প্রতীকী ছবি।
বিরোধীদের প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে ভোটের আগে ‘প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি যোজনা’ এ রাজ্যে চালু করার ক্ষেত্রে সায় দিয়েছে রাজ্য সরকার। প্রকল্পের সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে প্রথম দফায় ২ লক্ষ ৪৪ হাজার কৃষকের নামের তালিকা এসেছে পূর্ব মেদিনীপুরে। কিন্তু প্রকল্প নিয়ে জেলায় কোনও সরকারি প্রচার নেই বলে অভিযোগ কৃষকদের। ভোটের আগে কৃষকদের মন পেতে রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ বলে বিরোধীরা কটাক্ষ করলেও প্রচারের অভাবে কত জন কৃষক প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারবেন তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে রাজ্যের শাসক দল ও বিজেপি দু’পক্ষের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন চাষিরা।
প্রকল্পে সর্বোচ্চ ২ একর পর্যন্ত জমির মালিক এমন কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বছরে তিন দফায় মোট ৬ হাজার টাকা সরাসরি পৌঁছে দেবে কেন্দ্র। প্রকল্পের টাকা রাজ্য সরকারের হাতে দিক কেন্দ্র, এটাই ছিল রাজ্যের দাবি। রাজ্য সেই টাকা কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেবে। কিন্তু কেন্দ্র তাতে রাজি হয়নি। ফলে প্রকল্প নিয়ে এত দিন কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে চলছিল তরজা। ভোটের ময়দানে রাজ্যে এই প্রকল্প চালু না করা নিয়ে শাসক দলকে বিঁধছে বিজেপি। সম্প্রতি হলদিয়ায় জনসভায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন তাঁরা রাজ্যে ক্ষমতায় এলে প্রথম ক্যাবিনেট বৈঠকে রাজ্যের কৃষকদের জন্য এই প্রকল্প চালু করবেন। এমনকী প্রকল্পের সমস্ত বকেয়া টাকাও কৃষকদের মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। বিরোধীদের লাগাতার আক্রমণের মুখে গত মাসে রাজ্যে ‘প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি যোজনা’ চালুর ব্যাপারে সম্মতি দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেইমতো কাজও শুরু হয়েছে।
রাজ্য সরকারের ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পের রেকর্ড অনুযায়ী পূর্ব মেদিনীপুরে কৃষকের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ। ওই রেকর্ড ধরে প্রথম দফায় ২ লক্ষ ৪৪ হাজার কৃষকের নাম জেলায় এসেছে ‘প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি যোজনার’ জন্য। যাঁদের নাম এসেছে তাঁদের মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে জানানো হচ্ছে। কৃষি দফতরের অফিসে এসে সংশ্লিষ্ট কৃষককে একটি সেলফ ডিক্লেয়ারেশন ফর্মে সই করতে হচ্ছে। কৃষি দফতর কেন্দ্রের পোর্টালে সেই কৃষকের যাবতীয় নথি আপলোড করে দিচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রথম দফার কাজ শেষের পথে। এমনটাই খবর জেলা কৃষি দফতর সূত্রে। কিন্তু কৃষকদের অভিযোগ, কেন্দ্রের এই প্রকল্প নিয়ে জেলায় সরকারি তরফে কোনও প্রচার নেই। এই অবস্থায় নির্বাচনের আগে আদৌ এই প্রকল্প জেলায় চালু হবে কিনা তা নয়ে সন্দিহান কৃষক সংগঠনগুলি। কৃষক সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার এতদিন কেন এই প্রকল্প চালু করেনি? ভোটের আগে কৃষকদের মন জয় করতে এই উদ্যোগ। কিন্তু ভোটের আগে কৃষকরা এই প্রকল্পের টাকা হাতে পাবেন তো?’’
সারা ভারত কৃষক সভার জাতীয় পরিষদ সদস্য চিত্তরঞ্জন দাসঠাকুর বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি যোজনা নিয়ে জেলায় কোনও প্রচার নেই। প্রকল্পের সুবিধা পেতে গেলে কৃষকদের কী করতে হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশায় কৃষকরা। কী করণীয় তা জানতে না পারায় অনেকেই কৃষি দফতরে হাজিরা দিতে পারেননি। মুখ্যমন্ত্রী যদি সত্যিকারের কৃষক দরদী হন, তা হলে এতদিন কেন প্রকল্পটি চালুর কথা ভাবেননি?’’
প্রচার না থাকার অভিযোগ নিয়ে বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক দেবব্রত পট্টনায়েক বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ভোটের আগে এই প্রকল্প চালু করতে পারবেন না। উনি সমর্থন হারানোর ভয়ে প্রকল্পটি চালুর কথা বলেছেন। বিজেপি ক্ষমতায় এসে এই প্রকল্প চালু করবে।’’ জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ শেখ শাজাহান বলেন, ‘‘কেন্দ্রের এই প্রকল্প নিয়ে প্রচারের জন্য পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতিগুলিকে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। প্রচার হলে ভাল হত।’’
তৃণমূলের জেলা সভাপতি সৌমেন মহাপাত্র বলেন, ‘‘কেন্দ্র সরকার রাজ্যের সমস্ত কৃষককে কিসান নিধি প্রকল্পের আওতায় আনতে পারবে না বলায় এ রাজ্যে প্রকল্পটি চালু হয়নি। এতে রাজ্যের দোষ কোথায়?’’
জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দুয়ারে সরকার কর্মসূচির জন্য এই প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরু হতে একটু দেরি হয়েছে। প্রথম দফায় ২ লক্ষ ৪৪ হাজার কৃষকের নাম এসেছে। আশা করছি কৃষক বন্ধু প্রকল্পের আওতায় থাকা সমস্ত কৃষকের নামই ধাপে ধাপে আসবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy