Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Pithe Puli Sale

মিষ্টির দোকানে দেদার বিক্রি পিঠেপুলির

অর্ধশতক কিংবা তারও আগের ওই ধরনের পুলিপিঠে ক্রমশ অমিল। বাড়ির প্রবীণ মা-ঠাকুমাদের অভিযোগ, এই প্রজন্মের এসব খাবার নাপসন্দ।

পৌষপার্বণ উপলক্ষে পিঠে ও আলপনা। চাঁদপুরে।

পৌষপার্বণ উপলক্ষে পিঠে ও আলপনা। চাঁদপুরে। নিজস্ব চিত্র।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 
নদিয়া শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৪০
Share: Save:

গরম ক্ষীরপুলি সাজানো সরার মধ্যে বাটিতে রাখা হত বাটা চন্দন। এর পর সরার মুখ ভাল করে ময়দা দিয়ে আটকে সারা রাত রেখে দেওয়া। রাতভর পুলির গরম ভাপে মিশে যেত চন্দন সৌরভ। পৌষসংক্রান্তির সকালে ঢাকনা খুললেই সারা বাড়ি ম-ম করে উঠত চন্দনপুলির গন্ধে। অবিভক্ত বাংলার ঢাকা, বরিশাল, যশোরের গ্রামে গ্রামে সংক্রান্তির সকাল ভরে উঠত পিঠেপুলির গন্ধে।

এখন ফি-বছর মকর সংক্রান্তি ফিরে এলেও সেই চন্দনপুলির সকাল আর আসে না। ও পার বাংলার প্রত্যন্ত গ্রাম মাধবডিহি, কামরাঙির চর, বাবুরহাট, চরমাগনির অনেকেই বহুকাল হল নদিয়ার বাসিন্দা। কেউ মাজদিয়ার পুঁটিমারি, তো কেউ নবদ্বীপের প্রাচীন মায়াপুর। পৌষের শেষ সকালের স্মৃতি তাঁদের কাছে অন্যরকম। সংক্রান্তির আগের দিন কেটে আনা জমির ধানের গুচ্ছ পুজো দিয়ে শুরু হত পার্বণ। ওই ধানের গোছাকে কোনও কোনও অঞ্চলে বলা হত আওনি-বাওনি। পুজোর পর সারা রাত চলত পৌষ আগলানো। আল্পনা এঁকে বাড়ির উঠোন থেকে কিছুটা দূরে, গোবর আর চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি পুতুল পুজো হত। রাত জাগতেন গ্রামের মেয়ে-বৌ। রাতভর চলত পিঠেপুলি তৈরি। সব বাড়িতেই কিছু না কিছু হত। হঠাৎ দেখলে মনে হত, গোটা গ্রামই যেন একটা রান্নাঘর। সংক্রান্তির সকালের কনকনে ঠান্ডায় গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী অথবা পুকুরে আওনি-বাওনি বিসর্জন দিয়ে, স্নান সেরে শুরু হত পিঠেপুলি খাওয়ার পর্ব।

অর্ধশতক কিংবা তারও আগের ওই ধরনের পুলিপিঠে ক্রমশ অমিল। বাড়ির প্রবীণ মা-ঠাকুমাদের অভিযোগ, এই প্রজন্মের এসব খাবার নাপসন্দ। অধিকাংশ নবীনা এসবের মধ্যে নেই। গ্রামাঞ্চলে পৌষপার্বণে এখন আড়ম্বর না হলেও বন্ধ হয়ে যায়নি। কিন্তু শহরে পুরো বিষয়টাই বাড়ির হেঁসেল থেকে চলে গিয়েছে মিষ্টির দোকানের শো-কেসে। ভাজা পিঠে, রসবড়া, গোকুলপিঠে, চন্দ্রপুলি, পাটিসাপটা— কী নেই সেখানে?

বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, শীতের এই মরসুমি পিঠেপুলির চাহিদার কাছে হালে পানি পাচ্ছে না চিরাচরিত রসগোল্লা, সন্দেশ, চমচম, পান্তুয়া। বিশেষ করে পৌষ সংক্রান্তির সময়ে রকমারি ঘরোয়া মিষ্টির দাপটে রীতিমতো কোণঠাসা চেনা মিষ্টির দল। পিঠেপুলি, পাটিসাপটার ভিড়ে মিষ্টির দোকানে শো-কেসে রসগোল্লা, সন্দেশ পিছু হটেছে। নলেন গুড়ের সন্দেশ, রসগোল্লা ছাড়া অন্য মিষ্টির বিক্রি অর্ধেকে নেমে আসে। এমনটাই জানাচ্ছেন বিভিন্ন মিষ্টির দোকানের মালিকেরা। নবদ্বীপ-কৃষ্ণনগর-সহ জেলার বিভিন্ন দোকানে চুটিয়ে বিক্রি হচ্ছে পিঠেপুলি।

দাম অবশ্য খুব কম নয়। নবদ্বীপে রসবড়া বিক্রি হচ্ছে এক একটা ছয় টাকা, ভাজাপুলি একশো গ্রাম ২০ টাকা, ক্ষীরপুলি প্রতিটি ১৫ টাকা। কৃষ্ণনগরে আবার ভাজা পুলি পিস হিসাবে বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ১৫ টাকা, গোকুল পিঠে ২০ টাকা, দুধপুলি ১৫ টাকা, মালপোয়া ১২ টাকা, পাটিসাপটা ২০ টাকা। মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী তাপস দাস বলেন, “পাটিসাপটা সরাসরি ভেজে বিক্রি করা হচ্ছে। পিঠেপুলির চাহিদার কাছে অন্য মিষ্টির বিক্রি কম। এ সব ছাড়া কেবল নলেনগুড়ের রসগোল্লা আর সন্দেশ বিক্রি হচ্ছে।”

মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের কথায়, এই ধরনের মিষ্টি ক্রেতারা এই দিনে বেশি করে পিঠেপুলি কিনতে চান। চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিক্রেতারাও পিঠেপুলির ওপরেই বেশি জোর দিচ্ছেন। রসগোল্লা, সন্দেশ তো বারো মাসই আছে। কিন্তু শীতকাল চলে গেলে তো আর পিঠে খাওয়া যাবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Nadia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy