প্রতীকী ছবি।
চুল কাটাতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাজারে গিয়েছিলেন। রাত পর্যন্ত বাড়ি ফেরেননি। বাড়ির লোকেরা ফোন করলে তাঁর মোবাইল পাওয়া যায় বন্ধ। বুধবার ভোরে বাড়ির অদূরে স্থানীয় স্কুলের সামনে মিলল ওই ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ দেহ। আর দেহের পাশেই মিলেছে একটি ছুরি এবং একটি দেশি পিস্তল। পটাশপুরে বিশ্বনাথপুর গ্রামের ওই ঘটনায় জোর শোরগোল পড়েছে।
নিহত বাপি নায়কের (৩৬) বাড়ি বিশ্বনাথপুর গ্রামেই। শান্ত স্বাভাবের বাপি অর্থ উপার্জন জন্য ইঞ্জিন রিক্সায় ভাড়ায় মালপত্র বইতেন। গ্রামের আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দা বাপি পরিশ্রমী বলে পরিচিত ছিলেন। কোনও রকম মাদকের নেশা ছিল না। রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন না। শুধু মুরগি লড়াইয়ের প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল। বাড়িতে লড়াকু মুরগিও রাখতেন তিনি। পাড়ার মধ্যে বাপিদের পরিবার আর্থিক ভাবে কিছুটা স্বচ্ছলও ছিল। এমন এক ব্যক্তিকে কেন গুলি করে খুন করা হয়েছে, সে নিয়ে ধন্দে এলাকাবাসী।
পরিবার সূত্রের খবর, বাপির বোনের উত্তরপ্রদেশে বিয়ে হয়েছে। প্রায় তিন বছর পরে ভগ্নিপতি এবং বোনের বাড়িতে আসার কথা ছিল। মঙ্গলবার দুপুরে বালিচক স্টেশন থেকে দু’জনকে মোটরবাইকে করে বাড়ি নিয়ে এসেছিলেন। বিকালে মুরগি নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে বৈরামপুর গ্রামে লড়াইয়ে গিয়েছিলেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ বাপি বৈরামপুর থেকে বাড়ি ফিরে আসেন। মোটরবাইক রেখে সামনের তাপিন্দা বাজারে সেলুনে গিয়েছিলেন। রাত সাড়ে আটটা বেজে গেলেও বাড়ি না ফেরায় বাপির স্ত্রী তাঁকে বাজারে খুঁজতে আসেন। সে সময় তিনি বাপির মোবাইলে একাধিক বার ফোন করেন, তবে ফোন বেজে বেজে বন্ধ হয়ে যায়। দাবি, ৯টার পর থেকে বাপির মোবাইল সুইচ অফ হয়ে যায়।
স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবার ভোরে ভ্রমণে বেরিয়ে কয়েকজন এলাকাবাসী বিশ্বনাথপুর বালিকা বিদ্যালয়ের দরজার কাছে এক ব্যক্তির রক্তাক্ত দেহ পড় থাকতে দেখেন। দাবি, ব্যক্তির মাথার বা’দিকে কানের কাছে গুলির ক্ষতচিহ্ন ছিল। বিষয়টি জানাজানি হতেই পটাশপুর থানার পুলিশ সেখানে যায়। পরে জানা যায়, ওই ব্যক্তি আর কেউ নন— বাপি।
বাপির স্ত্রী ফাল্গুনী নায়ক বলেন, ‘‘রাতে বাজার থেকে বাড়ি না ফেরায় ফোন করেছিলাম। প্রথমে একবার ফোন বেজে বন্ধ হয়ে যায়। তার পরে সারা রাত স্বামীর ফোন বন্ধ ছিল। সকালে জানতে পারি গুলি করে আমার স্বামীকে খুন করে হয়েছে। ওঁর কারও সঙ্গে কোনও ঝামেলা ছিল না।’’ ফাল্গুনী থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ বাপির ঘনিষ্ঠ তিন যুবককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, মঙ্গলবার রাতে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে বাপির মাথায় গুলি করা হয়েছে। স্কুলের সামনে ঢালাই রাস্তার উপর গুলি চালানো হয়েছিল বলে অনুমান। তার পরে সেখান থেকে দেহ টেনে নিয়ে গিয়ে প্রায় ১০ ফুট দূরে স্কুলের দেওয়াল এবং শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের ধারে ফেলে দেওয়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি ছুরি এবং তার ঠিক ১০০ মিটার দূরে রাস্তার ধারে একটি দেশি পিস্তল উদ্ধার করেছে। দেহ উদ্ধার প্রসঙ্গে এগরার এসডিপিও মহম্মদ বৈদুজ্জামান বলেন, ‘‘নিহতের মাথায় গুলির ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে বিস্তৃত ভাবে বোঝা যাবে। ঘটনাস্থলে গুলির খোল এবং অদূরে একটি দেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। খুনের অভিযোগের ভিত্তিতে সন্দেহেভাজন কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরের সীমানা লাগোয়া এই এলাকায় চুরি এবং ছিনতাই হয় মাঝে মধ্যেই। রাতে এলাকায় লোকজনের চলাচল তেমন থাকে না। শীতের রাতে দুষ্কৃতীরা ওই বিষয়টিকে কাজে লাগিয়েছে বলে অনুমান। যদিও স্থানীয় এক বাসিন্দার দাবি, রাত ৯টার দিকে কিছু ফাটার শব্দ শুনেছিলেন। কেউ বাজি ফাটাচ্ছিলেন বলে তিনি ভেবেছিলেন বলে দাবি।
পুলিশ সূত্রের খবর, বছর দশেক আগে ওই ব্যক্তির বাড়ি থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরে পাওয়ার টিলার মেশিন চুরির যন্ত্রণাংশ পুলিশ উদ্ধার করেছিল। সেই ঘটনার এক দশকের পার হয়েছে। তবে সেটির সঙ্গে বাপির মৃত্যুর কোনও যোগসূত্র রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, পুরনো শত্রুতার জেরে হয়তো পরিকল্পিত ভাবে দুষ্কৃতীরা বাপিকে
খুন করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy