Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
সঙ্কটে সরীসৃপ

জঙ্গল ছাড়ছে বিপন্ন শ্যামেলিয়নরা

জঙ্গলে খাবার নেই। রয়েছে চোরা কারবারও। প্রাণ বাঁচাতে বেরিয়েই প্রাণ-সঙ্কট। সমস্যা ঠিক কোথায়?আদতে সরীসৃপ গোত্রেরই প্রাণী শ্যামেলিয়ন। সাধারণ মানুষের কাছে গিরগিটি নামেই বেশি পরিচিত।

বিশ্বসিন্ধু  দে
দাঁতন শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০৭
Share: Save:

রং বদলেও আর নিরাপদে থাকার জো নেই। ভিটে মাটি যে চাটি হতে বসেছে! অগত্যা জীবন বিপন্ন করে নয়া আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে পড়া ছাড়া উপায় কি?

শ্যামেলিয়নদের জীবন-সঙ্কট এখন এ রকমই।

আদতে সরীসৃপ গোত্রেরই প্রাণী শ্যামেলিয়ন। সাধারণ মানুষের কাছে গিরগিটি নামেই বেশি পরিচিত। মূলত অন্ধকার ঝোপঝাড় এবং জলাশয়ের কাছাকাছি অঞ্চলেই থাকতে ভালবাসে এরা। বিপদ বুঝলে মুহূর্তে রং বদলায়। বর্তমানে গাছের আকাল দেখা দিচ্ছে! নগরায়নের দৌলতে নির্বিচারে কাটা পড়ছে গাছ। ফলে বাসস্থানের খোঁজে মাঝে মধ্যেই ঝোপঝাড় ছেড়ে লোকালয়ে চলে আসছে এরা।

প্রাণী বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন— আফ্রিকা, মাদাগাস্কার, স্পেন, পর্তুগাল, দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশে এই প্রাণীটির বেশি দেখা মেলে। ভারতের কেরল, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গেও এদের বাসবাস রয়েছে। মূলত বৃক্ষবাসী হলেও, বর্ষাকাল নাগাদ প্রজননের জন্যে এরা জঙ্গলের বাইরে বেরোয়। আর সেই সময়ই শ্যামেলিয়নরা ধরা পড়ে মানুষের হাতে। সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা, দাঁতন, নারায়ণগড়, কেশিয়াড়ি, মোহনপুর, খড়্গপুর, ঘাটাল, ডেবরা এলাকার একাধিক জায়গা থেকে উদ্ধার হয়েছে শ্যামেলিয়ন।

ঠাঁইনাড়া গিরগিটি

• আফ্রিকা, মাদাগাস্কার, দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশে দেখা যায়
• ভারতে পশ্চিমবঙ্গ কেরল, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশ
• গাছ কাটা হচ্ছে, ফলে বাস্তুহারা হয়ে লোকালয়ে প্রবেশ
• ডিম পাড়তেও জঙ্গল ছেড়ে মাঝে মাঝে বেরিয়ে আসে

এত বেশি পরিমাণ শ্যামেলিয়ন উদ্ধার হচ্ছে কেন? প্রাণীবিজ্ঞানী তথা জীববিজ্ঞানের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ সর বলছিলেন, ‘‘মূলত তিনটি কারণে শ্যামেলিয়নরা জঙ্গলের বাইরে বেরিয়ে আসছে। প্রথমত, প্রজননের সঙ্গী খুঁজতে। দ্বিতীয়ত, ডিম পাড়তে। এবং তৃতীয়ত, নিরাপদ এবং নির্জন জায়গার খোঁজে।’’ বন দফতরের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘নগরায়ন এবং জনঘনত্ব বৃদ্ধির ফলেই বাস্তুচ্যুত হচ্ছে শ্যামেলিয়নরা।’’

বৃক্ষবাসী প্রাণীটি বসবাসের জন্য শুষ্ক এবং নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলই পছন্দ করে। এরা মূলত গাছেই থাকে। পোকামাকড় ধরে খায়। নড়াচড়াও কম করে। একসঙ্গে প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি ডিম পাড়তে পারে এরা। গ্রীষ্ম ও বর্ষা এই সময়েই ওদের প্রজননের সময়। নিরাপদে ডিম পাড়তে আর নতুন বাসস্থানের খোঁজে জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে আসছে শ্যামেলিয়নরা।

ভাগ্য ভাল হলে বন দফতরের হাত ঘুরে ফের ঠাঁই হয় গভীর জঙ্গলে। তখন ফের নতুন বাসা খুঁজে নিতে হয়, না হলে পাচার হয়ে কাটে বন্দি জীবন।

বাস্তুহারা থেকে বন্দি জীবন। মাঝে অবশ্য থাকে কিছু সহৃদয়, যারা বাড়ি নিয়ে পরিচর্যার পর খবর দেন বন দফতরে।

অন্য বিষয়গুলি:

Deforestation Chameleons
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE