মেদিনীপুর শহরে চলছে কার্নিভাল। নিজস্ব চিত্র।
মঙ্গলবার কলকাতার বড় পুজোগুলির প্রতিমা নিয়ে রেড রোডে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে পুজো কার্নিভাল। তার আগে সোমবার দুর্গাপুজোর কার্নিভাল হয়ে গেল জেলায়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের পরে জেলায় জেলায় এই কার্নিভাল শুরু হয়েছিল। এ বারও জেলায় কার্নিভাল হবে, জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মেদিনীপুর শহরের কার্নিভালে অংশ নিয়েছে প্রায় ১৫টি পুজো। শোভাযাত্রা শুরুর আগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। গোলকুয়াচক-বটতলাচক রাস্তায় কার্নিভাল হয়েছে। রাস্তার উপরে আঁকা হয়েছিল আলপনা। পুরপ্রধান সৌমেন খান বলেন, ‘‘মেদিনীপুর শহরে এদিন সাজো সাজো রব ছিল। শহরবাসীর উৎসাহ, উদ্দীপনা ছিল। সামনের বছর আরও বড় করে কার্নিভাল হবে।’’ ছিলেন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া, সাংসদ জুন মালিয়া, জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরি, জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার।
আজ, মঙ্গলবার কলকাতায় রাজ্য সরকারের পুজো কার্নিভালের দিনেই আর জি করের ঘটনার প্রতিবাদে ‘দ্রোহের কার্নিভালে’র ডাক দিয়েছে ডাক্তারদের একটি সংগঠন। সেই নিয়ে টানাপড়েন রয়েছে। মেদিনীপুরের কার্নিভালে অবশ্য কোনও অন্য রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে বিরোধীরা অবশ্য বিঁধতে ছাড়ছে না। জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাসের মন্তব্য, ‘‘মানুষ এখন দ্রোহের কার্নিভালে। বিসর্জনের কার্নিভালের ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। এটা শুধুমাত্র সরকারি অর্থের অপচয়।’’ মন্ত্রী মানস এই সব কথায় গুরুত্ব দিতে নারাজ। তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘দুর্গোৎসব কি বন্ধ রাখা যায়? মেদিনীপুরের মানুষের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রাখছি।’’
অরণ্যশহর বলে পরিচিত ঝাড়গ্রামের কার্নিভাল অবশ্য বিতর্ক মুক্ত থাকতে পারেনি। সেখানে তৃণমূলের পুর প্রতিনিধিদেরই ব্রাত্য রাখার অভিযোগ উঠেছে। জেলা শহরের পাঁচ মাথা মোড়ে আয়োজিত কার্নিভালের মঞ্চে জেলাশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, মন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা, পুরপ্রধান কবিতা ঘোষ থাকলেও একজন বাদে তৃণমূলের কোনও পুর প্রতিনিধি ছিলেন না। শুধুমাত্র পুরপ্রধানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ১২ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি মানসী ঘোষ মঞ্চে ছিলেন। একমাত্র বিরোধী সিপিআইয়ের পুর প্রতিনিধিও আমন্ত্রণ পাননি। প্রতি বছরই দুর্গাপুজোর কার্নিভালে পুর প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। জেলা পরিষদের সদস্যরাও আমন্ত্রিত থাকেন। এবার জেলা সভাধিপতি ও জেলা পরিষদের সদস্যরা মঞ্চে থাকলেও পুরপ্রতিনিধিরা থাকলেন না কেন? পুরপ্রধানের বক্তব্য, ‘‘তথ্য সংস্কৃতি দফতরের আমন্ত্রণপত্রে কেবল আমার নাম ছিল। ওই আমন্ত্রণপত্রে ‘অল কাউন্সিলর’ লেখা থাকলে আমি কি সব পুরপ্রতিনিধিকে বলতাম না?’’
জানা গিয়েছে, এ দিন শেষ মুহূর্তে বিকাল তিনটে নাগাদ পুর প্রতিনিধিদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে মেসেজ করে কার্নিভালের সময়সূচি জানানো হয়। এরপরই ক্ষুব্ধ পুর প্রতিনিধিরা কার্নিভাল বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেন। শহর তৃণমূলের সভাপতি ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের পুর প্রতিনিধি নবু গোয়ালা বলেন ‘‘প্রশাসন কিংবা পুরসভার তরফ থেকে কার্নিভালের কোনও আমন্ত্রণপত্র আমরা পাইনি। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।’’ এদিনের কার্নিভালে ১০টি পুজা কমিটি যোগ দিয়েছিল। ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আমন্ত্রণ পেয়েও কার্নিভালের মঞ্চে যাননি তৃণমূল সাংসদ কালীপদ সরেন। কেন? সাংসদের জবাব, ‘‘শিলদায় একটি মেলায় উদ্বোধনে গিয়েছিলাম। তাই কার্নিভালে যাওয়া হয়নি।’’
রেলশহর খড়্গপুরে এ বার কার্নিভাল বাতিল হয়েছে। কেন? পুরপ্রধান কল্যাণী ঘোষ বলেন, ‘‘গত বার যেহেতু মেদিনীপুরে কার্নিভাল হয়েছিল তাই এ বার আমাদের শহরে ১৫ অক্টোবর কার্নিভালের কথা ছিল। কিন্তু আর জি কর কাণ্ড ও বন্যায় সকলের মন একটু ভারাক্রান্ত! তাই কার্নিভাল আমাদের শহরে না হয়ে এ বারও মেদিনীপুরে হয়েছে।’’
কার্নিভাল বাতিল হলেও ভাসানে অবশ্য ঘটনাবহুলই থাকল খড়্গপুর শহর। রবিবার, দশমীর রাতে ব্যক্তিগত পুকুরে জোর করে ছোট পুজোর বিসর্জন নিয়ে তৈরি হল উত্তেজনা। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাঁতরাপাড়ায় রয়েছে মতিয়া পুকুর। সেখানে দশমীর রাতে এলাকার চারটি ছোট পুজোর বিসর্জনে আসতেই পুকুর মালিকদের পক্ষ থেকে আসে বাধা। পৌঁছয় পুলিশ। আসেন স্থানীয় পুর প্রতিনিধি প্রবীর ঘোষ। শেষ পর্যন্ত সেখানেই ভাসান হয়। ওই পুকুরটি পুরণলাল গুপ্ত ও অম্বু দাশের মালিকানাধীন। সেখানে মাছ চাষ হয়। সেই যুক্তিতে ব্যক্তিগত মালিকানার ওই পুকুরে বিসর্জন না হওয়ার দাবি পুলিশে জানিয়েছিলেন তাঁরা। অম্বু বলেন, ‘‘গণেশ পুজোর বিসর্জনে মাছ সব মরে গিয়েছিল। তাই পুলিশের কাছে দাবি জানিয়েছিলাম এই ব্যক্তিগত পুকুরে প্রতিমা নিরঞ্জন যাতে না হয়। কারও কথা না শুনে ওয়ার্ডের পুর প্রতিনিধি প্রবীর ঘোষ জোর করে বিসর্জন করিয়েছেন।’’ প্রবীর বলছেন, ‘‘ওই পুকুরে গত ৫০ বছর ধরে রীতি মেনে বিসর্জন হয়। তাতে বাধা দিয়েছিলেন পুকুর মালিকরা। আমি গিয়ে চারটি পুজোর বিসর্জন করিয়েছি।’’
ওই চারটি পুজো কমিটি গেলেও বেশ কিছু পুজো কমিটি অবশ্য মন্দিরতলা পুকুরে চলে গিয়েছিল। স্থানীয় ভারতী সেবাসঙ্ঘ দুর্গামন্দিরের সম্পাদক অনিল সামন্ত বলেন, ‘‘পুলিশ আমাদের ওই পুকুরের বদলে মন্দিরতলা পুকুরে বিসর্জনের কথা বলায় আমরা মন্দিরতলা পুকুরেই নিরঞ্জন করেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy