Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
মুখ ঢেকে যায় প্লাস্টিকে

উদাসীনতার শিকার দিঘা

সৈকত সুন্দরি দিঘা ‘নো-প্লাস্টিক জোন’। তবে চোখে দেখলে তা বিশ্বাস করার উপায় নেই। পর্যটক বা হোটেল কর্মী, কিংবা সাধারণ বাসিন্দা সকাল হলেই মিষ্টি থেকে মাছ, আলুপটল, মাংস— সবই বহন করছেন পলিব্যাগে। অবাধে ব্যবহার হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন। খোলাবাজারে যথেচ্ছ বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ থার্মোকলের থালাও। ফল যা হওয়ার, তাই।

প্লাস্টিক জমে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নিকাশি। সোহম গুহর তোলা ছবি।

প্লাস্টিক জমে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নিকাশি। সোহম গুহর তোলা ছবি।

সুব্রত গুহ
দিঘা শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৬ ০১:০৮
Share: Save:

সৈকত সুন্দরি দিঘা ‘নো-প্লাস্টিক জোন’। তবে চোখে দেখলে তা বিশ্বাস করার উপায় নেই। পর্যটক বা হোটেল কর্মী, কিংবা সাধারণ বাসিন্দা সকাল হলেই মিষ্টি থেকে মাছ, আলুপটল, মাংস— সবই বহন করছেন পলিব্যাগে। অবাধে ব্যবহার হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন। খোলাবাজারে যথেচ্ছ বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ থার্মোকলের থালাও।

ফল যা হওয়ার, তাই। সৈকত শহরের নিকাশি নালাগুলি ভরে উঠেছে জঞ্জালে। সবটাই পলিথিন আর থার্মোকলের বাসনপত্রে। দু’দিনের জন্য ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছে সবই ব়ড় ক্ষণস্থায়ী। তাই বেশি মায়া না বাড়িয়ে তড়িঘড়ি ‘খাও আর ছুঁড়ে ফেলো’ তত্ত্বেই বিশ্বাসী তাঁরা। এই ছুঁড়ে ফেলার তাগিদে একেবারে বন্ধ হয়ে যায় নালার মুখ। জমে উঠে দুর্গন্ধ ছড়ায় আবর্জনা।

সম্প্রতি গ্রিন ট্রাইব্যুনাল দিঘাকে ‘নো-প্লাস্টিক জোন’ ঘোষণা করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের (ডিএসডিএ) পক্ষ থেকে রীতিমত ঢাকঢোল পিটিয়ে পলিথিন বর্জন অভিযানও চালানো হয়। তবে কয়েকদিনের জন্য। প্লাস্টিক বর্জন বাস্তবায়িত হয়নি শহরে, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ বাসিন্দা— সকলেরই এক অভিযোগ।

এমনকী ডিএসডিএ-র অভিযানের পর তিন-চার মাস কেটে গিয়েছে। তবু প্রকাশ্যে পলিথিন বিক্রি বা বহনের ক্ষেত্রে বিক্রেতা বা ব্যবহারকারীকে জরিমানাও করা হয়নি। গ্রিন ট্রাইবুনালের আইন মোতাবেক জেল বা জরিমানা সব রকম শাস্তিই প্রয়োগ করা যায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, শুধুমাত্র প্রশাসনিক উদাসীনতার সুযোগ নিয়েই দিঘায় যথেচ্ছ ব্যবহার চলছে পলিথিন ও থার্মোকলের।

নিউদিঘা প্লট হোল্ডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চিকিৎসক অলোক মিশ্রের অভিযোগ, ‘‘শুধু পর্যটকদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। স্থানীয় বাসিন্দা বিশেষ করে শহরের ব্যবসায়ীরাই তো ব্যবহৃত পলিথিন স্তূপ করে ফেলে দেন রাস্তায়। অপরিকল্পিতভাবে তৈরি নালাগুলিও তাতেই ভরাট হতে হচ্ছে।” সে কথা সত্যি। এমনিতে দিঘার নিকাশি নালাগুলি অপরিকল্পিতভাবে তৈরি। তার উপর নিয়মিত সাফাই হয় না। শহরের যত্রতত্র জমে বর্জ্য।

ঘটনা হল, এই উদাসীনতায় সবচেয়ে বেশি বিরক্ত পর্যটকরাই। বোলপুরের বাসিন্দা সোমক রায়চৌধুরীর এসেছিলেন দিঘায়। তাঁকথায়, “কিছুটা অংশ সাজানো-গোছানো। কিন্তু বাকিটা নোংরা আবর্জনায় ভর্তি। শুনেছিলাম দিঘায় প্লাস্টিক নিষিদ্ধ। কিন্তু এখানে এসে তো দেখছি অন্য ছবি।”

দিঘা শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী আবার দায় চাপিয়ে দিয়েছেন পর্যটকদের ঘাড়েই। তাঁর দাবি, “কিছু পর্যটক বাড়ি থেকে খাবার-দাবার নিয়ে আসেন পলিথিনের ব্যাগে। দিঘা থেকে ফেরার পথে খালি প্লাস্টিক এখানেই ফেলে দিয়ে যান।”

দিঘায় পরিবেশ সচেতনতা নিয়ে কাজ করে এমন এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অন্যতম কর্মকর্তা মোসম মজুমদার জানালেন, “মানুষ এখন আর থলি নিয়ে বাজার করতে বেরোয় না। জিনিসপত্র কিনে ক্যারিব্যাগে ঝুলিয়ে বাড়ি ফেরে। সচেতনতা না বাড়ালে শুধু আইন করে কোন কাজ হবে না।” দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের উদ্যোগে দিঘায় প্লাস্টিক বর্জন কর্মসূচীতে যোগ দিয়েছিল স্থানীয় একটি ক্লাব। ওই ক্লাবের সদস্যরাও এখন হাতগুটিয়ে বসে। কেন তাঁরা উদ্যোগী হচ্ছেন না? জবাবে ওই ক্লাবের সহ-সভাপতি সত্যব্রত দাস দায় চাপিয়ে দিয়েছেন প্রশাসনের ঘাড়ে, “প্লাস্টিক বর্জন কর্মসূচী নিয়ে প্রশাসনই চো উদাসীন, নিষ্ক্রিয়। কারও বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা খানিকটা আশাহত।”

দিঘা শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশ অনুযায়ী ৪০ মাইক্রনের কম ঘনত্ব যুক্ত প্লাস্টিক দিঘায় ব্যবহার করা যায় না। প্লাস্টিক ও থার্মোকল বর্জনের জন্য শহরে একটি বিশেষ বাহিনীও গঠন করা হচ্ছে। পর্ষদের সাফাই, মাঝখানে ভোটপর্ব চলায় প্লাস্টিক বর্জন অভিযানে কিছুটা স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল। এ বার আবার শুরু হবে অভিযান।

কিন্তু তা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্বেগেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Plastic Bag Polystyrene Hazard
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy