Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

তারের জালে পদে পদে বিপদ

কোথাও বাড়ির মধ্যে ঢুকলে মাকড়সার জালের মতো পেঁচিয়ে রয়েছে বিদ্যুৎবাহী তার, আবার কোথাও মরচে ধরে হেলে গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি।

ঘিঞ্জি গলিতে বিপজ্জনক বিদ্যুৎবাহী তারের জাল। খরিদায় (বাঁ দিকে)। হেলে রয়েছে জীর্ণ বিদ্যুতের খুঁটি। খড়্গপুর গুরুদুয়ারার সামনে। নিজস্ব চিত্র।

ঘিঞ্জি গলিতে বিপজ্জনক বিদ্যুৎবাহী তারের জাল। খরিদায় (বাঁ দিকে)। হেলে রয়েছে জীর্ণ বিদ্যুতের খুঁটি। খড়্গপুর গুরুদুয়ারার সামনে। নিজস্ব চিত্র।

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৬ ০৭:১১
Share: Save:

কোথাও বাড়ির মধ্যে ঢুকলে মাকড়সার জালের মতো পেঁচিয়ে রয়েছে বিদ্যুৎবাহী তার, আবার কোথাও মরচে ধরে হেলে গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। হেলে যাওয়া খুঁটি থেকেই চলে গিয়েছে অজস্র বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ। শুধু বিদ্যুৎ নয়, রয়েছে কেবল নেটওয়ার্ক থেকে টেলিফোনের তারও।

অভিযোগ, জীর্ণ বিদ্যুতের খুঁটি বদলানোর কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ে না। সম্প্রতি খড়্গপুরের সুভাষপল্লি স্টার ইউনিট ক্লাব সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটির তারে শর্ট-সার্কিটের জেরে আগুন লেগে যায়। স্থানীয়রা কোনও রকমে ট্রান্সফর্মারের সুইচ বন্ধ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দিনের পর দিন এ রকম পরিস্থিতি চলতে থাকলেও বিদ্যুৎ বণ্টন দফতর সে বিষয়ে গুরুত্ব দেয়নি। কোনও ঘটনার খবর দেওয়া হলেও বিদ্যুৎ দফতরের লোকেরা দেরিতে আসেন বলে অভিযোগ। এলাকার বাসিন্দা লক্ষ্মণ রায়ের অভিযোগ, “বিদ্যুৎ সংযোগের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে তারের জটাজালও। তারের জাল থেকে যে কোনও মুহূর্তে আগুন লাগার সম্ভাবনাও রয়েছে।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘কোথাও কোনও ছোট সমস্যা হলে বিদ্যুৎ দফতর সাময়িক মেরামত করে চলে যায়। পরে বড় দুর্ঘটনা হলে তখন তৎপরতা দেখা যায়। এই ঘটনা চলতে থাকায় আমরা আতঙ্কিত।”

শুধু সুভাষপল্লি নয়, খড়্গপুর শহরের বিভিন্ন পুরনো পাড়ায় গেলেই চোখে পড়বে যেখানে-সেখানে বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে তার। সমস্যা বেশি মালঞ্চ, সুভাষপল্লি, কুমোরপাড়া, ভবানীপুর, ভগবানপুর, খরিদা, ছত্তিসপাড়া, নিমপুরা, ঝুলি, ইন্দার মতো ঘিঞ্জি এলাকায়। দিন দিন বাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদনকারীর সংখ্যাও। বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিকাঠামোর সংস্কার না করেই অনেক ক্ষেত্রে নতুন নতুন সংযোগ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে বাড়ছে শর্ট-সার্কিটের আশঙ্কাও।

বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, খড়্গপুর শহরে এখন প্রায় ৪৫ হাজার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে একই বাড়িতে একাধিক সংযোগও রয়েছে। অভিযোগ, ট্রান্সফর্মারের ক্ষমতা না বাড়িয়ে নতুন সংযোগ দেওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে চাপ বাড়ছে। ৭ হাজার অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে বলেও দফতর সূত্রে খবর। ফলে বিদ্যুতের কম ভোল্টেজের সমস্যাও বাড়ছে।

ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ চুরি রুখতে দফতরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় ‘এরিয়াল বাঞ্চ কেবল’ লাগানো হচ্ছে। এই কেবলের একটি পাইপের মধ্যে দিয়েই একাধিক বিদ্যুতের তার নিয়ে যাওয়া যাবে। ফলে একদিকে যেমন বিপদের সম্ভাবনা কমবে, তেমনই পাইপের মধ্যে বিদ্যুতের তার থাকায় হুকিংয়ের প্রবণতাও কমবে বলে দফতরের কর্মীদের আশা। মালঞ্চর বিবেকানন্দপল্লির বাসিন্দা শিক্ষক বিশ্বজিৎ বসু বলেন, “এলাকায় বিদ্যুৎ দফতর ‘এরিয়াল ব্রাঞ্চ কেবল’ বসানোয় বিপদ আগের থেকে কমেছে। তবে কয়েকটি জায়গায় আগের মতো তারের জট রয়েই গিয়েছে। মাঝেমধ্যেই বাড়ির কাছে ট্রান্সফর্মারে আগুন লাগে। রাস্তা দিয়ে হাঁটতেও ভয় লাগে। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ দফতরের ভেবে দেখা উচিত।’’

অভিযোগ, তারের জট থেকে বিপদ রুখতে উদাসীন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে পুর কর্তৃপক্ষও। যদিও খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “সমস্যা রয়েছে এটা ঠিক। বহু এলাকায় এখনও পুরনো পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। দফতরে বিষয়টি জানিয়েছি। দফতরের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ারেরও সঙ্গে কথা হয়েছে। ওঁরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন।” বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরের খড়্গপুরের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার কমলকুমার মাইতি বলেন, “খুব দ্রুত শহরের সর্বত্র পুরনো তার বদলে ‘এরিয়াল বাঞ্চ কেবল’ বসিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করব। লোডশেডিংয়ের পরিমাণও কমেছে। কোথাও সমস্যা হলে দ্রুত সমাধানও করা হচ্ছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

electric wire hindrance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy