খুদে পড়ুয়াদের মাঝে ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ। শুক্রবার নিজস্ব চিত্র
জঙ্গলমহলের কোনও সমস্যা ফেলে রাখা যাবে না। মানুষের সমস্যার সমাধানে আরও বেশি করে পুলিশকে তৎপর হওয়ার কথা বললেন রাজ্য পুলিশের ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ। শুক্রবার জঙ্গলমহলে পুলিশ ক্যাম্প পরিদর্শনে এসে স্থানীয় পুলিশ কর্তাদের আরও মানবিক ভাবে এলাকাবাসীর পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন ডিজি।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন বেলপাহাড়ির ছুরিমারা ক্যাম্প পরিদর্শনে এসে ডিজি ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার পুলিশ কর্তাদের নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী চান, জঙ্গলমহলের মানুষ শান্তিতে বাস করুন। সেই শান্তি অটূট রাখতে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের তত্পরতা আরও বাড়াতে হবে। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডিজি (নিরাপত্তা) পি বীরেন্দ্র, রাজ্য পুলিশের আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) রাজীব মিশ্র, আইজি (সিআইএফ) অজয় নন্দ, এডিজি (আইজি) সঞ্জয় চন্দর, ডিআইজি (মেদিনীপুর) বাস্তব বৈদ্য-সহ শীর্ষ পুলিশ কর্তারা। এ ছাড়াও ছিলেন সিআরপি-র ডিআইজি অনিল চতুর্বেদী। বৈঠকের শেষ পর্বে যোগ দেন ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আর অর্জুন।
এ দিন প্রথমে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান থানার কুচিয়ায় রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের (এসএপি) ক্যাম্প পরিদর্শন করেন ডিজি। এরপর দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ হেলিকপ্টারে ছুরিমারায় পৌঁছন তিনি। ডিজির সফর ঘিরে ছুরিমারা স্ট্র্যাকো পুলিশ ক্যাম্পে ছিল সাজ সাজ রব। ক্যাম্পটির সার্বিক নিরাপত্তা খতিয়ে দেখেন ডিজি। ক্যাম্পের জওয়ানরা নিখরচায় স্থানীয় স্কুল পড়ুয়াদের কোচিং ক্লাস করান। প্রতিদিন কোচিং ক্লাসের পড়ুয়াদের ক্যাম্প থেকে দুপুরের খাবার দেওয়া হয়। শিশু পড়ুয়াদের হাতে লেখাপড়ার সরঞ্জাম ও পোশাক তুলে দেন ডিজি।
একসময় ছুরিমারা গ্রামে দাপিয়ে বেড়াত মাওবাদীরা। বাম জমানায় ছুরিমারা গ্রামে টিলার উপর সশস্ত্র পুলিশ ক্যাম্পটি হয়। রাজ্যে পালা বদলের পরে ছুরিমারা গ্রাম ছুঁয়ে চাকাডোবা-কাঁকড়াঝোর পিচ রাস্তা হয়েছে। ছুরিমারায় কমিউনিটি হলও হয়েছে। ঢালাই হয়েছে গ্রামগুলির ভিতরের রাস্তা। প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রাম গুলিতে বিদ্যুৎ এসেছে। তবে অভিযোগও রয়েছে বিস্তর। রাস্তা হলেও বাস চলে না। হাতে গোনা গোটা দু’য়েক ট্রেকার চলে। এখনও ছুরিমারা ও আশে পাশের গ্রামে পানীয় জলের সমস্যা মেটেনি। এলাকায় হাইস্কুল নেই। প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে বাঁশপাহাড়ির হাইস্কুলটিই ভরসা। তাছাড়া পঞ্চায়েতের সুযোগ সুবিধা পাওয়া নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে এলাকাবাসীর। শাসক দলের লোকেরাই যাবতীয় সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
স্থানীয় এক সূত্রে খবর, মানুষের নানা অভাব-অভিযোগকে হাতিয়ার করে এলাকায় প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছে মাওবাদীরা। গোয়েন্দা সূত্রে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। ভারতী ঘোষ জমানা শেষ হওয়ার পরে জঙ্গলমহলের শান্তিকে ধরে রাখাটাও জেলা পুলিশের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। আবার ভারতী-জমানায় পুলিশের বিরুদ্ধে একাংশ এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভও বেড়েছে।
ছুরিমারা স্ট্যাকো ক্যাম্প পরিদর্শন ও পুলিশ আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকের পরে বাঁশপাহাড়ি ফাঁড়ি পরিদর্শনে যান ডিজি। বিকেলে ফের ছুরিমারায় এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ছুরিমারা ফুটফল মাঠে হেলিপ্যাড করা হয়েছিল। সেখানে গার্ড অব আনার দেওয়া হয় ডিজিকে। তারপর কপ্টারে কলকাতা উড়ে যান তিনি।
সাংবাদিকদের ডিজি জানান, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে এসেছি। আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তিনি দাবি করেন, এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশের নিবিড় জনসংযোগ রয়েছে। ক্যাম্পে স্থানীয় পড়ুয়াদের কোচিং ক্লাস করানো হচ্ছে। জঙ্গলমহলের হাজার হাজার যুবক-যুবতী পুলিশের উদ্যোগে আয়োজিত খেলাধুলোয় যোগ দিচ্ছেন।
মাওবাদী তত্পরতা বাড়ছে কি না জানতে চাওয়া হলে ডিজি-র জবাব, “পার্শ্ববতী রাজ্যগুলোর সঙ্গে সমন্বয় রাখা হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রের তথ্য অনুযায়ী তল্লাশি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।” প্রয়োজনে থানা বা ক্যাম্পের সংখ্যা বাড়ানো হতে পারে বলে জানান তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy