নেই ব্যস্ততা। রামনগরের একটি সোনার গয়নার কারখানা। নিজস্ব চিত্র
প্রথম ধাক্কাটা এসেছিল তিন বছর আগে নোটবন্দির সময়। ২০১৬ সালে ৮ নভেম্বর ৫০০ ও হাজার টাকা নোট বাতিলের জেরে সোনার কেনায় ধাক্কা লাগে। সেই ধাক্কা সামলানোর আগেই দ্বিতীয় ধাক্কা আসে বছর দুয়েক আগে জিএসটি চালুর পর। সোনার গয়না বিক্রির উপর ১ শতাংশ বিক্রিয় করের পরিবর্তে বর্তমানে ৩ শতাংশ হারে জিএসটি নেওয়া হচ্ছে। আর তৃতীয় ধাক্কা, চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সোনার দাম প্রায় ১০ হাজার টাকার বেশি বৃদ্ধি।
যার জেরে দুর্গাপুজোর পর ধনতেরাসে এ বার হাতে তেমন কাজ নেই অধিকাংশ সোনার কারিগরের। কথিত আছে, এই সময় গৃহস্থ সোনা-রুপো বা ধাতু কিনলে ধনলক্ষ্মী তার ঘরে ঠাঁই নেন। ধন সমৃদ্ধি ঘটে সেই পরিবারে। কিন্তু ধনলক্ষ্মীকে ঘরে বেঁধে রাখার মরসুমেও মাথায় হাত পড়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদর তমলুক শহর সহ কাঁথি, রামনগর, হলদিয়া এলাকার সোনার গয়না তৈরির কারিগর বা স্বর্ণশিল্পীদের।
কলকাতার বৌবাজারের মতো তমলুক শহরের সোনাপট্টি হল বেনেপুকুর পাড়া। ছোট-বড় সোনার দোকান ও গয়না তৈরির একাধিক কারখানা রয়েছে এখানে। কাজ করেন প্রায় ২০০ জনেরও বেশি দক্ষ কারিগর। শিক্ষানবীসের সংখ্যা প্রায় ৫০০। কিন্তু উৎসবের ভরা মরসুমেও অধিকাংশ কারিগরের হাতে কাজে নেই জানা গেল এলাকায় ঘুরে। বাজার মন্দা দেখে কারিগরদের অনেকে সোনার কাজ ছেড়ে টোটো চালক বা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। নীলকান্ত সামন্ত, কার্তিক দাস নামে দুই কারিগর বলেন, ‘‘গত তিনবছর ধরে সোনার গয়না তৈরির কাজ কমছিল। তবে গতবছরও ধনতেরাসের সময় যতটা কাজ ছিল এবার তারও অর্ধেক। কাজ না থাকলে মজুরি মিলবে না। তাই আয়ও তেমন হচ্ছে না। এ ভাবে কতদিন কাটবে বুঝতে পারছি না।’’
কাঁথি কিংবা ও রামনগর, শিল্প শহর হলদিয়ার ছবিও একই। রামনগর বাজারে প্রায় ৪০ জন সোনার কারিগর রয়েছেন। তাঁদের সহযোগী হিসাবে রয়েছেন প্রায় ৫০ জন। দোকানে ঘুরে জানা গেল, ধনতেরাসের গয়না তৈরির অর্ডার নেই বললেই চলে। এক কারিগর রাজা কামিল্যা বলেন, ‘‘বছর দুয়েক হল সোনার গয়নার চাহিদা কমেছে। আর এখন সোনার দাম প্রায় ৪০ হাজার ছুঁতে চলেছে। পরিচিতি দোকানদারদের ধরে প্রায় ৩ লক্ষ টাকার সোনার কাজের অর্ডার পেয়েছি।’’ কাঁথি সুপার মার্কেটের প্রায় ১০০ জন সোনার কারিগরের হাতেও তেমন কাজ নেই। এক কারিগর বিজয় দাস বলেন, ‘‘সোনার দাম এতটাই বেড়েছে যে ধনতেরাস উৎসবের আঁচ এখনও টের পেলাম না।’’
হলদিয়ার সবচেয়ে বেশি সোনার দোকান দুর্গাচকে। সেখানেও মুখ ভার স্বর্ণ ব্যবসায়ী থেকে স্বর্ণ শিল্পীদের। তবে কেউ কেউ জানালেন, সোনার অত্যধিক দামের জন্য অনেকে রুপোর দিকে ঝুঁকেছেন। কিন্তু ধরতেরাসে সোনা-রুপোর সার্বিক ব্যবসা যে আগের বছরের তুলনায় মন্দা তা একবাক্যে মেনে নিয়েছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy