বিপদের-মুখে: মেদিনীপুরে দূরপাল্লার দৌড়ে খুদেরা। নিজস্ব চিত্র
শীত এলেই জেলার নানা প্রান্তে শুরু হয় দূরপাল্লার দৌড়। ৩, ৪ ও ৫ মাইলের সেই সব প্রতিযোগিতায় যোগ দেয় ৮-১০ বছরের কচিকাঁচারা। কিন্তু প্রশিক্ষণ না থাকায় পিচ রাস্তা ধরে কিছুটা দৌড়নোর পরেই হাঁপিয়ে ওঠে তারা। বুকে ব্যথা বা পেশিতে টানে কাতরাতে শুরু করে। মাঝ রাস্তাতেই অসুস্থ হয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে উঠতে হয় খুদে প্রতিযোগীদের।
দূরপাল্লার খুদে দৌড়বীর ওডিশার বুধিয়া সিংহকে নিয়ে একসময় বিস্তর বিতর্ক হয়েছিল। চিকিৎসকদেরও মত, ১৮ বছরের নীচে কারও দূরপাল্লার দৌড়ে যোগ দেওয়া উচিত নয়। বিশিষ্ট হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ সত্যজিৎ বসুর কথায়, ‘‘১৮ বছরের নীচে দূরপাল্লার দৌড়ে যোগ দেওয়া উচিত নয়। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও নিয়মিত অনুশীলন করেই প্রতিযোগিতায় যাওয়া উচিত। ১০-১২ বছরের ছেলেমেয়েরা হঠাৎ একদিন দৌড়লে এক কিলোমিটারের বেশি দৌড়নো উচিত নয়।’’ মেদিনীপুর মেডিক্যালের অস্থি বিভাগের চিকিৎসক কুলদীপ সিংহেরও বক্তব্য, ‘‘নিয়মিত অনুশীলন ছাড়া খুদেরা লম্বা দৌড়ে নামলে পায়ের পেশিতে টান ধরবে বা স্ট্রেস ফ্র্যাকচার হবে। এতে ভবিষ্যতে অনেক অসুবিধা হতে পারে।’’
তাও কেন এই প্রবণতা চলছে, সেটাই প্রশ্ন! মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে খবর, কোনও দূরপাল্লার দৌড় প্রতিযোগিতা করার আগে আয়োজকদের ‘রোড রেস অ্যাসোসিয়েশন’, ‘জেলা ক্রীড়া সংস্থা’ ও পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু অভিযোগ, বেশিরভাগ আয়োজকই সে সব নিয়মের ধার ধারেন না। ফলে, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাটুকুও হয় না। সমস্যায় পড়ে প্রতিযোগীরা। মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাথলেটিক্স সম্পাদক স্বদেশ পান বলেন, ‘‘দৌড় প্রতিযোগিতার কোনও খবর আমাদের জানানো হয় না। আমাদের নজরে এলে নিয়মাবলি জানিয়ে দিতাম, প্রতিযোগীদের বয়সের সীমা বেঁধে দেওয়া হতো। তাহলে আর খালি পায়ে লম্বা পথে দৌড়ে অসুস্থ হতে হতো না কচিকাঁচাদের।’’ বেঙ্গল রোড রেস অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি উদয়রঞ্জন পালেরও বক্তব্য, ‘‘এটা খুবই অন্যায়। পাড়ায় পাড়ায় কিছু সংস্থা আমাদের না জানিয়ে নিজেরাই দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে। কিছু টাকার লোভে কচিকাঁচারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দৌড়াচ্ছে।’’ এই ধরনের আয়োজক সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন বলে উদয়বাবুর আশ্বাস।
বিপদের আশঙ্কা সত্ত্বে বিভিন্ন ক্লাব, সংগঠনের দৌড় প্রতিযোগিতায় কিন্তু যোগ দিচ্ছে কচিকাঁচারা। ক্রীড়াবিদ, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্তারা প্রতিযোগিতার উদ্বোধন ও পুরস্কার বিতরণে হাজির থাকলেও এই সমস্যা নিয়ে নীরব থাকছেন।’’ রবিবার যেমন মেদিনীপুর শহরে তিনটি দূরপাল্লার দৌড় প্রতিযোগিতা হয়। শহরের চিড়িমারসাই নাইট অ্যাথলেটিক ক্লাবের আয়োজনে ১১জন ৩ মাইল দৌড়ে যোগ দিয়েছিল। এদের মধ্যে ৩০-৩৫ জন ছিল ৮-১১ বছর বয়সী। দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী আট বছরের পল্লবী বেহারা, তৃতীয় শ্রেণির সঞ্জয় বেহেরা, চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া দশ বছরের গৌতম সাউ কোনওরকমে হাঁপাতে হাঁপাতে প্রতিযোগিতা শেষ করেছে। মেদিনীপুর শহরের অরবিন্দনগর অ্যাথলেটিক ক্লাবের ৪ মাইল দৌড়েও অল্পবয়সী প্রতিযোগীরা ছিল। আর মেদিনীপুর শহর কংগ্রেসের আয়োজনে ৫ মাইল দৌড়ে ২৩৬ জন প্রতিযোগীর মধ্যে ১০০ জনের বয়স ছিল ১০ থেকে ১৫-এর মধ্যে। তাদের ১৩জন আবার মাঝপথে অসুস্থ হয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে উঠেছে।
আয়োজকরা আবার এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের উপর দায় চাপাচ্ছেন। চিড়িমারসাই নাইট অ্যাথলেটিক ক্লাবের সম্পাদক সুমন্ত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রতিযোগীদের বয়স ১২ বছরের বেশি করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু অভিভাবকদের চাপে তা ৮ বছরে নামাতে বাধ্য হয়েছি।’’ আর মেদিনীপুর শহর কংগ্রেসের সভাপতি সৌমেন খানের বক্তব্য, ‘‘আমাদের প্রতিযোগিতায় বয়সের সীমা ১৬ বছর করা হয়েছিল। তাও কয়েকজন কমবয়সী প্রতিযোগী এসেছে। আগামী বছর থেকে বিষয়টিতে নজর দেব। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে কচিকাঁচাদের জন্য কম দূরত্বের আলাদা দৌড় প্রতিযোগিতা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy