Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Dead

মেয়ের বিয়ের আগে আত্মঘাতী বাবা

মণীন্দ্র ছিলেন ভাগচাষি। বুধবার সন্ধ্যায় কীটনাশক খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ভর্তি করানো হয় ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বেলিয়াবেড়া শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ ২২:৫৫
Share: Save:

ছ’সপ্তাহ পরে মেয়ের বিয়ে। তার আগেই রাসায়নিক কীটনাশক খেয়ে মৃত্যু হল মেয়ের বাবার। অনুমান, অভাবের সংসারে বিয়ের আয়োজন কী ভাবে করবেন, সেই মানসিক উদ্বেগেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন ঝাড়গ্রাম জেলার বেলিয়াবেড়া থানার পেটবিন্ধি অঞ্চলের দাঁড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মণীন্দ্র দিগার (৫২)।

মণীন্দ্র ছিলেন ভাগচাষি। বুধবার সন্ধ্যায় কীটনাশক খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ভর্তি করানো হয় ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গভীর রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম পুলিশ মর্গে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বড় মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ বছর কুড়ির মেয়ে দীপার বিয়ের স্থির হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের গুড়গুড়িপাল থানার মনিদহ গ্রামের এক যুবকের সঙ্গে। পাত্র খড়্গপুরের একটি কারখানার ওয়েল্ডিং কর্মী। আগামী ২৪ ফাল্গুন (৯ মার্চ) বিয়ের ধার্যদিন। কার্ড ছাপিয়ে আত্মীয় পরিজন-পড়শিদের বিলিও করা হচ্ছিল। রূপশ্রী প্রকল্পে টাকা পাওয়ার জন্য আবেদনও করেছিল দীপা। বিয়ের তিন সপ্তাহ আগে দীপাকে ব্লক অফিসে যেতে বলা হয়েছিল। সুষ্ঠুভাবে মেয়ের বিয়ে সম্পন্ন করার জন্য বিভিন্ন জনের কাছে আর্থিক সহায়তা নিয়েছিলেন মণীন্দ্র। যদিও মণীন্দ্রের পরিবারের দাবি, পাত্রপক্ষের তেমন কিছু দাবি ছিল না। তবে মেয়ের বিয়েতে সাধ্যমত আয়োজনের জন্য কিছুটা চিন্তায় ছিলেন তিনি। মণীন্দ্রের ছেলে বছর আঠারোর সুদীপ মুম্বইয়ের একটি ঠিকাদারি সংস্থায় কাজ করেন।

বুধবার মণীন্দ্রের স্ত্রী বাদলি বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে গিয়েছিলেন খড়্গপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে। দীপা জানান বুধবার দুপুরে তৃপ্তি করে ভাত খেয়েছিলেন মণীন্দ্র। এক আত্মীয়কে গঙ্গাবাঁধ স্টপে বাসে তুলে দিয়ে এসেছিলেন। তারপর কোদাল নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন জমির উদ্দেশ্যে। সন্ধ্যায় ফিরে হাত-পা ধুয়ে বসার পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপরই মণীন্দ্র তাঁর বৌদি অমলাকে জানান, তিনি বিষ খেয়েছেন। দীপা স্বজন-পড়শিদের ডেকে নিয়ে আসেন। মণীন্দ্রকে বমি করানোর চেষ্টা করেন তাঁরা। গাড়ি ভাড়া করে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

ঘটনার আকস্মিকতায় শোকস্তব্ধ পরিবারটি। স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুতে ঘনঘন সংজ্ঞা হারাচ্ছেন বাদলি। খবর পেয়ে শুক্রবারই মুম্বই থেকে ফিরেছেন মণীন্দ্রের ছেলে সুদীপ। তবে বাবাকে শেষ দেখা দেখতে পাননি। শেষকৃত্যে হাজির ছিলেন দীপার হবু বর রঞ্জিত দোলাই ও তাঁর বাবাও। দীপা বলছেন, ‘‘বাবা কেন এমন করলেন কিছুই বুঝতে পারলাম না।’’ আর বাদলির আক্ষেপ, ‘‘কী এমন সমস্যা হয়েছিল যে আমাদের বলা গেল না, এ ভাবে আমাদের ভাসিয়ে দিয়ে চলে গেল মানুষটা।’’ প্রতিবেশী স্বরূপ পাত্র অবশ্য বলছেন, ‘‘পাত্রপক্ষের কোনও দাবি ছিল না। বিয়ের দিন স্থির হলেও আয়োজনের খরচ পুরোপুরি জোগাড় করে উঠতে পারেননি মণীন্দ্রদা। সেই কারণেই হয়ত এমন ভয়ানক সিদ্ধান্ত নেন।’’ পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে। মনোবিদ দীপঙ্কর পাল বলছেন, ‘‘বিবাহ সংক্রান্ত কোনও আগাম আশঙ্কায় হয়ত এই হটকারী কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন ওই ব্যক্তি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Dead
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy