প্রতীকী ছবি।
স্মারকলিপি জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে পঞ্চায়েত অফিসের সামনে বিজেপির মণ্ডল সভাপতি-সহ কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূল বিধায়কের ভাই তথা সিমুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের বিরুদ্ধে। গুরুতর জখম বিজেপি নেতাদের তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বুধবার বিকেলে ভগবানপুর থানার সিমুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ঘটনা। ওই রাতেই বিধায়কের ভাই-সহ কয়েকজন তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে বিজেপি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, তৃণমূল পরিচালিত সিমুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে বিরোধীদের সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার প্রতিবাদে এবং আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সরকারি সাহায্য-সহ দশ দফা দাবিতে বুধবার বিজেপির তরফে পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। স্মারকলিপি জমা দেওয়ার আগে গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসের সামনে জড়ো হয়েছিলেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। বিজেপির অভিযোগ, তাদের কর্মসূচির পাল্টা তৃণমূলের কর্মীরা ও জমায়েত করে এবং নানা মন্তব্য করতে থাকে। এতো উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ হাজির থাকলেও তাদের সামনেই দুই দলের কর্মীরা বচসায় জড়িয়ে পড়েন।
সিমুলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত ভগবানপুরের তৃণমূল বিধায়ক অর্ধেন্দু মাইতির এলাকার অন্তর্গত। বিধায়কের ভাই দীপ্তেন্দু মাইতি ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। বিজেপির দাবি, বিধায়কের ভাইয়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের কর্মীরা লোহার রড, লাঠিসোটা নিয়ে তাদের উপরে হামলা চালায়। বিজেপির পশ্চিম মণ্ডল সভাপতি-সহ অন্যান্য কর্মীদের উপর চড়াও হয়ে মারধর করে। মারধরে ভগবানপুর-১ পশ্চিম মণ্ডলের সভাপতি স্বপন প্রধান ও গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য অশোক প্রামাণিক-সহ বেশ কয়েকদজন বিজেপি কর্মী গুরুতর জখম হন। আহত মণ্ডল সভাপতি-সহ অন্য কর্মীদের ভগবানপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই তাঁদের তমলুক জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। রাতেই বিধায়কের ভাই সহ কয়েকজন তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করে বিজেপি।
বৃহস্পরিবার বিকেলে দলের আহত কর্মীদের দেখতে হাসপাতালে যান বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি ভারতী ঘোষ। পরে সাংবাদিক বৈঠকে ভারতী বলেন, ‘‘আমপানে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ দেওয়া নিয়ে দুর্নীতি করছে তৃণমূল। আমাদের নেতা-কর্মীরা প্রতিবাদ করলে আক্রমণ করছে।’’ এরপর পুলিশের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকার তো ২০২১ সালে চলে যাবে। কিন্তু পুলিশ আধিকারিকেরা যাঁরা চাকরি করছেন তাঁরা তো আর ২০২১-এ চলে যেতে পারবেন না। তাঁরা কেন এই নোংরামির মধ্যে অংশ নিচ্ছেন।’’ তৃণমূলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে ভারতী বলেন, ‘‘পাগলা কুকুরের মতো যদি তৃণমূল সরকার কামড়াতে থাকে, জনরোষ থেকে বাঁচবে না।’’
পশ্চিম মন্ডলের সভাপতি স্বপন প্রধান বলেন, ‘‘তৃণমূলের দুর্নীতির প্রতিবাদ করতে গেলে বিধায়কের ভাইয়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা পুলিশের সামনেই আমাদের উপর হামলা চালায়।’’ তাঁর দাবি, দুষ্কৃতীরা অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। কাঁথি সাংগঠনিক বিজেপি সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় পুলিশের সামনে তৃণমূলের বর্বর আক্রমণের শিকার হয়েছেন আমাদের কর্মীরা। ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে এই বর্বর তৃণমূলকে হিসেব দিতে হবে। ভগবানপুরের মানুষ সেই হিসেবের প্রস্তুতি নিচ্ছে।’’
তৃণমূল বিধায়ক অর্ধেন্দু মাইতির দাবি, ‘‘ওখানে বিজেপির দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমালেই এই ঘটনা। আমার ভাই পঞ্চায়েত অফিসে স্মারকলিপি গ্রহণ করছিলেন। আর গোলমাল হয়েছে পঞ্চায়েত অফিস থেকে এক কিলোমিটার দূরে। এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’
এগরা মহকুমা পুলিশ আধিকারিক শেখ আখতার আলি বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। তবে পুলিশের সামনে মারধরের অভিযোগ ঠিক নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy