Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus Lockdown

দুরন্ত দুর্দিন, আজ ধেয়ে আসছে আমপান

করোনা পরিস্থিতির মাঝেই এই ‘সুপার সাইক্লোন’-এর জেরে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কয়েকদিন আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে প্রশাসন।

জলোচ্ছ্বাস: দিঘায়। ডানদিকে, সমুদ্র সৈকতে তদারকিতে শুভেন্দু অধিকারী। মঙ্গলবার নিজস্ব চিত্র

জলোচ্ছ্বাস: দিঘায়। ডানদিকে, সমুদ্র সৈকতে তদারকিতে শুভেন্দু অধিকারী। মঙ্গলবার নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবদেন
শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২০ ০২:৪২
Share: Save:

সকালে কিছুক্ষণের জন্য রোদ ঝলমলে আকাশ। বেলা গড়াতেই আকাশ মেঘলা হয়ে শুরু হয় হালকা ঝোড়ো বাতাস। সেই সঙ্গে উপকূল এলাকায় বৃষ্টি। সমুদ্রের ঢেউয়ের উচ্চতা ক্রমশ বাড়তে থাকে। মঙ্গলবার এভাবেই ঘূর্ণিঝড় আমপানের প্রভাব পড়তে শুরু করে পূর্ব মেদিনীপুর জেলাজুড়ে।

প্রথমে আমপানের সবচেয়ে বেশি প্রভাব উপকূল এলাকা দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর এবং হলদিয়ায় পড়ার পূর্বাভাস রয়েছে। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পূর্বাভাসে জানা যায় আমপানের কোপে পড়তে চলেছে নন্দীগ্রাম, খেজুরি, নয়াচর এলাকাতেও। মঙ্গলবার জেলায় পৌঁছে গিয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর আরও তিনটি দল। নয়াচর থেকে বাসিন্দাদের সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

করোনা পরিস্থিতির মাঝেই এই ‘সুপার সাইক্লোন’-এর জেরে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কয়েকদিন আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে প্রশাসন। বুধবার এই ঘূর্ণিঝড় উপকূলবর্তী এলাকায় আছড়ে পড়বে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। তবে ঝড়ের গতিপথ দিঘা থেকে হলদিয়া হয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার দিকে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেজন্য দিঘা, মন্দারমণি ও খেজুরি, নন্দীগ্রাম প্রভৃতি এলাকার বাসিন্দাদের সোমবার বিকেল থেকেই বাড়ি থেকে সরিয়ে স্থানীয় সাইক্লোন, ফ্লাড রেসকিউ সেন্টার ও স্কুল ভবনে রাখার ব্যবস্থা হয়। মঙ্গলবার হলদিয়ার নয়াচর থেকেও বাসিন্দাদের সরানোর ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। এজন্য প্রশাসনের তরফে নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সুপার সাইক্লোনের সতর্কতায় জাতীয় বিপর্যয় বাহিনীর মাইক-প্রচার দিঘায়। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবু তাহের জানান, নয়াচরের বাসিন্দাদের এদিন রাতের মধ্যেই ফিরে আসতে বলা হয়েছে। ওই দ্বীপে কম বেশি আট হাজার বাসিন্দা রয়েছেন। স্থানীয় থানা ও একটি ফিশারির পাকা বাড়িতে নারী ও শিশুদের স্থান দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। নন্দীগ্রামের জেলিংহ্যাম, সোনাচূড়া, কালিচরণপুর, কেন্দেমারি অঞ্চলে বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য কমিটি তৈরি করা হয়েছে। হলদিয়া পুর এলাকায় হলদি নদীর তীরে হলদিয়া ভবনের পাশের বস্তির মানুষজনকে ‘আহেলি’ কমিউনিটি সেন্টারে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরসভার চেয়ারম্যান শ্যমল আদকের নেতৃত্বে বিপর্যয় মোকাবিলায় জরুরিকালীন দফতর খোলা হয়েছে। পুর এলাকার বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারে নদীবাঁধ এলাকার বাসিন্দাদের সরিয়ে আনার ব্যবস্থা হয়েছে। পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল (দুর্যোগ মোকাবিলা) আজিজুল রহমান জানান, পুর প্রধানের নেতৃত্বে বিভিন্ন ওয়ার্ডে কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। গাছ কাটার মেশিন, গ্যাস কাটার সহ একটি দল তৈরি রাখা হয়েছে। নন্দীগ্রামের জেলিংহ্যাম অঞ্চলে গতবার ঝড়ে প্রচুর গাছ নষ্ট হয়েছিল। এ বার বনভূমি কতটা রক্ষা করা যাবে তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জেলা প্রশাসন ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে খবর, সমুদ্রবর্তী উপকূলবর্তী কাঁথি-১, দেশপ্রাণ, রামনগর-১, ২ ও খেজুরি- ২ ব্লকের প্রায় ৪১ হাজার বাসিন্দাকে বাড়ি থেকে আশ্রয় কেন্দ্রে সরানো হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রবিবার বিকেলেই দিঘায় এনডিআরএফের একটি ব্যাটালিয়ান এসেছিল। মঙ্গলবার আরও তিনটি ব্যাটালিয়ন জেলায় পৌঁছেছে। এই বাহিনী মন্দারমণি, কাঁথি ও নন্দীগ্রামে থাকছে। এছাড়া রাজ্য সরকারের অসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি দলকে দিঘায় রাখা রয়েছে। মঙ্গলবার তাদের আরও তিনটি দল জেলায় এসেছে। তাঁদের রামনগর-১, ২ ব্লক ও হলদিয়ায় রাখা হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থাপনা দফতরের জেলা আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় হালদার বলেন, ‘‘দুর্যোগ মোকাবিলায় এনডিআরএফের আরও তিনটি দল জেলায় এসেছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীরও তিনটি দল এসেছে।’’

জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থা ও বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে খবর, সাইক্লোন ও ফ্লাড সেন্টার-সহ স্কুল ভবনে আশ্রয়কেন্দ্রগুলিতে বিদ্যুৎ ও পানীয় জলের সরবরাহ বজায় রাখতে জরুরিকালীন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলে বিকল্প হিসেবে জেনারেটর থাকছে। এর জন্য বিকল জেনারেটর মেরামতির পাশাপাশি ও নতুন কয়েকটি উচ্চ-ক্ষমতার জেনারেটর কেনা হয়েছে। তবে, মন্দারমণি সংলগ্ন একটি ফ্লাড রেসকিউ সেন্টারে সোমবার রাত থেকে সমস্যা তৈরি হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সেন্টার দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। ফলে সেখানকার জেনারেটর বিকল হয়ে গিয়েছে। সোমবার রাতে কালিন্দী পঞ্চায়েত এলাকার অল্প সংখ্যক মানুষকে ওই আয়লা কেন্দ্রে নিয়ে রাখা হয়েছিল। রাতে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু আলো-পাখা না চলায় রাতেই অনেকে ফের বাড়িতে ফিরে যান বলে খবর।

প্রশাসন সূত্রে খবর, উপকূল এলাকা-সহ জেলার প্রতি বিদ্যুৎ সাব-স্টেশনে একজন আধিকারিক রাখা হচ্ছে। সাব-স্টেশন-সহ বিদ্যুৎ লাইনের জরুরি মেরামতির জন্য থাকছেন ঠিকাদার সংস্থার কর্মীরা। জেলাশাসকের অফিস ছাড়াও মহকুমা, ব্লক প্রশাসনের পাশাপাশি জেলার প্রতি গ্রামপঞ্চায়েত কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে।

আয়লা কেন্দ্রগুলিতে করোনা নিয়ে আগাম সতর্কতার কথা বলেছিল জেলা প্রশাসন। যদিও সেখানে যে সব লোকেদের রাখা হচ্ছে, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে তাঁদের জন্য, স্যানিটাইজ়ারের ব্যবস্থা করা হয়নি হয়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্বও মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।

যদিও বিপর্যয় মোকাবিলা ব্যবস্থাপনা দফতরের জেলা আধিকারিক মৃত্যুঞ্জয় হালদার বলেন, ‘‘আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা বাসিন্দাদের জন্য মোট ৫৫ হাজার মাস্ক কেনা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ হাজার মাস্ক ইতিমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দাদের দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাঁদের জন্য১০০ লিটার হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার দেওয়া হয়েছে।’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানান, জেলার উপকূলবর্তী বেশিরভাগ এলাকা গ্রিন জোন হিসাবে রয়েছে। তা সত্ত্বেও করোনা সতর্কতা বিধি মেনে বাসিন্দাদের আশ্রয় কেন্দ্রে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে জরুরিকালীন চিকিৎসার ব্যবস্থা পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীরাও সতর্ক আছেন।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ দিন সন্ধ্যায় দিঘায় সেচ দফতরের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন রাজ্যের পরিবহণ ও সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। পরে এলাকায় ঘুরে উদ্ধার কাজের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন তিনি। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দিঘায় থেকে তিনি উদ্ধার কাজের তদারকি করবেন। এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ভিডিও বৈঠকের পর তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy