বিডিওর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগে সরব তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা। নারায়ণগড় ব্লক অফিসে। ফাইল চিত্র।
বিডিও-পঞ্চায়েত সমিতি সংঘাত! সমিতি তৃণমূল পরিচালিত। ব্লক অফিসের সামনে রীতিমতো ধর্না, বিক্ষোভে সমিতির সভাপতি, সহ সভাপতি, কর্মাধ্যক্ষেরা। দাবি, বিডিওর পদত্যাগ! কর্মাধ্যক্ষদের প্রকাশ্য ঘোষণা, ‘বিডিও পদত্যাগ না-করা পর্যন্ত অবস্থান চলবে!’ পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ের এই ঘটনা শোরগোল ফেলেছে। জেলার রাজনৈতিক মহলে, প্রশাসনিক মহলেও। এখনও পর্যন্ত সংঘাতের আঁচ কমার ইঙ্গিত নেই।
বিডিওর বদলির দাবিতে নারায়ণগড়ে ধর্না, অবস্থান অবশ্য নতুন নয়। ক’বছর আগেও হয়েছে। গত পাঁচ বছরে ছ’জন বিডিও এখানে কাজ করতে এসেছেন। কমবেশি এঁদের সকলের সঙ্গেই নানা বিষয়ে সমিতির একাংশের সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সাম্প্রতিকতম সংঘাতের কারণ কী? আন্দোলনরত সমিতির কর্মাধ্যক্ষদের দাবি, বিডিও তাঁদের সহযোগিতা করতে চাইছেন না। পঞ্চায়েত সমিতিকে না জানিয়ে নানা সামগ্রী কেনা হয়েছে। যেমন কম্পিউটার, টিভি। তাঁদের প্রতিবাদ এর বিরুদ্ধেই। নারায়ণগড়ের বিধায়ক সূর্যকান্ত অট্টের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত, সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ অনাদি বারিকের দাবি, ‘‘বিডিওর বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ আছে। চাইলে দেব। সমিতিকে না জানিয়ে টিভি, কম্পিউটার কিনেছেন। অফিসের বড়বাবু বলেছেন, বিডিও তাঁকে ধমক দিয়ে বিল করিয়েছেন। এটা কি বিডিওর কাজ? আমরা ওঁর পদত্যাগ চাইছি!’’
বছর দুয়েক আগের ঘটনা। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় গোলমাল হয়েছে দাবি করে বিডিও অফিসের সামনে ধর্না হয়েছিল। তৎকালীন ব্লক তৃণমূলের সভাপতি মিহির চন্দ ও তাঁর ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারেরা ধর্নায় যোগ দিয়েছিলেন। ৮৫টি গভীর নলকূপ বসানোর জন্য দরপত্র ডাকা হয়েছিল। অভিযোগ ওঠে, সূর্যকান্ত অট্টের ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারেরা মিহির চন্দের ঘনিষ্ঠ ঠিকাদারদের দরপত্র জমা দিতে দেয়নি। তখন নারায়ণগড়ে তৃণমূলে সূর্যকান্ত- মিহিরের সংঘাত তুঙ্গে। বচসা থেকে হাতহাতিও হয়েছিল। ঘটনাচক্রে, এর পরপরই বিডিও বদল হয়। পঞ্চায়েত সমিতির একাংশের ‘অসহযোগিতা’র কারণে রেণুকাও এখানে বেশি দিন কাজ করতে পারেননি বলে শোনা যায়। বিভিন্ন ক্ষেত্রের পরিষেবা তাঁদের মনোনীত লোকজনদেরই প্রদান করতে হবে বলে নানা সময় ‘চাপ’ দেন সমিতির একাংশ সদস্য। বারবার ধর্না দিয়ে বিডিও পরিবর্তনের দাবি কেন, খোঁচা দিচ্ছে বিরোধীরা। আন্দোলনরত সমিতির কর্মাধ্যক্ষেরা অবশ্য শোনাচ্ছেন, ‘‘আগের বিডিওরা আমাদের জানিয়ে, নলেজে দিয়ে সমস্ত কিছু করতেন। ইনি একতরফা চালানোর চেষ্টা করছেন। সহযোগিতার বদলে বিরোধিতা করছেন!’’ বিডিওর পদত্যাগ চেয়ে তৃণমূল পরিচালিত সমিতির ধর্না নজিরবিহীন। পরিস্থিতি দেখে জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরীর সঙ্গে দেখা করে বিডিওর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার আর্জি জানিয়েছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস, সংক্ষেপে ডব্লিউবিসিএস (এগজিকিউটিভ) অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলা শাখা। ব্লক অফিসে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আর্জিও জানিয়েছে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। একাধিক মহলের দাবি, সমিতির একাংশ সদস্যের এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে, বিডিওর বিরুদ্ধে ধর্না বা অবস্থান করলেই, তাঁকে সরিয়ে দেওয়া যায়! নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্লকের এক প্রাক্তন বিডিও বলছেন," আমরা বাইরে থেকে যাই। সহযোগিতা পেলে অনেক কাজ করা যায়। কাজ করতে গেলে সমস্যা হতে পারে। বসে মিটিয়ে নিলেই তো সমস্যা মিটে যায়।"
তৃণমূলকে বিঁধতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাসের খোঁচা, ‘‘এ সব তৃণমূলের লোকেদের নাটক। এতদিন যথেচ্ছ ভাবে লুটেপুটে খেয়েছে। এখন মনে হয়, ভাগ- বাঁটোয়ারা নিয়ে সমস্যা হয়েছে! তাই ধর্না।’’ জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক গৌরীশঙ্কর অধিকারীর কটাক্ষ, ‘‘আমরা বলছি, বারবার ধর্না দিয়ে কেন বিডিও পরিবর্তন করবেন। বিধায়ক তাঁর অফিসের কোনও এক তৃণমূলকর্মীকে বিডিওর চেয়ারে বসিয়ে দিলেই তো আর সমস্যা থাকে না! ’’ বিডিও- সমিতি সংঘাতের মাঝে তাঁর নাম জুড়ে দেওয়ায় রুষ্ট বিধায়ক সূর্যকান্ত। সংঘাত কেন? তৃণমূল বিধায়কের কথায়, ‘‘এটা বিডিও আর সমিতির ব্যাপার। এর মাঝে তো আমি নেই! আমাকে দলের তরফে এ নিয়ে মুখ খুলতে বারণ করা হয়েছে। আমি তাই মুখ খুলব না!’’ নারায়ণগড় বিডিওর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তৃণমূল জনপ্রতিনিধিদের অসহযোগিতার বিষয়ে মঙ্গলবার বেলদায় বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেন, "বিডিওতে, পঞ্চায়েতে এত লুটপাট হয়েছে সেই নিয়ে মারামারি চলছে। তৃণমূলের লোকেরাই গন্ডগোল করছে।’’
নারায়ণগড়ে তো সংঘাতের আবহ? জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরী বলেন, ‘‘সমস্যা নেই। বিডিও অফিসে যাচ্ছেন। বিডিও অফিস সুষ্ঠুভাবেই চলছে।’’ যাঁর পদত্যাগের দাবিতে সরব সমিতি, সেই নারায়ণগড়ের বিডিও কৃশানু রায় বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশ অনুযায়ীই যাবতীয় কাজ করা হয়।’’ ব্লকে কোনও প্রকল্পের ‘কন্টিজেন্সি ফান্ড’ প্রয়োজনে ব্যবহারের ক্ষমতা বিডিওর রয়েছে মেনেই সমিতির এক সদস্যের মন্তব্য, ‘‘বিডিওর উচিত ছিল, আমাদের কনফিডেন্সে নিয়ে কাজ করা। উনি তো সেটাই করছেন না!’’ (সহ প্রতিবেদন: বিশ্বসিন্ধু দে) চলবে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy