লোধা জনজাতি। ফাইল চিত্র।
মহাশ্বেতাদেবী নেই। তাই দিদি হিসাবে লোধা-শবরদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সে প্রতিশ্রুতির তিনদিন পরে, মঙ্গলবার দুই জেলায় দু’টি পৃথক লোধা সেল গঠনের সিদ্ধান্ত হল।
তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরেই ২০১১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ঝাড়গ্রামে লোধা সেল চালু হয়েছিল। কিন্তু ওই লোধা সেল-এ লোধা সমাজের কোনও প্রতিনিধিদের রাখা হয়নি অথবা যুক্ত করা হয়নি। লোধা-শবর সংগঠনের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল, লোধাদের উন্নয়ন-কাজের রূপরেখা নির্ধারণ করতে গেলে লোধা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের লোধা সেলে যুক্ত করতে হবে। এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের জন্য যে দু’টি পৃথক লোধা সেল গঠন করা হয়েছে সেগুলিতে অবশ্য পরামর্শদাতা হিসেবে থাকবেন লোধা সংগঠন ও লোধা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিরা। এ বার লোকসভা ভোটে জঙ্গলমহলে ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল। তারপর এই লোধা সেল গঠনকে ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
গত ৩০ অগস্ট পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতির ব্যবস্থপনায় লোধা-শবর সংগঠনের নেতারা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। মেদিনীপুর লোধা-শবর কল্যাণ সমিতির নেতা বলাই নায়েক, খগেন্দ্রনাথ মান্ডি, রঞ্জিত দাসেরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করেন, বর্তমান রাজ্য সরকার ২০১১ সালে নতুন করে লোধা সেল চালু করলেও সেটির কোনও কার্যকারিতা নেই। মুখ্যমন্ত্রী ওইদিন বলাইদের জানিয়ে দেন, শবর-জননী মহাশ্বেতাদেবীর অবর্তমানে তিনিই এখন দিদি হিসেবে লোধাদের পাশে থাকবেন। লোধাদের সামগ্রিক উন্নয়নে বিশেষ জোর দেওয়া হবে। ওই দিনই মুখ্যমন্ত্রী অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ ও আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি (ওএসডি) সঞ্জয় থাড়েকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ঝাড়গ্রামে গিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে দুই জেলার জন্য পৃথক দু’টি লোধা সেল গড়তে হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর কথা মতো এ দিন ঝাড়গ্রাম জেলা কালেক্টরেটের বিবেকানন্দ কনফারেন্স হলে বৈঠক হয়। সেখানে দু’টি লোধা সেল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এদিন বৈঠকে ছিলেন ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েষা রানি ও পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল, এসসি এসটি কপোর্রেশনের এমডি পার্থপ্রতিম মান্না, দুই জেলার অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের আধিকারিক, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ অমূল্য মাইতি, লোধা-শবর কল্যাণ সমিতির নেতা বলাই নায়েক, খগেন্দ্রনাথ মান্ডি প্রমুখ। এ ছাড়াও এদিন লোধা সমাজের কলেজ পড়ুয়া ঝাড়গ্রামের দেবী শবর, বেলপাহাড়ির শুশনিজবি গ্রামের পেশায় গৃহশিক্ষক সমায় শবর, লালগড়ের লালু শবরদের মতো কয়েকজনকেও বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বলাই বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী লোধাদের উন্নয়নে বিশেষ দায়িত্ব নিয়েছেন। লোধা সেল-এর পুনরুজ্জীবনে আমরা খুশি। আরও খুশি, যে সেলে লোধা-সমাজের প্রতিনিধিদের যুক্ত করে তাঁদের মতামত নিয়ে উন্নয়ন কাজ হবে।’’ প্রশাসন সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রাম লোধা সেলে একজন অফিসার থাকবেন। এ ছাড়া সেলে লোধা-শবর সমাজের পাঁচ জন থাকবেন পরামর্শদাতা হিসেবে। পশ্চিম মেদিনীপুর লোধা সেলে থাকবেন সাতজন লোধা-শবর প্রতিনিধি।
বাম আমলে ১৯৮১ সালে অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার ঝাড়গ্রামে লোধা সেল গঠন করা হয়েছিল। বাম জমানায় সাবেক লোধা সেলে লোধা সমাজের প্রতিনিধিরা ছিলেন। এমনকি, সেলের সরকারি সমীক্ষকও ছিলেন লোধা সম্প্রদায়ের প্রহ্লাদ ভক্তা। কিন্তু ১৯৯৬ সালে লোধা সেলের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৮ সাল থেকে মহাশ্বেতাদেবীর নেতৃত্বে মেদিনীপুর লোধা-শবর কল্যাণ সমিতি পুনরায় লোধা সেল চালুর দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। লাগাতার প্রশাসনিক মহলে দরবার করেন লোধা-শবর সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তারপর পরিবর্তনের পর গঠন হয়েছিল লোধা সেল। লোকসভা নির্বাচনে ভোটব্যাঙ্কে ধস নামার পর ফের শুরু হল সক্রিয়তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy