— প্রতীকী ছবি।
খড়্গপুর আইআইটিতে চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যু। সূত্রের খবর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হস্টেল থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রের নিথর দেহ উদ্ধার হয়েছে। ২১ বছরের পড়ুয়ার নাম কে কিরণ চন্দ্র। তাঁর বাড়ি তেলেঙ্গানা। কিরণের অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর বাড়িতে দেওয়া হয়েছে। কী ভাবে তাঁর মৃত্যু হল তা এখনও স্পষ্ট নয়। এই ঘটনায় আইআইটি চত্বরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
২০২২-এর অক্টোবরে খড়্গপুর আইআইটিতেই অসমের বাসিন্দা ফাইজ়ান আহমেদ নামে এক পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল। তাঁর দেহও উদ্ধার হয়েছিল আইআইটির হস্টেলের একটি ঘর থেকে। সেই মৃত্যু নিয়ে ব্যাপক জলঘোলা হয়। মামলা পৌঁছয় কলকাতা হাই কোর্টে। তারই মধ্যে এ বছর জুনে তামিলনাড়ুর বাসিন্দা ২২ বছরের সুরিয়া দীপনেরও অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও এক পড়ুয়ার অস্বাভাবিক মৃত্যু হল দেশের অন্যতম সেরা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।
খড়গপুর আইআইটির লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হল থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে তাঁকে মঙ্গলবার রাতে নিয়ে যাওয়া হয় আইআইটি ক্যাম্পাসে বি সি রায় টেকনোলজি হাসপাতালে। কিন্তু তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি। চতুর্থ বর্ষের ছাত্রের বাড়ি তেলেঙ্গানার মেদাক জেলা তুপ্রান গ্রামে। মৃত কিরণের দাদা আইআইটিতেই পড়াশোনা করেন। মৃত্যুর কারণ জানতে মেদিনীপুর মেডিকেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য দেহ পাঠাচ্ছে পুলিশ। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পরে পরিষ্কার হবে মৃত্যুর কারণ।
আইআইটি খড়্গপুর প্রেস বিবৃতি জারি করে দাবি করেছে, মৃত কে কিরণ চন্দ্র লাল বাহাদুর শাস্ত্রী হলের আবাসিক ছিলেন। ১৭ অক্টোবর রাতে তিনি আত্মহননের পথ বেছে নেন। সে দিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত তিনি তাঁর দুই আবাসিক সঙ্গীর সঙ্গে ছিলেন। তার পর দুই সঙ্গী চলে যান। রাত সাড়ে আটটা নাগাদ অন্য আবাসিকরা লক্ষ্য করেন, কিরণের ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করা রয়েছে। দরজা ভেঙে ঢুকে দেখা যায়, তিনি ঝুলছেন। নিরাপত্তারক্ষী এবং আবাসিকরা তাঁকে বিসি রায় টেকনোলজি হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সমস্ত চেষ্টা করার পরে রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ চিকিৎসকেরা কিরণকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুলিশ তদন্ত করছে। প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে মৃত ছাত্রের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। ১৮ অক্টোবর সকালে তাঁর পরিবারের লোকেরা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছন।
রাতেই এই খবর পায় হিজলি ফাঁড়ির পুলিশ। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
মৃত কিরণের বাবা বলেন, “দু’দিন আগে ছেলের সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল। মূলত পড়াশোনা সংক্রান্তই কথা হয়েছিল। প্রজেক্ট নিয়ে কিছুটা মানসিক চাপে ছিল, সেটা ও জানিয়েছিল।” তিনি আরও জানান, তাঁর ছেলেকে প্রফেসর ভালো করে প্রজেক্ট করার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, “পড়াশুনার জন্য পাঠিয়েছিলাম কিন্তু ম্যানেজমেন্টের চাপ সহ্য করতে পারেনি আমার ছলে। ওর মৃত্যুর জন্য আইআইটি কর্তৃপক্ষ দায়ী।” রাত ১২টা নাগাদ ছেলের মৃত্যু সংবাদ পান তিনি।
কিরণের কাকা দশরথ মেগাভাথা বলেন, “গত ২৪ সেপ্টেম্বর কিরণ বাড়ি এসেছিল পেটে পাথরের অপরেশনের জন্য। তার পর, হায়দ্রাবাদ থেকে চলতি মাসের ৪ তারিখ আইআইটি ক্যাম্পাসে ফিরে যায়। পড়াশোনার খুব চাপ ছিল।” বন্ধু সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার প্রজেক্ট জমা দিয়েছিলেন কিরণ। তাতে কিছু ভুল থাকায় বুধবার আবার তাঁকে ঠিক করে প্রজেক্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিরণ যেই ঘরে থাকতেন, সেখানে আরও দু’জন বিটেক-এর চতুর্থ বর্ষের ছাত্র থাকেন। তাঁরা ঘটনার দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ পরীক্ষা দেওয়ার জন্য চলে গিয়েছিলেন। ফাঁকা ঘরে কিরণ একাই ছিলেন। ওই সময় কিরণ গলায় দড়ি দিয়েছে বলে অনুমান। ঘটনার খানিক ক্ষণ পর, জানালার ফাঁক দিয়ে এক বন্ধু দেখতে পেয়ে চিৎকার করেন। তাঁর চিৎকারে বাকিরা ছুটে আসেন এবং উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান কিরণকে। মৃতের দাদা ওই আইআইটির বিটেক-এর পঞ্চম বর্ষের পড়ুয়া। মেঘনাদ সাহা হলে থাকেন তিনি।
হাইকোর্টে মামলা ৩১ অক্টোবর। পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, “আইআইটি ছাত্রের দেহ উদ্ধার হয়েছে। ভিডিয়োগ্রাফির মাধ্যমে ময়না তদন্ত করা হয়েছে। বাড়ির সকলকে খবর দেওয়া হয়েছে, তাঁরাও এসেছেন। তা ছাড়া তাঁর দাদা আইআইটির পড়ুয়া। ইতি মধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy