Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

‘ভুয়ো’ ভূত ডিজিটালেও, বাতিল হচ্ছে ১৮ হাজার রেশন কার্ড

অনিয়ম আটকাতে ডিজিটাল করা হয়েছিল রেশনকার্ড। সমস্যা মিটল কি?রেশন ডিলারদের মাধ্যমে খাদ্যসামগ্রী বণ্টনে অনিয়ম রুখতে কয়েক বছর আগে বাসিন্দাদের জন্য ‘ডিজিটাল’ রেশনকার্ডের ব্যবস্থা চালু হয়।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:১১
Share: Save:

ভুয়ো রেশনকার্ডে সরকারিভাবে বরাদ্দ বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী তুলে নেওয়া হচ্ছে, এমন অভিযোগ হামেশাই শোনা যেত কয়েক বছর আগেও। পরিবারের মৃত ব্যক্তির রেশনকার্ড প্রশাসনের কাছে জমা না দিয়ে সেই কার্ড ব্যবহার করে খাদ্যসামগ্রী তোলার অভিযোগও ছিল। সরকারি খাদ্য সামগ্রী বণ্টনে এমন অনিয়ম ঘিরে রাজনৈতিক চাপান-উতোরও কম ছিল না।

রেশন ডিলারদের মাধ্যমে খাদ্যসামগ্রী বণ্টনে অনিয়ম রুখতে কয়েক বছর আগে বাসিন্দাদের জন্য ‘ডিজিটাল’ রেশনকার্ডের ব্যবস্থা চালু হয়। খাদ্য সুরক্ষা আইন অনুযায়ী দেশজুড়ে গরিব বাসিন্দাদের স্বল্পমূল্যে খাদ্যসামগ্রী বণ্টন ব্যবস্থা চালু করা হয়। এরাজ্যে কেন্দ্রীয় খাদ্যসুরক্ষা যোজনা অনুযায়ী রেশন গ্রাহক ছাড়াও ওই যোজনার বাইরে থাকা বাসিন্দাদের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা চালু করে আলাদা রেশনকার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। এ ভাবে অধিকাংশ বাসিন্দাই রেশন ব্যবস্থার আওতায় এসেছেন। কিন্তু ডিজিটাল রেশনকার্ড চালুর পরেও একাংশ বাসিন্দার নামে একাধিক রেশনকার্ড থাকার অভিযোগ উঠেছে। ওই সব গ্রাহকদের অনেকেই এর মাধ্যমে অতিরিক্ত পরিমাণ খাদ্য সামগ্রী তুলছেন বলে অভিযোগ।

একই ব্যক্তির নামে দুই বা তার বেশি রেশনকার্ড রয়েছে এমন গ্রাহক খুঁজে বের করতে সম্প্রতি রাজ্য খাদ্য দফতর জেলা খাদ্য দফতরগুলিকে নির্দেশ দেয়। এরপরেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলা খাদ্য দফতরের তরফে প্রতিটি ব্লকে রেশন গ্রাহকদের তথ্য খতিয়ে দেখে এই ধরনের গ্রাহক চিহ্নিতকরণ শুরু হয়। তার ফলেই জেলায় কয়েক হাজার ভুয়ো ডিজিটাল রেশনকার্ড চিহ্নিত হয়েছে বলে জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে খবর, জেলায় বর্তমানে প্রায় ৫৫ লক্ষ রেশনকার্ড রয়েছে। প্রতিটি ব্লকে গ্রাহকদের তথ্য যাচাই করে একই ব্যক্তির একাধিক রেশনকার্ড রয়েছে এমন ১৮ হাজার রেশনকার্ড চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলা খাদ্য নিয়ামক সৈকত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এক ব্যক্তির একাধিক রেশনকার্ড রয়েছে, জেলায় এমন ১৮ হাজার কার্ড চিহ্নিত হয়েছে। এ বিষয়ে রাজ্য খাদ্য দফতরের কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে।’’

জেলায় ভুয়ো রেশন কার্ড উদ্ধার নিয়ে শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জয়দেব বর্মন বলেন, ‘‘আমাদের ব্লকে এরকম ৭৫৮টি রেশনকার্ড চিহ্নিত করা হয়েছে। এবিষয়ে জেলা খাদ্য দফতরে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। ওই সব রেশনকার্ড বাতিল করা হবে বলে আশা করছি।’’

রেশন কার্ড নিয়ে অনিয়ম রুখতেই ডিজিটাল রেশন কার্ড চালুর ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু তার পরেও অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় বিপুল খরচে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করে কী লাভ হল, সেই প্রশ্ন উঠেছে। কী ভাবে নয়া ব্যবস্থায় এক ব্যক্তি একাধিক ডিজিটাল রেশনকার্ড পেল সেই প্রশ্নও উঠেছে।

জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে খবর, গ্রাহকদের ডিজিটাল রেশনকার্ড পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট আবেদনপত্র পূরণ করে ব্লক খাদ্য দফতরে জমা দিতে হয়। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সময়ে গ্রাহকদের একটি নম্বর দেওয়া হয়। যাতে ওই নম্বর ব্যবহার করে তিনি তাঁর রেশনকার্ড তৈরি হয়েছে কিনা, খাদ্য দফতরের ওয়েবসাইটে খোঁজ নিতে পারেন। কিন্তু গ্রাহকদের একাংশ রেশনকার্ড হাতে পেতে দেরি হওয়ায় তাঁরা ফের আবেদন করেন। ফলে একই ব্যক্তির নামে একাধিক রেশনকার্ড তৈরি হয়েছে। পরবর্তী সময়ে যা ওই ব্যক্তির এসে গিয়েছে। তা ছাড়া, আগে গ্রাহকদের রেশনকার্ড তৈরি হলে তা আগে ব্লক খাদ্য দফতর থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির মাধ্যমে বাসিন্দাদের বিলি করা হত। কিছু ক্ষেত্রে ওই রেশনকার্ড গ্রাহকদের দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। ফলে তাঁরা রেশনকার্ড হাতে না পেয়ে দ্বিতীয়বার আবেদন করায় রেশনকার্ড পেয়েছেন। যদিও তাঁর নামে আগেই রেশনকার্ড তৈরি হয়ে গিয়েছে।

তবে ভুয়ো রেশন কার্ডের জন্যও বাড়তি পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী বরাদ্দ রুখতে অবিলম্বের ওইসব রেশনকার্ড চিহ্নিত করে বাতিলের ব্যবস্থা হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Food Department Digital Ration Card
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy