প্রতীকী ছবি
জমি আন্দোলনকে ঘিরে ১০ বছর আগে উত্তাল হয়েছিল এই এলাকা। জমি আন্দোলন স্তিমিত হয়ে গেলেও নন্দীগ্রামের মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভে আজও উত্তাল হয় এলাকা। যার মূলে রয়েছে শাসক দলের দুর্নীতি।নন্দীগ্রাম
১০০ দিনের কাজে ভুয়ো মাস্টার রোল তৈরি করে টাকা লোপাট। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর তৈরি করে দেওয়ার নামে টাকা আত্মসাৎ। সরকারি জমি দখল করে নির্মাণ, রাস্তা তৈরির ক্ষেত্রে কাটমানি, রেশন দুর্নীতি থেকে সদ্য আমপানের ক্ষতিপূরণের তালিকায় কারচুপি—শাসক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গত ৯ বছর ধরে দফায় দফায় উত্তাল হয়েছে নন্দীগ্রাম। শাসক দল তৃণমূলের সঙ্গে ‘দুর্নীতি’ শব্দটা এতটাই একাত্ম হয়ে গিয়েছে যে পঞ্চায়েতের মদতে সরকারি জমি দখলের অভিযোগ উঠলে বিরুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূলের প্রধান সুকেশ মান্নাকে বলতে হয়, ‘‘সবাই করছে। তাই বাধা দিচ্ছি না। তা ছাড়া এখানে কর্মসংস্থান হবে।’’
নন্দীগ্রাম ২ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সঞ্জয় দিন্দার বিরুদ্ধে ৮১ জনের রেশন কার্ড নিজের কাছে রেখে দিয়ে তিন বছর ধরে রেশনের জিনিসপত্র তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠলে তা প্রকাশ্যে স্বীকারও করেন তিনি। অথচ দুর্নীতিগ্রস্ত এই সব নেতার বিরুদ্ধে কোনওরকম পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ। ওই নেতার বিরুদ্ধে ব্লক প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে অভিযোগে জানিয়েও সুরাহা মেলেনি বলে দাবি ওই রেশনকার্ড প্রাপকদের।
বয়াল-মধ্য আমদাবাদ ১৪ কিলোমিটার সড়ক তৃণমূল নেতাদের কাটমানি ‘শিল্পের’ জেরে এখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণ হয়নি বলে অভিযোগ। এলাকার এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘এই ঘটনাই প্রমাণ করে, নেতাদের পকেট ভরাতে না পারলে নন্দীগ্রামে কেউ কাজ করতে পারবে না। ফলে সাধারণ মানুষের যন্ত্রণা বাড়ছে।’’
সাম্প্রতিককালে আমপানের ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতিতে শাসকদলের ছোট-বড়-মাঝারি সব ধরনের নেতার নাম উঠে এসেছে বারবার। ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েও যেমন টাকা পেয়ে গিয়েছেন কেউ কেউ। তেমনি আবার পাকা বাড়ি রয়েছে এমন লোকজনকে পাইয়ে দেওয়া হয়েছে ক্ষতিপূরণ। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয় যে, ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে শেষ পর্যন্ত দলের ১৮৮ জন নেতা-কর্মীকে শো-কজ এবং ২৫ জনকে সাসপেন্ড করে তৃণমূল। যদিও তাতে বঞ্চিতরা লাভবান হননি। যা দেখে বিরোধীরাও বলছে, এ সবই লোক দেখানো। যাদের শোকজ বা সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে তৃণমূলের তরফে দাবি করা হচ্ছে তাদের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। অথচ সংবাদমাধ্যমের সামনে বারবার এই মর্মে বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে। সবকিছুই আসলে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা। তৃণমূল নেতাদের কাটমানির চাহিদা মিটিয়ে শেষমেষ নন্দীগ্রামের উন্নয়ন আর হল না।
তৃণমূলের নন্দীগ্রাম বিধানসভা কমিটির চেয়ারম্যান মেঘনাদ পাল বলেন, ‘‘বিরোধীদের সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। ১০০ দিনের কাজে নন্দীগ্রামের ২টি ব্লক জেলার অন্য ব্লকের থেকে অনেক এগিয়ে। বিরোধীদের কাজই হল কুৎসা ও অপপ্রচার করা।’’ যদিও বিজেপির তমলুক জেলা সাংগঠনিক সহ-সভাপতি প্রলয় পাল বলেন, ‘‘এক সময়ের জমি আন্দোলনের আঁতুড়ঘর নন্দীগ্রাম এখন শাসক দলের কল্যাণে দুর্নীতির আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে। যাঁরা সেই আন্দোলনের সময় মাঠে ছিলেন তাঁরা এখন কোটিপতি। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান তো পাল্টায়ইনি, বরং দুর্দশা বাড়ছে।’’
আর নন্দীগ্রামের মানুষ বলছেন, ‘‘দুর্নীতির খাঁচায় ছিলাম। এখন দাঁড়ে বসেছি। পায়ের শিকলটা রয়েই গিয়েছে।’’ (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy