মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গ। নিজস্ব চিত্র
ছিল গ্রানাইট টেবিল। হয়ে গেল ডিসেকশন টেবিল।
ছিল মৃতদেহ বহনের ট্রলি। ডিসেকশন টেবিল হল সেটিও।
এমনই অদ্ভুত কাণ্ড ঘটেছে ভার্চুয়াল পরিদর্শনে। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের (এনএমসি) নিয়ন্ত্রণাধীন মেডিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড রেটিং বোর্ড (এমএআরবি) সম্প্রতি ভিডিয়ো কনফারেন্সে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখে। এমএআরবি-র ছাড়পত্র পেলেই শুরু করা যায় পঠনপাঠন। কিন্তু গত মঙ্গলবার সেই ভার্চুয়াল পরিদর্শনে ঘটেছে কিছু অদ্ভুত রূপান্তর। বৃহস্পতিবার মেডিক্যালে কলেজের অধ্যক্ষকে দেওয়া চিঠিতে তার উল্লেখও করেছে বোর্ড। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন জানিয়ে দিয়েছে, এখনই ২০২২-’২৩ শিক্ষাবর্ষে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজের পঠনপাঠন শুরু করা যাবে না। এ-ও জানানো হয়েছে চিঠি প্রাপ্তির সাত দিনের মধ্যে মেডিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড রেটিং বোর্ডের কাছে পরিকাঠামোগত অপ্রতুলতার ব্যাখ্যা দিতে হবে।
উলুবেডিয়া, বারাসত, আরামবাগ, তমলুক, জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ ইতিমধ্যে পঠনপাঠনের অনুমোদন পেয়েছে। কিন্তু ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও পাচ্ছে না অনুমোদন। চিকিৎসকদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলছেন, ‘‘সরকারের ব্যর্থতার জন্য অনুমোদন পাচ্ছে না। পরিকল্পনাবিহীন ভাবে তড়িঘড়ি মেডিক্যাল কলেজ চালু করতে গেলে যা হয়, তাই হচ্ছে।’’
কোথায় সমস্যা?
উত্তর জানতে বৃহস্পতিবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল অধ্যক্ষ বা সুপার কেউ নেই। ফোনে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তথা ভাইস প্রিন্সিপ্যাল গৌতমেশ্বর মজুমদার বলেন, ‘‘যা বলার অধ্যক্ষ বলবেন।’’ অধ্যক্ষ সুদেষ্ণা মজুমদারকে বার বার ফোন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন। টেক্সট মেসেজেরও উত্তর দেননি। রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি কিন্তু বাইট (টেলিভিশনে প্রতিক্রিয়া) দিই না।’’
সমস্যা যে এ বারই প্রথম এমনটা নয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য পরিদর্শনে এসেছিল এনএমসি-র প্রতিনিধি দল। সেই পরিদর্শনের ভিত্তিতে পরিকাঠামোগত বিভিন্ন ঘাটতির কথা উল্লেখ গত ২৪ মার্চ মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপ্যালকে ডিসঅ্যাপ্রুভাল লেটার পাঠিয়েছিল এমএআরবি। পরিকাঠমোর খামতি পূরণ করে যথাযথ আবেদন করতে বলা হয়েছিল। সেই মতো মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ আবেদন করেছিলেন। মঙ্গলবার ছিল তারই ভার্চুয়াল পরিদর্শন। ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে অস্থায়ী মেডিক্যালের কলেজের বিভিন্ন পরিকাঠামো পরিদর্শন করেন এনএমসির প্রতিনিধিরা। তারপর ভার্চুয়ালি বৈঠকে অধ্যক্ষা জানান, ৪৭ জন থেকে ৫০ অধ্যাপক যোগ দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকজন অন্য কলেজ থেকে আসছেন। বাকিদের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। অধ্যক্ষ কমিটির কাছে জানিয়েছিলেন, হাসপাতালের পর্যাপ্ত শয্যা রয়েছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিকাঠামো রয়েছে। বিপুল সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার হচ্ছে। এমনকি, চিকিৎসা সংক্রান্ত পরীক্ষাগারের সুবিধা রয়েছে। তারপরই ওই কমিটি অধ্যক্ষার কাছে জানতে চেয়েছিলেন, অ্যানাটমি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাগার কেমন রয়েছে। অধ্যক্ষা একটি ছোট্ট শেডকে অ্যানাটমি ডিসেকশন হল হিসেবে দেখান। যা মূল ভবন থেকে অনেক দূরে। শব ব্যবচ্ছেদ ঘরটি দেখে সন্তুষ্ট হয়নি এমএআরবি। এছাড়া হিস্টোলজি, মিউজিয়াম কিছুই দেখাতে পারেননি অধ্যক্ষ। বরং পরিদর্শনে ঘটেছে কিছুঅদ্ভুত রূপান্তর।
বোর্ড স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, মেডিক্যাল কলেজের ভবনের পর্যাপ্ত পরিসর সহ আসবাবপত্র, উপযুক্ত সরঞ্জাম ও অনান্য সুযোগ সুবিধা থাকতে হবে। অনুমোদন দেওয়ার মত অ্যানাটমি বিভাগের নূন্যতম পরিকাঠমো নেই। এইসব কারণে চলতি শিক্ষাবর্ষে এখনই পঠনপাঠনের অনুমোদন দেওয়া যাচ্ছে না।
পিছিয়ে যাওয়া যাক দু’বছর। ২০২০। তখন কোভিডের প্রথম ঢেউ এসে পড়েছে। এক ভার্চুয়াল প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে পারেন, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোভিড ওয়ার্ড হচ্ছে। অন্য ওয়ার্ডের পাশেই। জানতে পেরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘এটা হলে কিন্তু হ য ব র ল হয়ে যাবে।’’ হাসপাতালে পৃথক জায়গায় কোভিড ওয়ার্ড তৈরির নির্দেশদিয়েছিলেন তিনি।
পাশের জেলা ঝাড়গ্রাম। সেখানে কি বিড়াল এখনও রুমাল হচ্ছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy