবসান গ্রামের বাদিন্দা অঞ্জলি বক্সীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। সেখানে বিবাদীপক্ষের আইনজীবী জেরা করলেন মামলার বাদীপক্ষ অঞ্জলিদেবীকে। জেলায় এমন ঘটনা এর আগে ঘটেনি বলেই মত আইনজীবীদের।
পুলিশ সূত্রে খবর, খোটিয়ালবসান গ্রামের বাসিন্দা অঞ্জলি দেবী ছেলে শিবরামের সঙ্গে ২০১৬ সালে বিয়ে হয়েছিল তমলুকের সিমুলিয়া গ্রামের এক তরুণীর। বিয়ের কয়েক মাস পর ওই তরুণী বাপের বাড়ি চলে যান। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে শিবরাম শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রীকে আনতে যান। অঞ্জলীদেবীর অভিযোগ, ছেলেকে প্রচণ্ড মারধর করে শ্বশুর-শাশুড়ি ও তাদের আত্মীয়স্বজন। শিবরামকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে এক আত্মীয়ের কাছে ঘটনা জানতে পেরে হাসপাতালে যান তিনি। পরে ছেলের উপর এমন আক্রমণে খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন তমলুক থানায়। অভিযোগের ভিত্তিতে শিবরামের শ্বশুর-শাশুড়ি ও ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ। তমলুক আদালতে সেই মামলা চলছে। পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিটও জমা দিয়েছে। বর্তমানে অভিযুক্তরা জামিনে মুক্ত রয়েছেন।
আদালতে মামাল মামলা শুরু হয়। অভিযোগকারী ও অভিযুক্তদের সাক্ষ্য গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেন বিচারক। কিন্তু হৃদ ও স্নায়ুরোগে অসুস্থ অঞ্জলিদেবী বাড়িতে শয্যাশায়ী থাকায় আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধার কথা জানান। এই নিয়ে উভয়পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য নিয়ে শুনানি পর জেলা ও দায়রা বিচারক পার্থ সেন অভিযোগকারীর বাড়িতে গিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণের নির্দেশ দেন। সেই মতো এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ পুলিশি নিরাপত্তায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, উভয়পক্ষের আইনজীবী, আদালতের কর্মী ও অভিযুক্তরা অঞ্জলিদেবীর বাড়িতে পৌঁছে যান। উভয়পক্ষের আইনজীবী ও অভিযুক্তদের উপস্থিতিতে অঞ্জলিদেবীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। করেন। দুপুর ২ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব চলে।
সরকারি আইনজীবী বদ্রু আলম মল্লিক বলেন, ‘‘অঞ্জলিদেবী স্নায়ুরোগে অসুস্থ। তাঁর চিকিৎসা চলছে। শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে তাঁর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য বিচারকের কাছে আবেদন জানানো হয়েছিল।’’ অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী সুভাষ ঘোষ বলেন, ‘‘অভিযোগকারী গুরুতর অসুস্থতার জন্য আদালতে হাজির হতে পারবেন না জানিয়েছিলেন। আইন অনুযায়ী জেলা বিচারক পার্থসারথি সেন অভিযোগকারীর বাড়িতে গিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণের নির্দেশ দেন।’’ তিনি জানান, এমন সচরাচর ঘটে না। সে দিক থেকে একে দৃষ্টান্তও বলা যায়। আর অঞ্জলি দেবীর কথায়, ‘‘পড়ে গিয়ে আমার কোমরে আঘাত লেগেছিল। আমি হৃদরোগী। অসুস্থতার জন্য আদালতে যেতে পারিনি। মাননীয় বিচারক এসে সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন। বিচার পাব বলেই আশা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy