প্রতীকী চিত্র।
চাষ জমি রক্ষায় যে নন্দীগ্রাম এক সময় উত্তাল হয়েছিল, সেই নন্দীগ্রামেই চাষের ক্ষতির আশঙ্কায় প্রশাসনিক আধিকারিকের কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করলেন পাঁচ জন কৃষক। তাঁদের অভিযোগ, সেচের জন্য শ্যালো পাম্প দিয়ে জল তোলার অনুমতি দিচ্ছে না পঞ্চায়েত। এ ভাবে চললে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন তাঁরা।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের বিরুলিয়া পঞ্চায়েতের বাসিন্দা মৃণালকান্তি ভট্টাচার্য, তপনকুমার মান্না, শক্তিপদ মাইতি, মিলন কামিল্যা ও প্রদীপ পাল সম্প্রতি স্থানীয় বিডিওর কাছে অভিযোগ করেছেন। তাঁরা জানান, বুলবুলের দাপটে এ বছর চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এদিকে, বিরুলিয়ায় নতুন করে বোরো চাষ করতে পঞ্চায়েত ভূগর্ভস্থ জল তোলার অনুমতি দিচ্ছে না বলে অভিযোগ। চিঠিতে কৃষকদের দাবি, বোরো চাষে মিনি পাম্পের ব্যবহার বন্ধ করলে তাঁদের পরিবার নিয়ে আত্মহত্যা করা ছাড়া গতি থাকবে না। পরিস্থিতি বদলাতে না পারলে তাঁদের যাতে স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি দেওয়া হয়, প্রশাসনের কাছে সেই আর্জিও জানিয়েছেন ওই পাঁচ কৃষক। পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর বিধানসভা এলাকা নন্দীগ্রামে চাষিদের স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদনে শোরগোল পড়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মডেল পঞ্চায়েত গড়ার লক্ষ্যে ভূগর্ভস্থ জল তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বিরুলিয়া পঞ্চায়েতের তরফে। যদিও ব্লক প্রশাসন জানাচ্ছে, তাদের তরফে এ রকম কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। নন্দীগ্রাম-২ এর বিডিও সুরজিৎ রায় বলেন, ‘‘ব্লক প্রশাসন কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। পঞ্চায়েতের ব্যাপারে মন্তব্য করব না।’’
চাষি-কথা
আবেদন কাকে: নন্দীগ্রাম-২ এর বিডিওকে কবে: ৪ ডিসেম্বর কতজন কৃষক: ৫ জন অভিযোগ: পড়শি আমদাবাদ-১ এবং ২ পঞ্চায়েতে শ্যালো দিয়ে ভূগর্ভস্থ জল তুলতে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বিরুলিয়ায় তাতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আবেদনকারী এক কৃষক প্রদীপ শুক্রবার বলেন, ‘‘অন্য বছর শ্যালোর জলেই চাষ করেছি। কিন্তু এ বছর পঞ্চায়েতের হঠাৎ এ রকম নির্দেশিকায় অসুবিধায় পড়তে হয়েছে। অন্যের জমিতে চাষ করে সংসার চলে। জলের সমস্যার জন্য সেই চাষও বন্ধ। মৃত্যু ছাড়া আর উপায় নেই।’’ আর এক আবেদনকারী মৃণালকান্তির কথায়, ‘‘পাশের আমদাবাদ-১ এবং আমদাবাদ-২ পঞ্চায়েতে বোরো চাষের জন্য শ্যালো পাম্প দিয়ে ভূগর্ভস্থ জল তোলার অনুমতি দিয়েছে। অথচ বিরুলিয়া পঞ্চায়েত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। জলের অভাবে এখানে বোরো ধান চাষ করা যাচ্ছে না। এভাবে চললে পরিবার নিয়ে দু-দিন পরেই আমাদের মরতে হবে। তাই আগে থেকেই আবেদন করে রাখলাম।’’
হঠাৎ করে এমন নির্দেশ কেন? বিরুলিয়া পঞ্চায়েতের প্রধান সুকেশ মান্নার জবাব, ‘‘ভূগর্ভস্থ জলের স্তর যাতে কম না যায়, সে জন্য জল তোলার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।’’ কিন্তু তা হলে চাষিরা চাষ করবেন কী করে? এর ‘সহজ সমাধান’ বাতলেছেন গ্রাম প্রধান। তাঁর পরামর্শ, ‘‘রবি শস্য চাষে জল কম লাগে। তাই কৃষকদের বলেছি রবি শস্য চাষ করতে। আর এমনিতেই রাজ্য সরকার দু’টাকা কিলোগ্রামে চাল দিচ্ছে। বর্তমানে ধানের চাহিদা থেকে জোগানও বেশি হয়ে গিয়েছে। তাই ধান উৎপাদন বন্ধ করে দিয়ে অন্য কিছু চাষ করা ভাল!’’
পঞ্চায়েত প্রধানের পরামর্শ শুনে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। দলের জেলা (তমলুক) সম্পাদক প্রলয় পাল বলেন, ‘‘দু-টাকা কিলোগ্রাম চালের অজুহাতে ধান চাষ বন্ধ করতে হবে! এ আবার কী আজব কথা! তৃণমূল নেতাদের মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy