ভাঙচুর করা হয়েছে বাস (বাঁ দিকে)। সংঘর্ষে আহত এক পুলিশকর্মী। শুক্রবার পটাশপুরে। নিজস্ব চিত্র
আমপানে ক্ষতিপূরণে বঞ্চনা ও দুর্নীতির অভিযোগ ছিলই। সেই সঙ্গে পরিযায়ীদের ‘ফুড কুপন’ বিলি নিয়েও দুর্নীতির জোড়া ফলায় বিদ্ধ তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি। শুক্রবার তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ থেকে ধুন্ধুমার বাধল। সভাপতিকে মারধরের অভিযোগ যেমন উঠেছে। তেমনই বিক্ষোভকারীদের হটাতে লাঠি চালানোর অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাটাতে হল কাঁদানে গ্যাসের শেল। পাল্টা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়ে উত্তেজিত জনতা। ভাঙচুর হয় পুলিশের গাড়ি। শুক্রবার দুপুরে পুলিশ জনতা খন্ডযুদ্ধে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল পটাশপুর দাইতলা বাজার। জখম হয়েছেন দুই পুলিশকর্মী-সহ ৬ জন।
এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে এগরার এসডিপিও শেখ আখতার আলি বলেন, ‘‘লাঠিচার্জ করা হয়নি। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির উপরে স্থানীয়রা হামলা করায় পুলিশকর্মীরা তাঁকে উদ্ধার করতে গিয়েছিল। জনতার ছোড়া ইটের ঘায়ে তিনজন সিভিক ভলান্টিয়ারের মাথা ফেটেছে। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়েছে।’’
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর, পটাশপুর-২ ব্লকে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চন্দন সাউয়ের বিরুদ্ধে আমপানে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ ও অর্থিক ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতি ও বঞ্চনার অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিলেন এলাকার মানুষ ও তৃণমূলেরই একাংশ। শুক্রবার হরিডাঙর মোড়ে নিজের দোকানের সামনে আমপানে ক্ষতিপূরণের টাকার দাবিতে এলাকার মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়েন চন্দন। অবিলম্বে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা দেওয়া-সহ পরিযায়ী শ্রমিকদের পর্যাপ্ত রেশনের দাবিতে এগরা-পটাশপুর সড়কে হরিডাঙর মোড়ে রাস্তায় কাঠের গুঁড়ি ফেলে পথ অবরোধ শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দা ও তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। বিক্ষোভকারীরা চন্দনকে মারধর করে বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে পটাশপুর থানার পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের হাত থেকে সভাপতিকে উদ্ধার করে। কিন্তু তাঁকে থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে বিক্ষোভকারীরা বাধা দেয় সভাপতির উপর হামলা করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠি চালায়, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। পাল্টা ক্ষিপ্ত জনতা লাঠি, বাঁশ, ইট নিয়ে পুলিশকে আক্রমণ করে। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি-সহ একাধিক বেসরকারি বাস, লরি।
অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা বাসের চালকদেরও গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধর করে। বিক্ষোভকারীদের ছোঁড়া ইটে একজন সিভিক ভলান্টিয়ারের মাথা ফাটে। জখম হন দু'জন পুলিশ কর্মী-সহ মোট ৬ জনকে পটাশপুর প্রাথমিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছে। পরে পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদে ফের পটাশপুর-এগরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশবাহিনী ও র্যাফ গিয়ে পথ অবরোধ তুলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকায় টহল দিচ্ছে র্যাফ।
বিক্ষোভকারীদের একজন শেখ বাবলু বলেন, ‘‘পটাশপুর গ্রাম পঞ্চায়েত আমাদের পরিযায়ী শ্রমিকদের রেশনের কুপন দিচ্ছে না। পরিযায়ী শ্রমিকের আবেদন পর্যন্ত জমা নিচ্ছে না। অবিলম্বে পর্যাপ্ত রেশন সহ আমপানে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সাধারণ মানুষের রেশন ও টাকা নিয়ে নিচ্ছে তৃণমূলের নেতারা।’’
অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি চন্দন সাউ-এর দাবি, ‘‘কোনও পরিযায়ী শ্রমিক ‘ফুড কুপন’ না পেয়ে থাকলে আবেদন করলে নিশ্চয়ই তাঁকে ‘ফুড কুপন’ দেওয়া হবে। বিক্ষোভকারীরা বাড়তি রেশন এবং মাসিক ভাতা চাইলে কোথা থেকে দেব। তৃণমূলের কিছু সুবিধাভোগী কর্মী বিজেপি ও বামেদের উস্কানিতে গন্ডগোল করছে।’’
কাঁথি সাংগঠনিক বিজেপির সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘জনতার টাকা মেরে খেয়েছে তৃণমূলের লোকেরা। জনতাই তার হিসেব নিচ্ছে। তৃণমূলের নেতারা যতদিন ডাকাতি বন্ধ না করবে এমনটা চলতে থাকবে। এতে বিজেপির কোনও হাত নেই।’’ বামফ্রন্টের জেলা কমিটির সদস্য কালিপদ দাস মহাপাত্র বলেন, ‘‘তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলে এমন হামলার ঘটনা ঘটেছে। বামেরা এই ঘটনায় যুক্ত নয়। মানুষের ক্ষোভের হাত থেকে বাঁচতে তৃণমূল মিথ্যে অভিযোগ করছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy