মণ্ডপ ডুবেছে জলে। তার মধ্যেই উঁচু করে বাঁশ বেঁধে প্রতিমা এনে পুজোর প্রস্তুতি। ভগবানপুরে। নিজস্ব চিত্র।
প্রথমে ‘ইয়াস’, তারপর নিম্নচাপের জেরে ভারী বৃষ্টিতে জলের চাপে কেলেঘাই নদীর বাঁধ ভাঙা—জোড়া ধাক্কায় বেসামাল পুজো।
মাস পাচেক আগে ইয়াসের পরও বিভিন্ন পুজোর উদ্যোক্তারা মাঠে নেমে পড়েছিলেন। কিন্তু সপ্তাহ দু’য়েক আগের বন্যা ভাসিয়ে দিয়েছে ঘর। ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে দেবীবরণের ইচ্ছাটুকুও। ভগবানপুর-১ ব্লকের ৮টি পঞ্চায়েতের সবকটি, ভগবানপুর-২ ব্লকের তিনটি পঞ্চায়েত ও পটাশপুর -১ ব্লকের পাঁচটি ও পটাশপুর-২ ব্লকের বিরাট এলাকা জুড়ে বোধনের আগে বিসর্জনের সুর। ধীরে ধীরে জল নামতে থাকায় অনেক পুজোর উদ্যোক্তারাই জানিয়েছেন পুজো বন্ধ হচ্ছে না। তবে আড়ম্বর নেই কোথাও। জমা জল সরে যাওয়ার সময় এই সব বানভাসি মানুষগুলোর উৎসব ঘিরে আনন্দের রেশটুকুও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ভগবানপুরের চড়াবাড়ে ৭৫ বছরের পুজো এলাকার অন্যতম প্রাচীন বলে পরিচিত। স্থায়ী মন্দির রয়েছে। কিন্তু এখনও তা কয়েক ফুট জলে ডুবে। মন্দিরের সামনে জল ছাড়িয়ে উঁচুতে বাঁশ দিয়ে পুজোর মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে। কোমর জল ভেঙে শিল্পীর বাড়ি থেকে এখনও রঙের প্রলেপ না পড়া প্রতিমা নিয়ে আসা হয়েছে পঞ্চমীতে। কমিটির তরফে মানস কুমার প্রধান বলেন, ‘‘কিছু করার নেই। সর্বজনীন পুজো। ৭৫ বছরের পুরনো পুজো যাতে বন্ধ না করে তাই শুধুমাত্র রীতি মেনে পুজোটুকু করা হবে।’’
পটাশপুর-২ ব্লকের টিকরাপাড়া রবীন্দ্রনাথ ইউনাইটেড ক্লাবের পুজো মণ্ডপের কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু কেলেঘাই নদীর বাঁধ ভেঙে সেখানে এখন কোমরজল। বাধ্য হয়ে পুজো সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে প্রতাপদিঘিতে। ক্লাব সম্পাদক মানস রায় বলেন, ‘‘কোনও পরিস্থিতিতে আমরা হার মানতে রাজি নয়। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে যাতে সকলে শামিল হতে পারেন সে জন্য পুজোমণ্ডপ প্রতাপদিঘিতে একটি ধানকলের সামনে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তবে এই পরিস্থিতিতে কতজন প্রতিমা দর্শনে আসবেন সেটাই চিন্তার বিষয়।’’ চার শতকের পুরনো পটাশপুরের বারোচৌকার রায়চৌধুরী পরিবারের দুর্গাপুজো। স্থায়ী মন্দিরের সামনে মণ্ডপ বেঁধে পুজো হত। এবার মন্দিরের সামনে জল এখনও কোমর সমান। তাই মণ্ডপ হয়নি। মন্দিরেই কোনওরকমে পুজো করছেন রায়চৌধুরী পরিবার। পরিবারের সদস্য শ্রীপতি রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘মন্দির এবং সংলগ্ন এলাকায় জলের স্রোত বইছে। আমাদের তিন-চারশো বছরের পারিবারিক পুজো। তাই নিয়ম মেনে কোনওরকম মন্দিরে পুজো করব।’’
ভগবানপুরে পুজোর সংখ্যা ৩৫টি। সিংহভাগ পুজো কমিটির পৃষ্ঠপোষক হিসাবে আছেন এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক অর্ধেন্দু মাইতি। তিনি বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর মধ্যেই বাঙালি জীবনের আনন্দ খুঁজে নেয়। কিন্তু বন্যার ধাক্কায় এ বার ভগবানপুর বিপর্যস্ত। প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াইই কী ভাবেই বা সম্ভব! তাই নমো নমো করে পুজো হবে। কোনও পুজোই বন্ধ হচ্ছে না।’’
শুধু সর্বজনীন নয়। বন্যায় বিপাকে পারিবারিক পুজোর উদ্যোক্তারাও। অনেক ক্ষেত্রেই অর্থের সমস্যা সে ভাবে না হলেও লোকবলের অভাব। বানভাসী এলাকায় পুজোর আয়োজনে এখন সেটাই বড় বাধা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy