মোবাইলেই কনে সম্প্রদান।নিজস্ব চিত্র
পুরোহিত সম্প্রদানের মন্ত্র পড়ছেন। ছাদনাতলায় কনের পাশে বসে ঠাকুর্দা ধরে রয়েছেন মোবাইল ফোন। ভিডিয়ো কলিংয়ের মাধ্যমে ১৫০০ কিলোমিটার দূরে মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধা থেকে মেয়েকে ভার্চুয়ালি সম্প্রদান করলেন বছর পঞ্চাশের স্বপন বেরা। মঙ্গলবার রাতে ঝাড়গ্রাম শহরের শক্তিনগরে এমন নাটকীয় ঘটনার সাক্ষী থাকলেন হাতে গোনা কয়েকজন পড়শি-পরিজন।
শক্তিনগরের বাসিন্দা স্বপন থাকেন ওয়ার্ধায় একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন। পরিযায়ীরা ঘরে ফিরলেও স্বপন ফেরেননি। কারণ, যাঁরা ফিরে গিয়েছেন, কারখানায় তাঁদের পুনর্বহালের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। কারখানার একটি ইউনিট চালু রয়েছে। সেখানে ডিউটি করছেন স্বপন। মেয়ের বিয়ের ঠিক হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার বিয়ের দিনে হাজির থাকতে পারেননি স্বপন। তাতে অবশ্য বিয়ে আটকায়নি। প্রযুক্তির দৌলতে ভিডিয়ো কলিংয়ের সাহায্যে মেয়েকে দূর থেকেই সম্প্রদান ও আশীর্বাদ করলেন স্বপন। স্বপনের অবশ্য নিজের অ্যান্ড্রয়েড ফোন নেই। সম্প্রদান-পর্বের জন্য ওয়ার্ধার এক পরিচিতজনের কাছ থেকে ঘন্টাখানেকের জন্য মোবাইল ফোন ধার নিয়েছিলেন তিনি। সম্প্রদানের আনুষ্ঠানিক বাদবাকি কাজ সারলেন স্বপনের বাবা তথা কনের ঠাকুর্দা শিরীষচন্দ্র বেরা।
সংসারের জোয়াল টানতে প্রায় দশ বছর ওয়ার্ধা রয়েছেন স্বপন। ঝাড়গ্রামের বাড়িতে থাকেন তাঁর স্ত্রী ও ছেলে-মেয়েরা। স্বপনের একমাত্র মেয়ে পার্বতী বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস নিয়ে এমএ পড়ছেন। এ ছাড়া ঝাড়গ্রামের একটি প্যাথোলজিক্যাল সেন্টারে রিসেপশনিস্টের কাজ করেন পার্বতী। বছর দু’য়েক আগে পার্বতীর সঙ্গে ফেসবুকে আলাপ হয় বেলিয়াবেড়ার বাসিন্দা দীপ বেরার। তিনি একটি সরকারি দফতরের চুক্তিভিত্তিক কর্মী। ফেসবুকের আলাপ থেকে পার্বতী-দীপের প্রেম জমে ওঠে। নিজেদের সম্পর্কের কথা বাড়িতে জানান তাঁরা। দুই পরিবারই তাঁদের সম্পর্কে সিলমোহর দেয়। দুই পরিবারের দেখাশোনার পরে বিয়ের দিন ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু সব কিছু ওলোটপালট করে দেয় লকডাউন।
স্বপন চাননি বিয়ে পিছিয়ে যাক। ওয়ার্ধা থেকে ফোনে তিনি বলেন, ‘‘প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে মেয়েকে সম্প্রদান করলাম। না-থাকতে পারার জন্য কষ্ট তো হচ্ছেই। তবে পরিবারের জন্যই কারখানায় কাজ করছি। সেই কাজে টিকে থাকার জন্য এখানে থেকে গিয়েছি।’’ তবে অতিমারির মরসুমে খুবই সাদামাঠা ভাবে কনের বাড়িতে হয়েছে বিয়ের আয়োজন। হাতে গোনা কয়েকজন নিকটাত্মীয় এসেছিলেন। বরযাত্রীর সংখ্যাও ছিল হাতে গোনা কয়েকজন। মণ্ডপ হয়নি।
পার্বতীর দাদা সুদেব বলেন, ‘‘নিয়মরক্ষার বিয়েতে সেভাবে কোনও আয়োজন করা হয়নি। করোনার স্বাস্থ্যবিধির কারণে আত্মীয়-পড়শিদের আমন্ত্রণ জানানোও সম্ভব হয়নি।’’ এ দিন মুখে মাস্ক পরে মালা বদল করেন দীপ ও পার্বতী। বর-কনে দু’জনেই বলছেন, ‘‘সাদামাঠা বিয়েটাও তো স্মরণীয় হয়ে থাকল সম্প্রদানের মুহূর্তে। এই বা কম কীসের!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy