Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

মুম্বইয়ে মৃত, গ্রামে দাহে বাধা, দেহ নিয়ে রাতভর চরকিপাক

সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত পিংলার নারাথা গ্রামের ওই ঘটনায় শোরগোল পড়ে।

পিংলায় নদীর পাশে হল সৎকার। মৃত রাজু জানা (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র

পিংলায় নদীর পাশে হল সৎকার। মৃত রাজু জানা (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পিংলা শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২০ ০৪:৪৭
Share: Save:

বাড়ির ছেলে মুম্বইয়ে গয়নার কারিগর। কিন্তু মাস দু’য়েক ফিরতে পারছিল না লকডাউনের গেরোয়। বিধি কিছুটা শিথিল হতে ফেরার তোড়জোর চলছিল। দিন পাঁচেক বাদেই তাঁর বাড়ি ফেরার কথা ছিল।

সেই সুদিন অবশ্য এল না। গ্রামে ফিরল যুবকের দেহ। ভিন্ রাজ্যে মৃত্যু হওয়ায় দেহ গ্রামে ঢুকতে বাধা দিলেন বাসিন্দারা। দেহ সৎকার করতে রাতভর চরকিপাক খেতে হল পরিজনেদের।

সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত পিংলার নারাথা গ্রামের ওই ঘটনায় শোরগোল পড়ে। গত ১৮মে মুম্বইয়ে মারা যান পিংলার ওই যুবক রাজু জানা (২৩)। পূর্ব মালাডে গয়নার কারিগর হিসেবে কর্মরত রাজু হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন বলে তাঁর মৃত্যুর শংসাপত্রে উল্লেখ রয়েছে। যাবতীয় নথিপত্র প্রস্তুত করেই মুম্বই থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে রওনা দেয় রাজুর দেহ। সোমবার রাতে গ্রামেই সৎকারের কথা ছিল। অথচ পড়শি গ্রাম লক্ষ্মীবাড়ি, জলচকের বাসিন্দাদের থেকে আসে বাধা। পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সে কথা জেনে ঠিক হয় মেদিনীপুরের সরকারি শ্মশানে সৎকার হবে। গ্রামে পৌঁছনোর আগেই দেহ ঘুরিয়ে নিয়ে মেদিনীপুর নিয়ে গেলে সেখানেও স্থানীয়রা বাধা দেন। পরে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে দেহ রাখা হয় খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে মর্গে। শেষমেশ মঙ্গলবার সকালে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে গ্রামবাসীকে আশ্বস্ত করে নারাথায় নিয়ে যাওয়া হয় দেহ। দুপুরেই নারাথার নদী বাঁধে অন্ত্যেষ্টি মেটে। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, “কিছু অসেচতন মানুষ ভুল বুঝে বাধা দিয়েছিলেন। আমরা সকলকে বুঝিয়ে গ্রামেই নির্দিষ্ট জায়গায় সৎকারের ব্যবস্থা করেছি।”

অভাবী পরিবারের যুবক রাজু বছর পাঁচেক আগে মুম্বইয়ে কাজে গিয়েছিলেন। দিনমজুর বাবা গণেশচন্দ্র জানা বছর কয়েক আগে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এ বার রাজুর বিয়ের পরিকল্পনা চলছিল। ছেলেকে হারিয়ে হাহাকার করছেন গণেশ ও তাঁর স্ত্রী পুতুল জানা। গণেশ বলেন, “বৈশাখে বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও লকডাউনে আসতে পারেনি। নিয়মিত বাড়ি ফেরা নিয়ে কথা হচ্ছিল। হঠাৎ শুনলাম মারা গিয়েছে। কী ভাবে মৃত্যু হল কিছুই বুঝতে পারছি না।” মৃতের কাকা কার্তিক জানা বলেন, “১৮ মে সকাল সাড়ে ৯টায় কথা হয়েছিল। ১২টায় শুনলাম জ্বর, সর্দি হওয়ায় মুখ দিয়ে রক্ত উঠে মারা গিয়েছে। ডেথ সার্টিফিকেটে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বলে লিখেছে।”

গ্রামে গুঞ্জন, রাজু করোনায় মারা গিয়েছেন। জলচকের বাসিন্দা পিংলার সিপিএম নেতা জগন্নাথ ঘোড়ই বলেন, “ওই যুবকের সিপিএম সমর্থক। দেহ গ্রামে আসবে বলে সব ঠিক ছিল। কিন্তু কয়েকজন গ্রামবাসী উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে গ্রামে ঢোকায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পরে অবশ্য প্রশাসন হস্তক্ষেপ করেছে। আমাদের দাবি ওই যুবকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।” ওই যুবকের কাকা কার্তিক বলছিলেন, “সব থেকে খারাপ লাগছে সরকারি শ্মশানে দাহ করতে দেওয়া হল না। রাতভর দেহ নিয়ে ঘোরার পরে মর্গে পাঠিয়ে দেওয়া হল।” এ দিন পিংলার বিডিও শঙ্খ ঘটক বলেন, “আমি সকালে জানতে পেরেই হস্তক্ষেপ করেছি। গ্রামবাসীকে বুঝিয়ে গ্রামেই সৎকারের ব্যবস্থা হয়েছে।

গ্রামবাসীকে আশ্বস্ত করতে ওই যুবকের পরিবারকে ১৪দিন গৃহ পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলে জানিয়েছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy