আমপান ঝড়ের দিন। দিঘার রাস্তায়। ফাইল চিত্র
কাঁচা এবং পাকা ইট দিয়ে তৈরি বাড়িটা ভেঙে পড়ে রয়েছে। টিনের ছাউনিও উড়ে গিয়েছে। ভাঙা বাড়ির সামনে ত্রিপলের নিচে বসে ছিলেন এক অশীতিপর বৃদ্ধা। মাথার উপরে আবার কবে ছাদ পাবেন, তা জানেন না তিনি।
গত ২০ মে জেলায় আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় ‘আমপান’। তার একমাস পরেও দেশপ্রাণ ব্লকের ধোবাবেড়িয়া গ্রামে ঝড়ের ক্ষত স্পষ্ট। ঝড়ের তাণ্ডবে পূর্ব মেদিনীপুরের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশপ্রাণ, নন্দীগ্রাম এবং খেজুরি ব্লক।
দেশপ্রাণ ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, দেশপ্রাণ ব্লকের প্রধান অর্থকরী চাষ বাগদা চিংড়ি এবং ভ্যানামেইও ব্যাপক ক্ষতি হয় ঝড়ে। ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে ২৬ হাজার ৩৫০টি বাড়ি ভেঙে ছিল বলে রাজ্য সরকারকে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল। তার মাত্র দু’হাজার ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির মালিক ক্ষতিপূরণ আপাতত পেয়েছেন বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর। আরও হাজার তিনেক ক্ষতিগ্রস্তের হাতে ক্ষতিপূরণের টাকা পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। ওই ব্লকে এখনও ১০ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছতে পারেনি বলে প্রশাসন সূত্রেই দাবি করা হয়েছে। বিডিও মনোজ মল্লিক বলেন, ‘‘মাত্র পাঁচ হাজার জনের নামে ক্ষতিপূরণের আর্থিক সহায়তা পাওয়া গিয়েছে। তাঁদের হাতে বাড়ি তৈরির টাকা তুলে দেওয়ার কাজ চলছে। তবে এখনও কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ এবং পানীয় জল পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি।’’
দেশপ্রাণ ব্লকের পাশাপাশি খেজুরি-১, ২ এবং নন্দীগ্রাম-১, ২ ব্লকেও ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন স্পষ্ট। অধিকাংশ জায়গায় বহু বাড়ি ভাঙা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। যাঁরা ত্রিপল পেয়েছে, তাঁরা ওই ত্রিপলের অস্থায়ী ছাউনির নীচে দিন কাটাচ্ছেন। এছাড়া, গ্রামীণ এলাকায় ইউক্যালিপ্টাস, আকাশমণির মত প্রচুর গাছ ধান জমির মাঠ এবং পুকুরে পড়ে রয়েছে। ফলে গাছের পাতা পচে দূষণ সৃষ্টি হচ্ছে। রামনগর, কাঁথি-১, ৩ ব্লকেও প্রায় একই রকম পরিস্থিতি।
তবে এগরা এবং তমলুক মহকুমা এলাকা জুড়ে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়ায় ধীরে ধীরে সেখানকার পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রের জানা গিয়েছে। এত ক্ষয়ক্ষতির পরেও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র দিঘা-সহ সৈকতের অন্য স্থানগুলি। প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গিয়েছে, দিঘায় হোটেল খোলার অনুমতি মিলেছে। প্রথমে স্থানীয়দের বাধা থাকলেও ধীরে ধীরে পর্যটকেরাও আসছেন। তবে সেই সংখ্যাটা কুবই কম বলে জানাচ্ছেন ‘দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনে’র যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘পর্যটক কম থাকায় অল্প সংখ্যক হোটেল খুলেছে। লোকাল ট্রেন চালু না হলে পর্যটকদের ভিড় বাড়বে না বলেই মনে হচ্ছে।’’
‘আমপান’ ঝড়ের এক মাস পূর্তি প্রসঙ্গে জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘খেজুরি এবং নন্দীগ্রামের বিক্ষিপ্ত কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। তবে গোটা জেলায় ঘূর্ণিঝড়ে যাঁদের বাড়ি ভেঙে গিয়েছিল, তাঁদের কয়েক জন আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। পর্যায়ক্রমে বাকিরাও ক্ষতিপূরণ পেয়ে যাবেন বলেই আশাবাদী।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy