নীড়হারা পাখির ছানারা। কালিকালি গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
দুটি মেহগনি গাছেই ছোট্ট বাসায় কচিকাঁচাদের নিয়ে থাকতে শুরু করেছিল ওরা। কিন্তু তা বোধহয় সহ্য হল না কিছু মানুষের। বেচারা পক্ষীকূলের জন্য তো নির্দিষ্ট শৌচালয় নেই। তাই তাদের ত্যাগ করা বিষ্ঠায় পথচলতি মানুষদের বড়ই অসুবিধা হচ্ছিল। এমনটাই অভিযোগ। আর তাই খুব সহজেই কোপ পড়ল গাছে। ডালপালা গেল কাটা। কচিকাঁচাদের নিয়ে নীড়হারা হল পক্ষীকূল। মানুষের অসুবিধা করার মাসুল তাদের দিতে হল নিজের সন্তানদের হারিয়ে। চণ্ডীপুরের কলিকাখালি গ্রামে গাছ কেটে পাখিদের এ ভাবে আশ্রয়হীন করায় সরব হয়েছে পরিবেশ ও প্রকৃতিপ্রেমী বিভিন্ন সংগঠন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, কালিকাখালি গ্রামে চিতিৎসক সুরপতি প্রধানের বাড়িতে দু’টি মেহগনি গাছে আমপানের পর থেকে আশ্রয় নিয়েছিল বক, পানকৌড়ির দল। মূলত এই সময় গাছ ভর্তি পাখির বাসায় ছিল একাধিক ছানা। কারণ পরিবেশপ্রমীদের মতে এটা পাখিদের প্রজনন সময়।
স্থানীয় পরিবেশ কর্মী স্মরণিকা পড়ুয়া ও দেবগোপাল মণ্ডলের অভিযোগ, মোট এগারটি পাখির বাচ্চা উদ্ধার করে এনে রাখা হয়েছে। খবর দেওয়া হয়েছে বন দফতরে । দেবগোপাল জানান, এর আগেও ওই চিকিৎসকের বাড়িতে গাছ দু’টি কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেই সময় চিকিৎসককে অনুরোধ করা হয়, যেহেতু বাসায় ডিম রয়েছে গাছ না কাটতে। মাস দুয়েক সময়ও চাওয়া হয়েছিল। সেই সময় গাছ কাটা বন্ধ রাখেন ওই চিকিৎসক। কিন্তু তার পর কুড়ি দিনের মাথায় কোপ পড়ল গাছে। নীড় হারা হল পাখির দল। গাছ কাটার ফলে বাসা থেকে পড়ে বহু পাখির বাচ্চা মারা গিয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। পরিবেশ কর্মী স্মরণিকা বলেন, ‘‘স্থানীয় শিক্ষিকা শিল্পা জানা বক ও পানকৌড়ির এগারোটি বাচ্চা উদ্ধার করেছেন। কিন্তু এত পাখির বাচ্চা আমরা কী ভাবে বাঁচাব?
গাছ কাটা নিয়ে সুরপতি প্রধানের সাফাই, ‘‘আগেই গাছ দুটি কাটার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গাছে পাখির বাসা থাকায় কাটা হয়নি। তবে বাচ্চারা বড় হয়ে যাওয়ার পর গাছ কাটা হয়েছে। আমার বাড়ির মধ্যে গাছ থাকলেও রাস্তার ধারে পথচারিদের গায়ে বিষ্ঠা পড়ায় তাঁরা অভিযোগ করছিলেন। তাই গাছ কাটা হয়। তবে বেশিরভাগ বাচ্চা বড় হয়ে উড়ে গিয়েছে।’’
পূর্ব মেদিনীপুরের ডিএফও অনুপম খান জানান, বন দফতর পাখির বাচ্চাগুলি উদ্ধারের ব্যবস্থা করবে। তবে বাচ্চাগুলি ছোট হওয়ায় সেগুলিকে বাঁচানোর ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়েছে। পাখির বাচ্চা-সহ গাছ কাটা উচিত হয়নি।’’
প্রসঙ্গত, কোলাঘাট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র চত্বরে এভাবে পাখির বাসা-সহ একাধিক গাছ কাটায় অভিযোগের ভিত্তিতে বন দফতর ব্যবস্থা নিয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে আর্থিক জরিমানাও করা হয়। মহিষাদল রাজ কলেজের জীববিদ্যার অধ্যাপক শুভময় দাস জানান, ব্রিডিং সিজনে এ ভাবে বাসা সহ গাছ কাটা অমানবিক কাজ। বাস্তুতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকারকও। একই ভাবে কয়েক বছর আগে হলদিয়া বন্দর শ’য়ে শ’য়ে পাখির বাসা ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় প্রতিবাদে সরব হয়েছিলেন পরিবেশ কর্মীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy