মন্দারমণিতে সৈকতের বুকেই মেরামতি চলছে হোটেল ঘরে। হুঁশ নেই প্রশাসনের। নিজস্ব চিত্র।
উপকূলের বিধি ভেঙেই ইয়াস-ক্ষতির মেরামত। নজর নেই প্রশাসনের। খোঁজ নিল আনন্দবাজার
আইন আছে। তার অনুশাসনও খুব কড়াভাবেই বলবৎ রয়েছে। কিন্তু সেই আইনের প্রয়োগ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। কারণ যে আইনের ফাঁসে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর তৈরি আটকে গিয়েছে। সেই আইনকেই বৃদ্ধাঙ্গষ্ঠু দেখিয়ে একের পর এক হোটেল থেকে লজ নির্মাণ হয়ে চলেছে। পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্র উপকূল এলাকা মন্দারমণিতে কেন্দ্রের ‘কোস্টাল রেগুলেশন জোন’ (সিআরজেড) আইন বলবৎ করার ক্ষেত্রে এমন বৈপরিত্যের ছবিই দেখা গিয়েছে।
সমুদ্রের জোয়ারের জল (টাইড)পাড়ে যতদূর পর্যন্ত আসে, সেখান থেকে আরও ৫০০ মিটার এলাকা বাদ দিয়ে তবেই নির্মাণ কাজ করা যায়। এটাই ‘কোস্টাল রেগুলেশন জোন’ (সিআরজেড) আইনে বলা রয়েছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে এই আইনের তোয়াক্কা না করাটাই পরিচিত ছবি হয়ে উঠেছে মন্দারমণিতে। দিঘার অদূরে রামনগর-২ ব্লকে কয়েক বছর আগে গজিয়ে ওঠা এই পর্যটন কেন্দ্রে শুরু থেকেই হোটেল, লজ নির্মাণে সিআরজেড না মানা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
দাদনপাত্রবাড়ে গিয়ে দেখা গেল, একেবারে সমুদ্রের ধারেই বিশাল হোটেল নির্মাণ চলছে। তার প্রায় লাগোয়া হোগলা পাতা, বাঁশ আর কয়েকটা ইট সমুদ্রতটে পড়ে রয়েছে। সেখানেই তাঁর এক চিলতে মাটির বাড়ি ছিল বলে দাবি প্রবীণ বিষ্ণুপদ দাসের। ইয়াসের জলোচ্ছ্বাসে তা আজ ধ্বংসস্তূপ। দূরে গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া বিষ্ণুপদ বলেন, ‘‘চার দশক ধরে এখানকার বাসিন্দা। এভাবে কখনও জলোচ্ছ্বাস হয়নি। সবকিছু সমুদ্র গিলে খেয়েছে।’’ আর বাড়ি বানানোর চেষ্টা করেছেন? প্রশ্নের জবাবে ওই প্রবীণ জানালেন, ‘‘আবাস যোজনা প্রকল্পে নাম থাকা সত্ত্বেও টাকা পাইনি। এবার ঘর ভেঙে যাওয়ায় ক্ষতিপূরের জন্য আবেদন করেছি।’’ এলাকার বাসিন্দারা জানান, গত কয়েক বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা এবং বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্পের তালিকায় নাম থাকলেও সরকারি অনুদান দেওয়া হচ্ছে না। কারণ ওই এলাকা নাকি সিআরজেড-এর মধ্যে পড়ে। তাই সেখানে ঘর করা যাবে না। মন্দারমণি, দাদনপাত্রবাড়, সোনামুই, সিলামপুর, দক্ষিণ পুরুষোত্তমপুর মৌজায় কমবেশি ছ’শোজন সরকারি আবাস যোজনা প্রকল্প টাকা পাননি বলে কালিন্দী গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে। ওই মৌজাগুলি কোস্টাল রেগুলেশন জোনের মধ্যে পড়ে। তাই সেখানে বাড়ি বানানো হলে সিআরজেড আইন ভাঙা হবে বলে প্রশাসনের দাবি।
২০১৪ সাল থেকে এই মৌজাগুলিতে কোনও বাসিন্দাকেই সরকারি আবাস যোজনা প্রকল্পে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়নি বলে ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে। অথচ এলাকার কয়েকজন দোকানদার দেখালেন, সমুদ্রের একেবারে পাড় ঘেঁষে একটার পর একটা বড় বড় হোটেল এবং লজ তৈরির কাজ চলছে। দাদনপাত্রবাড়ে বিশ্ব বাংলার যে পার্ক রয়েছে তার পাশেই দোতলা বাড়ির ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলছিল। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, দেড় মাসেরও কম সময়ে এই বাড়ি তৈরি হয়েছে। আশপাশে সমুদ্রের গা ঘেঁষে কমপক্ষে ৮০-৯০টি হোটেল, লজ গড়ে উঠেছে। প্রশাসনিক অনুমতি নিয়েই তাঁরা ওই সব নির্মাণ করেছেন বলে লজ ও হোটেল মালিকদের দাবি। কিন্তু কোস্টাল রেগুলেশন আইন কার্যকর থাকা সত্ত্বেও কী করে ওই এলাকায় নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হল তা প্রশাসনের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে। এবং সেই প্রশ্নের সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই উঠে এসেছে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মদতের প্রশ্নও।
যদিও ওই পাঁচটি মৌজায় ৪০০ বর্গ মিটার আয়তনের বাড়ি তৈরির জন্য স্থানীয় প্রশাসন অনুমতি দিতে পারবে বলে কোস্টাল রেগুলেটরি কমিশন ইতিমধ্যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। তবে তা শুধু কেবল ওই এলাকার মৎস্যজীবীদের জন্য। এর জন্য ৮৬ জন মৎস্যজীবীকে ঘর তৈরির জন্য আর্থিক সহায়তা প্রকল্পে সহায়তা করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy