প্রশান্ত কিশোর। —ফাইল চিত্র।
পুরভোটে তৃণমূলের প্রার্থী বাছতে ভোট কুশলী পিকে (প্রশান্ত কিশোর)-র টিমের সমীক্ষা প্রায় শেষের মুখে বলে শাসকদলেরই এক সূত্রে খবর। ইতিমধ্যে না কি সম্ভাব্য একটি প্রার্থী তালিকা তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে পৌঁছনো হয়েছে। কোনও ওয়ার্ডে প্রার্থী হিসেবে একজনের নামই প্রস্তাব করা হয়েছে। আবার কোনও কোনও ওয়ার্ডে দু’জন, এমনকি তিনজনের নামও আছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অবশ্য নেবেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বই।
২৫ ওয়ার্ডের মেদিনীপুর পুরসভায় তৃণমূলের কাউন্সিলর ছিল ১৯ জন। এর মধ্যে ১৩ জন গত পুরভোটে তৃণমূলের প্রতীকেই জিতেছিলেন। বাকি ৬ জন অন্য দল থেকে পরে তৃণমূলে এসেছেন। ওই ১৯ জনের মধ্যে ২ জন মারা গিয়েছেন। শহরে এখন তৃণমূলের বিদায়ী কাউন্সিলর সংখ্যা ১৭। জানা যাচ্ছে, এঁদের মধ্যে ১২ জনেরই টিকিট অনিশ্চিত! বিদায়ী পুরবোর্ডের শীর্ষ পাঁচ পদাধিকারীর (পুর-পারিষদ সমেত) বেশিরভাগেরই টিকিট নিশ্চিত নয়।
টিম পিকে-র সমীক্ষার ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি তৃণমূলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা। তবে ওই টিম যে শহরে সমীক্ষায় নেমেছে, তা মেনেছেন তিনি। আর প্রার্থী তালিকা নিয়ে সুজয়ের বক্তব্য, ‘‘দল তালিকা চূড়ান্ত করবে এবং ঘোষণা করবে। দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’’ দলের এক সূত্রে খবর, ২৫টি ওয়ার্ডে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে রয়েছেন সব মিলিয়ে ৪২ জন। এই ৪২ জনের নামই না কি ওই সমীক্ষায় তালিকাভুক্ত হয়েছে। জানা যাচ্ছে, শহরের ১, ৯, ১০, ১২, ১৪, ১৭, ১৮, ১৯, ২১, ২৫- এই ১০টি ওয়ার্ডে তৃণমূলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে না কি একজন করে নেতা-কর্মীর নামই প্রস্তাব করা হয়েছে। দু’টি করে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ১৩, ১৫, ১৬, ২৩, ২৪- এই ১২টি ওয়ার্ডের ক্ষেত্রে। আর তিনটি করে নাম প্রস্তাব করা হয়েছে ১১, ২০, ২২— এই ৩টি ওয়ার্ডে। দলের এক সূত্রে খবর, ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে পারেন সৌমেন খান। তিনি পুর-প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান। ১৯ নম্বরে প্রার্থী হতে পারেন বিশ্বনাথ পান্ডব। তিনি দলের শহর সভাপতি। গত পুরভোটে এই ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত ছিল। জিতেছিলেন বিশ্বনাথের স্ত্রী লিপিকা।
জানা যাচ্ছে, ১ নম্বর ওয়ার্ডে ফের প্রার্থী হতে পারেন অনিমা সাহা। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে ফের প্রার্থী হতে পারেন টোটন সাসপিল্লী। বিদায়ী পুরবোর্ডের পুরপ্রধান প্রণব বসু প্রয়াত হয়েছেন। উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাসের ওয়ার্ড মহিলা সংরক্ষিত হয়েছে। তিনি প্রার্থী হচ্ছেন না। তিন পুর-পরিষদের (সিআইসি) মধ্যে পূর্তের দায়িত্বে ছিলেন অনিল দলবেরা, জঞ্জালে শিপ্রা মণ্ডল, জলে মৌ রায়। অনিলের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে প্রার্থী হতে পারেন সৌরভ বসু। সৌরভ দলের ওয়ার্ড সভাপতি। আলো বিভাগের কাজকর্ম দেখভাল করতেন শ্যামল ভকত। তাঁর ওয়ার্ড মহিলা সংরক্ষিত হয়েছে। অন্য কোথাও তাঁর প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা কার্যত নেই। ‘গ্রিন সিটি মিশন’ প্রকল্পের কাজকর্ম দেখভাল করতেন নির্মাল্য চক্রবর্তী। তাঁর ওয়ার্ডও মহিলা সংরক্ষিত হয়েছে। তাঁরও অন্য কোথাও প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা কম। নিজের ওয়ার্ডে এই বিদায়ী কাউন্সিলরদের কোনও পরিজনেদের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাও না কি খুবই কম। দলের এক সূত্রে খবর, সমীক্ষায় নেমে টিম পিকে-র উপলব্ধি, শহরের দু’টি ওয়ার্ডে তৃণমূল সাংগঠনিকভাবে খুবই দুর্বল। ওই দু’টি ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ‘সুপরিচিত’ মুখই না কি নেই। আরও দু’টি ওয়ার্ডে না কি ‘উপযুক্ত’ প্রার্থী মেলেনি এখনও পর্যন্ত। টিমের আরও পর্যবেক্ষণ, শহরের একটি ওয়ার্ডে তীব্র গোষ্ঠীকোন্দলে জর্জরিত তৃণমূল।
প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে শামিল মানস ভুঁইয়ার অনুগামী শহরের এক নেতা। তিনি প্রার্থী হবেনই, নিশ্চয়তা নেই। তবে তাঁর নাম ভাসছে। একমাত্র না কি এই নেতার নামই দু’টি ওয়ার্ডের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছে। শহরে ঘুরে তৃণমূলের কোন কোন নেতার স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ও জনসংযোগ রয়েছে, কোন কোন নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, তোলাবাজির অভিযোগ নেই, সে সব খোঁজখবর নিয়েছে টিম পিকে। তৃণমূলের এক জেলা নেতা মানছেন, ‘‘এ বার কিন্তু এলাকায় প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা, জয়ের সম্ভাবনা এবং ভাবমূর্তিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।’’ তিনি জুড়ছেন, ‘‘সেই কারণেই প্রার্থী তালিকায় বেশ কিছু নতুন মুখ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।’’
পিকে-র ‘প্রেসক্রিপশন’ মেনে ১২জন বিদায়ী কাউন্সিলরের টিকিট অনিশ্চিত হলে দলের অন্দরে ঝড়ের পূর্বাভাসও মিলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy