প্রয়াত বাবার কার্যালয়ে সুরজিৎ হাঁসদা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
বাবার উন্নয়নের ‘রিপোর্ট কার্ড’ নিয়ে ঝাড়গ্রাম বিধানসভা এলাকায় ‘জনসংযোগ যাত্রা’র প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রয়াত তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার হাঁসদার ছেলে সুরজিৎ হাঁসদা। সূত্রের খবর, পিকে টিমের পরামর্শে আগামী দু’-একদিনের মধ্যেই বাড়ি-বাড়ি প্রচারে যাবেন তিনি। রাজনীতির আঙিনায় নবাগত সুরজিতের এমন কর্মসূচি নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে।
২০১১ থেকে ২০২০ টানা ন’বছর দু’বারের ঝাড়গ্রামের বিধায়ক ছিলেন সুকুমার হাঁসদা। প্রথম দফায় আড়াই বছর পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী ও বাকি আড়াই বছর আদিবাসী উন্নয়ন মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। ২০১৬ সালে অবশ্য মন্ত্রিত্ব পাননি সুকুমার। তবে তাঁকে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়। পরে আমৃত্যু বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার পদেও তিনি ছিলেন। দু’দফায় বিধায়ক থাকাকালীন ঝাড়গ্রাম বিধানসভা এলাকায় সুকুমারের বিধায়ক তহবিল থেকে এবং তাঁর সুপারিশক্রমে রাজ্যের তরফে কী-কী উন্নয়ন হয়েছে, সেই তথ্য সংগ্রহ করে রিপোর্ট কার্ড তৈরির কাজ চলেছে। সুরজিৎ জানিয়েছেন, দু’পাতার ওই রিপোর্ট কার্ড বাংলা ও সাঁওতালি দু’টি ভাষায় ছাপানোর প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে।
প্রস্টেটের ক্যানসারে অসুস্থ ৬৬ বছরের সুকুমার গত বছর ২৯ অক্টোবর কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়াত হন। পরদিন ঝাড়গ্রাম গ্রামীণের জারালাটায় সুকুমারের অন্ত্যেষ্টিতে বাধা দিয়েছিলন স্থানীয়দের একাংশ। পরে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে জটিলতা কাটিয়ে অন্ত্যেষ্টি হয়। যদিও সুকুমারের অনুগামীদের অভিযোগ, অন্ত্যেষ্টিতে বাধা দেওয়ার ঘটনায় দলেরই একাংশের ইন্ধন ছিল। সূত্রের খবর, বিষয়টি বুঝতে পেরেই তৃণমূলের শীর্ষস্তর থেকে এ বার ভোট-প্রচারে সুরজিতকে ময়দানে নামাতে চাওয়া হয়েছে। ভোটকুশলী পিকের টিমের তরফে তাঁকে বার্তাও দেওয়া হয়েছে বলে খবর। সুরজিতকে রাজনীতির মাঠে নামানোর প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিয়েছেন স্বয়ং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় সূত্রের খবর, মমতার নির্দেশে গত ২৩ জানুয়ারি সুরজিতকে তৃণমূলের রাজ্য এসটি সেলের সদস্য করা হয়েছে। এখন দল ও শাখা সংগঠনের বিভিন্ন বৈঠক ও কর্মসূচিতে ডাকও পাচ্ছেন সুরজিৎ।
৩১ বছরের ওই যুবক পেশায় আগে ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তির ইঞ্জিনিয়ার। কয়েক বছর আগে চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাবাকে নানা কাজে সাহায্য করতে শুরু করেন। তবে রাজনীতির ময়দানে এর আগে কখনও তাঁকে দেখা যায়নি। পড়াশোনা ও কর্মসূত্রে বেশ কয়েকটা বছর বাইরে থাকায় তিনি ঝাড়গ্রামেও একেবারেই নতুন মুখ। তাহলে কী তরুণ মুখকে ভোটের ময়দানে সামনে নিয়ে আসতে চাইছে তৃণমূল? ঝাড়গ্রাম আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় তিনিও আছেন? সেই জল্পনা এখন জোরালো হয়েছে।’
রাজনৈতিক কর্মসূচিতে নামার আগে সামাজিক কর্মসূচিও শুরু করেছেন সুরজিৎ। ইতিমধ্যেই বাবার নামে স্মৃতিরক্ষা কমিটি করেছেন। গত ৩ ফেব্রুয়ারি শহরের অফিসার্স ক্লাব মাঠে ওই কমিটির উদ্যোগে দরিদ্রদের পোশাক বিলি, বিভিন্ন ক্লাবকে ক্রীড়া সরঞ্জাম ও কৃতী পড়ুয়াদের পুরস্কার দেওয়াও হয়েছে। মার্চের গোড়ায় সুকুমারের স্মৃতিতে ক্রিকেট প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হবে। আপাতত সুরজিতের ‘মেন্টর’ হিসেবে কাজ করছেন ডা. সুকুমার হাঁসদা স্মৃতিরক্ষা কমিটির সম্পাদক পেশায় বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী শেখ আলিসান আলি। যিনি সুকুমারের একনিষ্ঠ অনুগামী হিসেবে পরিিচত ছিলেন।
ঝাড়গ্রাম বিধানসভা আসনটি অসংরক্ষিত হলেও আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রার্থী সুকুমার দু’বারই ভাল ব্যবধানে জিতেছিলেন। তাই এবার সহানুভূতির ভোটের লক্ষ্যে সুরজিতকে প্রার্থী করা অসম্ভব কিছু নয় বলে তৃণমূলের একাংশও মনে করছেন। সুরজিৎ নিজে বলছেন, ‘‘শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে ঝাড়গ্রাম বিধানসভা এলাকায় বাবার উন্নয়ন কাজের প্রচারে নামতে চলেছি। আমার ঠাকুরদা প্রয়াত সুবোধচন্দ্র হাঁসদা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন।’’ একই সঙ্গে তিনি জুড়েছেন, ‘‘তবে আমি রাজনীতিটা সবে শুরু করেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy